ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে জমি অধিগ্রহণে ॥ কোটি টাকা লোপাট

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৮ মে ২০১৫

বরিশালে জমি অধিগ্রহণে ॥ কোটি টাকা লোপাট

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জমিতে কোন ফসল, গাছপালা, অবকাঠামো, কলকারখানা না থাকলেও নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ও একেকটি কলাগাছের দাম ৬০ হাজার এবং একেকটি কচুগাছের দাম ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সরকারের কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ নাঠৈ গ্রামের। ওই এলাকায় গৌরনদী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। বরিশাল ভূমি অধিগ্রহণ শাখা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদীর চাঁদশী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ নাঠৈ মৌজায় ওই ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়। ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার কর্মকর্তারা এ কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অফিস সহকারী কমল হালদার জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে জেএল ৬৭ নম্বর নাঠৈ মৌজার বিভিন্ন দাগে তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এতে জমি বাবদ ২ কোটি ২০ লাখ ১ হাজার ৮৬ টাকা, গাছ বাবদ ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ টাকা, অবকাঠামো বাবদ ২৭ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬ টাকা ও শস্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ ১ হাজার ২৫২ টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে জায়গার মালিক শামছুল হক, শাহ আলম, সালাম সরদার, এসাহাক বেপারী, মুহিদ শরীফসহ ১৪ জনে বরাদ্দকৃত টাকা পেয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বরাদ্দকৃত টাকা তুলে নেয়া হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিগ্রহণকৃত জমিতে ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কহিনুর ট্রেডার্সের শ্রমিকরা। ওই জমিতে কোন বাগান, শস্য ও অবকাঠামো নেই। আছে কয়েকটি কলাগাছ ও দুটি রেইনট্রি গাছের চারা। প্রতিষ্ঠান বলতে চালা ও বেড়াবিহীন দুটি ঘর। সেখানে ঝুলানো রয়েছে মেসার্স ভাই ভাই মৎস্য খামার ও তানহা পোলট্রি খামার নামের দুটি সাইনবোর্ড। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই গ্রামের সালাম সরদার গাছপালা বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৬ টাকা, শিল্প ক্যাটাগরিতে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ তার পুত্র রফিকুল ইসলামের নামে ভাই ভাই মৎস্য খামারের জন্য ৭০ লাখ টাকা, আরেক পুত্র আরিফুল ইসলামের তানহা পোলট্রি খামারের নামে ৮৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। অথচ তার জমিতে কোন বাগানত নেই বরং ক্ষতিপূরণের আশায় রাতের আঁধারে তিনি নামসর্বস্ত্র দুটি খোলা ঘর উত্তোলন করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। একইভাবে কামরুল হক সরদার ১৯ লাখ ৮৩ হাজার, শাহ আলম ৭ লাখ, এসাহাক বেপারী ১১ লাখ, মুহিদ শরীফ ৮ লাখসহ অন্যরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। যে কারণে একেকটি কলাগাছের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আর একেকটি কচুগাছের দাম দেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা করে। অভিযোগের ব্যাপারে সালাম সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তার পুত্র ভাই ভাই মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বাড়তি সুবিধা নেয়ার জন্য সাইনবোর্ড ঝুলানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি বিশেষ মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ৯৭ শতক জমি হুকুমদখল করা হলেও আমরা ৬৩ শতকের টাকা পেয়েছি। আমাদের বাড়তি কোন সুবিধা দেয়া হয়নি। একইভাবে অন্যরাও মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার সহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই শাখার এলএও সফিউল্লাহ বলেন, আমি যোগদানের আগেই সব কার্যক্রম শেষ হওয়ায় এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।
×