ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনড় অবস্থানে বেজিং

‘দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ বন্ধ করা হবে না’

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৮ মে ২০১৫

‘দক্ষিণ চীন সাগরে  দ্বীপ নির্মাণ বন্ধ করা হবে না’

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ তৎপরতা গুটিয়ে ফেলার কোন ইচ্ছা বেজিংয়ের নেই বলে শনিবার আভাস দিয়েছেন। তিনি সফররত সার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে আলোচনার পর এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। ঐ তৎপরতার ফলে কয়েক সবকারের দাবি করা জলরাশিতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছ। খবর নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। বেজিংয়ে শনিবার আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই বলেন, কিলিপিন্সের উপকূলের অদূরে নির্জন একগুচ্ছ শৈলশ্রেণীর ওপর চীনের মালিকানা দাবি ‘অপরিবর্তনীয়’। এতে আভাস পাওয়া যায় যে, চীন ঐ অঞ্চলে উত্তেজনা হ্রাস করতে সহায়তা করুক বলে কেরির বার্তা অরণ্যে রোদনেই পর্যবসিত হয়েছে। ওয়াং বলেন, আমাদের নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষায় চীনা পক্ষের সংকল্প শিলাসম দৃঢ়। শনিবার সকালে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের আলোচনায় জানান, উভয় পক্ষ অতীতে যেসব বিষয়ে সহযোগিতা করেছিল, তারা এমন সব বিষয়েও কথা বলেন, যেমন- জলবায়ু পরিবর্তন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচী এবং ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক উন্নত করা। কেরি বলেন, এ নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই যে, যখন আমরা এ শতকের ইতিহাস গড়ে তুলছি, তখন আমাদের দেশগুলোর জন্য অভিন্ন অস্বাভাবিক সুযোগ রয়েছে। আমাদের আগামী বছরগুলোতে এক সঙ্গে সম্পন্ন করার মতো বহু কাজ রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের মৃত্তিকা খননের জোর তৎপরতা ওয়াশিংটনের জন্য ক্রমশই শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐ সাগরের জলরাশির মালিকানা নিয়ে চীন ও অন্য পাঁচটি সরকারের পরস্পরবিরোধী দাবি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোন অবস্থান নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সে দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জলপথ। চীন সম্প্রতি স্প্র্যাটলি নামে পরিচিত একগুচ্ছ প্রবাল প্রাচীরে ভূমি উত্তোলনের তৎপরতা দ্রুত বৃদ্ধি করে। স্প্র্যাটলিস চীনের সবচেয়ে দক্ষিণ প্রান্তবিন্দু হাইনান দ্বীপ থেকে ১ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত, কিন্তু সেটি আমেরিকার সামরিক মিত্র ফিলিপিন্সের উপকূলের অদূরে অবস্থিত। সম্প্রতি স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায় যে, চীনারা স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে শৈলশ্রেণীর সংখ্যা বিরাটভাবে বৃদ্ধি করেছে। তারা একটি দ্বীপে সামরিক বিমান ওঠানামার সুযোগ দিতে পারে এমন কংক্রিটের একটি রানওয়ে তৈরি করছে। কেরি চীনা নেতাদের এক কঠোর বার্তা দেবেন বলে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তবে শনিবার তার প্রকাশ্য বিবৃতির সুর নরমই ছিল। কেরি বলেন, উত্তেজনা হ্রাস এবং কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে প্রত্যেকেই যাতে অংশ নিতে পারে, সেরূপ পদক্ষেপ নিতে আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ের মাধ্যমে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য সযতেœ লিখিত ছিল। চীনা কর্মকর্তারা মাত্র দুটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসার অনুমতি দেন। একটি প্রশ্ন এক পশ্চিমা বার্তা সংস্থার সাংবাদিক কেরির উদ্দেশে এবং অন্যটি চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার সাংবাদিক ওয়াংয়ের উদ্দেশে করেছিলেন। তবে কেরি সেদিনের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রশ্নটির উত্তর দিতে অসম্মত হলো। যুক্তরাষ্ট্রের সংকল্পের প্রদর্শন হিসেবে পেন্টাগন স্প্র্যাটলিসের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সামরিক বিমান ও জাহাজ পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে প্রকাশিত এক খবর নিয়ে কেরি কি ভাবছেন, সেটিই ছিল ঐ প্রশ্ন। কিন্তু ওয়াংই সম্মত প্রটোকল ভঙ্গ করে ঐ প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বোঝাতে চান যে, ঐ অঞ্চলে আমেরিকান সামরিক বিমানের উপস্থিতি চীনের দ্বীপ-সম্প্রসারণ অভিযানের ওপর সামান্য প্রভাবই ফেলবে। তিনি বলেন, এটি সরকারের প্রতি জনগণের দাবি এবং আমাদের বৈধ অধিকার।
×