ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সফলতা ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ মে ২০১৫

উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সফলতা ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করলেও সেটি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দারিদ্র্য ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নসহ অধিকাংশ সূচকেই বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে। এখন এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নীতি কাঠামো শক্তিশালী করা জরুরী বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শনিবার সিপিডি আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অর্থায়নে এশিয়ার অংশীদারিত্ব’ নিয়ে এক আলোচনা সভায় এসব অভিমত উঠে আসে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কিছু দেশের মতো বাংলাদেশের অবস্থান এখনও দুর্বল। অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নজর দিতে নীতি কাঠামো শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইউন-ইয়ং, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বিশ্ব ব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট সালমান জাহিদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক সুলতান হাফিজুর রহমান খান প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এশিয়া মহাদেশের বিবর্তনশীল অর্থায়নের চালচিত্রে দেখা যাচ্ছে, দেশগুলোর (উন্নয়নশীল) বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে। তারা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের অর্থায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। যদিও কেউ কেউ এখনও সাহায্য নিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর রাজস্ব আদায়, রেমিটেন্স আহরণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারিত হচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে দেশগুলোর অর্থনীতি মিশে যেতে শুরু করেছে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর কোন ধরনের ঝড় আসলে তা আমাদের ওপরও আসবে। তাই আমাদের এখন অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শুধু এমডিজির উদ্দেশ্য পূরণেই নয়, এসব কারণেই আমাদের টেকসই উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রবন্ধে তিনি এশিয়ার দেশগুলোর মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অর্থায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক কাঠামো এ দুটি বিষয়ের সংযোগ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন সম্ভব না। এশিয়ার দেশগুলো সমন্বিত আঞ্চলিক সহযোগিতা খুব দ্রুত প্রয়োজন যাতে করে একে অন্যকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে পারবে। এছাড়া এ অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সকল বিষয়ে পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া এবং জবাবদিহিতার কাঠামো পরিবর্তন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসেফিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপক সালমান জাহেদী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে তিন পদ্ধতিতে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। তা হলো ডাটা সংগ্রহ, অর্থায়ন ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফাইন্যান্সিং বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র বিমোচনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে গ্লোবাল ডাটার গুণগতমান, নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজও হচ্ছে। তবে এরই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভাল পলিসি নির্ধারণ, পিপিপি’র উন্নয়ন ও তার বাস্তবায়ন দরকার বলে মনে করেন তিনি। জাতিসংঘের আবাসিক সমুন্নয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত বিসিআইএম করিডর। তবে সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে এবং গঠনমূলকভাবে। সবার আগে নির্ভর করতে হবে নিজেদের সক্ষমতায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পণামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার হার বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে। আমরা রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ বিদেশে পাঠিয়ে অনেক রেমিটেন্স আয় করি। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক ভিত্তিক ইউএন মিলেনিয়াম ক্যাম্পেইনের সহকারী পরিচালক সেরিং ফালু নিজে, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্ত খান, এডিপির সাবেক পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমানসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকবৃন্দ।
×