ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার ধাপের পরিবর্তে পাঁচ ধাপ রাখা হয়েছে

সচিব পর্যায়ে পদোন্নতি বিধিমালার খসড়া তৈরি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ মে ২০১৫

সচিব পর্যায়ে পদোন্নতি বিধিমালার খসড়া তৈরি

তপন বিশ্বাস ॥ অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদের মধ্যে নতুন ধাপ ১ নম্বর গ্রেডের পদ রেখে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে চার ধাপের পরিবর্তে পাঁচ ধাপ রাখা হয়েছে। এছাড়া এ বিধিমালায় পদোন্নতির যোগ্যতা নির্ধারণে সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে। এতে থাকছে না অন্য ক্যাডারদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতির কোটাও। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, পদোন্নতি বিধিমালার খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। যাচাই-বাছাই করে, ভাল-মন্দ দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, বিতর্কিত কোন বিষয় এ বিধিমালায় রাখা হবে না। তবে খসড়া এ বিধিমালা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিভিন্ন কর্মকর্তা। তারা বলেন, নতুন এ বিধিমালায় অহেতুক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। সূত্র জানায়, খসড়া এ বিধিমালাটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সরকারের উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, ১ নম্বর গ্রেডের পদ ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০১৫। পদোন্নতির ভিত্তিতে বলা হয়েছে, সরকারের উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, ১ নম্বর গ্রেডের পদ ও সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের ভিত্তি হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। ১ নম্বর গ্রেডের নতুন সৃষ্টির বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, কিছু কিছু পদ রয়েছে যা বিশেষ বিভাগের কর্মকর্তার পদ। এগুলো পূরণ করতে এই পদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রাথমিক এ খসড়া বিধিমালায়, উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, ১ নম্বর গ্রেডের পদ কিংবা সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সমগ্র চাকরীকালে পালন করা দায়িত্ব গুরুত্ব ও প্রকৃতি এবং তার ব্যক্তিগত সুনামসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় এবং গোপনীয় প্রতিবেদন বিচার্যের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক গৃহীত সাক্ষাতকারে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাক্ষাতকারের জন্য পাঁচ নম্বর নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে শিক্ষাগত যোগ্যতার ২৫ নন্বর থেকে তা ২০ নম্বর করা হচ্ছে। এই পাঁচ নম্বর সাক্ষাতকারের নম্বর হিসেবে রাখা হচ্ছে। খসড়া বিধিমালায় পদোন্নতির জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তার মূল্যায়নে নির্ধারিত মোট নম্বর আগের মতোই ১০০ রাখা হয়েছে। এই নম্বরের বিভাজনে বলা হয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার মোট নম্বর ২০, বিগত পাঁচ বছরের গোপনীয় প্রতিবেদনের গড় ৩০, চাকরিজীবনের শুরু থেকে বিগত পাঁচ বছরের পূর্ব পর্যন্ত সকল বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের গড় ২৫, সামগ্রিক চাকরিজীবনে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে কোন বিরূপ মন্তব্য না থাকার জন্য ১০ নম্বর, সামগ্রিক চাকরিজীবনে কোন শাস্তি না থাকার জন্য ১০ নম্বর এবং সাক্ষাতকারের জন্য মোট ৫ নম্বর থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মূল্যায়নের সর্বনিম্ন যথাক্রমে উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড ১ ও সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫৩, ৮৫, ৮৫, ৮৫ ও ৮৫ নম্বর পেতে হবে। সাক্ষাতকারের জন্য পাঁচ নম্বর রাখায় অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এর অপপ্রয়োগ হতে পারে। তারা মনে করেন, বর্তমানে এসএসবির সদস্যরা খুবই দক্ষ ও সৎ। বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা। তাদের আমলে সাক্ষাতকারের সুফল পাবেন কর্মকর্তারা। কিন্তু পরবর্তীতে এর অপপ্রয়োগ হতে পারে। তাই ভবিষ্যতে যাতে এর অপপ্রয়োগ হতে না পারে এমন কোন ব্যবস্থা রাখা উচিত। শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রে প্রথম বিভাগ/জিপিও ৩.০০ বা তদুর্ধ্বর ক্ষেত্রে ৬ করে, দ্বিতীয় বিভাগ/ জিপিএ ২.০০ থেকে ৩.০০ এর কম-এর ক্ষেত্রে ৪ করে এবং তৃতীয় বিভাগ/জিপিএ ২.০০ এর কম হলে সেক্ষেত্রে ২ নম্বর করে প্রাপ্য হবেন। এছাড়া গ্রাজুয়েশনের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণী/জিপিও ৩.০০ বা তদুর্ধ্বর ক্ষেত্রে ৮ নম্বর (বর্তমানে ৯ নম্বর রয়েছে), দ্বিতীয় শ্রেণী/ জিপিএ ২.০০ থেকে ৩.০০ এর কম-এক্ষেত্রে ৬ নম্বর এবং তৃতীয় শ্রেণী/জিপিএ ২.০০ এর কম হলে সেক্ষেত্রে ৩ নম্বর প্রাপ্য হবেন। মাস্টার্সের জন্য প্রদত্ত নম্বর বাদ দেয়া হয়েছে নতুন এ বিধিমালায়। উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিনিয়র স্কেল পদে পাঁচ বছরের চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যুগ্ম-সচিবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে উপসচিব পদে অন্যূন তিন বছরের অভিজ্ঞতাসহ ক্যাডার পদে অন্যূন ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত সচিবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যুগ্ম-সচিব পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতাসহ অন্যূন ১৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গ্রেড ১ এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচিব পদে অন্যূন এক বছরের চাকরিসহ অন্যূন ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচিব পদে অন্যূন এক বছরের চাকরিসহ অন্যূন ২২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতিতে অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতির বিধান রাখা হলেও যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অন্যান্য কাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির শর্তটি বাতিল করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, উপসচিব হওয়ার পর তখন সব কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারে সামিল হয়ে যায়। তখন সব কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি করা হবে। সেক্ষেত্রে পদোন্নতির দিন, পিএসসির মেধা তালিকা অনুসরণ করা হবে। তাতেও কোন জটিলতা সৃষ্টি হলে জন্ম তারিখের ভিত্তি অনুসরণ করে তালিকা তৈরি করা হবে। প্রশাসনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এ বিধিমালায় অহেতুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাদের প্রশ্ন, নতুন এ বিধিমালা কী শুধুমাত্র গ্রেড-১ এ পদোন্নতির জন্য করা? বিদ্যমান বিধিমালার আওতায় যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে কর্মরত কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন। প্রস্তাবিত বিধিমালায় কর্মকর্তার যথার্থ মূল্যায়ন করার নতুন করে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের মধ্যে গ্রেড-১ পদটি জনপ্রশাসনে বিদ্যমান স্তরের অতিরিক্ত একটি স্তরের পদ সৃষ্টি হবে। এতে প্রশাসনে গতি কমবে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান হতাশা ও উদাসিনতা দূর করতে সরকার ব্যাপক পদোন্নতি দিয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব ও সচিবের মধ্যে আরেকটি স্তর সৃষ্টি করে এর সুফল শূন্যের কোঠায় চলে আসবে, এমনকি নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত একটি স্তর তৈরি করলে উপসচিব, যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে কর্মরতরা একধাপ করে নিচে নেমে যাবেন। এতে জনপ্রশাসনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।
×