ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সালাহউদ্দিন ইস্যুতে বেকায়দায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ মে ২০১৫

সালাহউদ্দিন ইস্যুতে বেকায়দায় বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার সালাহউদ্দিন আহমেদ ইস্যুতে চরম বেকায়দায় বিএনপি। এর আগে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমানকে চালকসহ অপহরণের পর গুম করার অভিযোগ করেছিল দলটি। পরবর্তীতে চালকসহ মুজিবুর রহমানের হদিস মেলে। মাফিয়াদের কাড়ি কাড়ি টাকা মেরে দিয়ে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন বলেও প্রকাশ পায়। এছাড়া হদিস মেলে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন বেলা নির্বাহী পরিচালক রেজোয়ানা হাসানের স্বামী সিদ্দিকুর রহমানেরও। পর্যায়ক্রমে হদিস মিলতে পারে চালকসহ নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম ও যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেনেরও। তাদের সন্ধান করতে দেশ-বিদেশে কাজ করছে সরকারের গঠিত শক্তিশালী সার্চ কমিটি। দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা অবরোধ শেষ হতে না হতেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুমদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবির পরপরই সালাহউদ্দিনের হদিস মেলার মধ্যে বিশেষ যোগসূত্র আছে কিনা তার তদন্ত চলছে। সরকারকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখতে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিনের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, আরেক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর তাঁকে গুলি চালিয়ে আহত করা এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ ইস্যু তৈরি করার বিষয়টি একসূত্রে গাঁথা বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। গত ১১ মার্চ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ আচমকা সংবাদিকদের জানান, তাঁর স্বামীকে গত ১০ মার্চ রাতে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি গত ৫ জানুয়ারির পর থেকেই উত্তরার ওই বাড়িতে গোপনে অবস্থান করে দলীয় কর্মকা- চালাচ্ছিলেন। ওইদিন থেকেই পরিবার ও দলটির তরফ থেকে সালাহউদ্দিনকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি। তবে আজও সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দেরিতে প্রকাশ করার বিষয়ে তার স্ত্রী ও ওই বাড়ির মালিক ব্যাংক কর্মকর্তা হাবিব হাসনাতের তরফ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ডিবি পুলিশ বরাবরই সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে। সালাহউদ্দিন নিখোঁজের পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বারবারই অভিযোগ করছিলেন, সরকার দিশেহারা হয়ে দলের জনপ্রিয় সিনিয়র নেতাদের একের পর এক গুম করছে। তিনি ২০১০ সালের ২৫ জুন বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম ও ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল চালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ও সর্বশেষ সালাহউদ্দিন নিখোঁজ ইস্যুটিও সামনে নিয়ে আসেন। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের হদিস মেলেনি। গত বছরের ৪ মে চালকসহ যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান নিখোঁজের পরেও বিএনপির তরফ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছিল। সুনামগঞ্জ থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারযোগে সিলেট শহরে যাওয়ার পথে সুনামগঞ্জ বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও যুক্তরাজ্য যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুজিবুর রহমানকে (৫৬) চালক রেজাউল হকসহ (৩২) জেলাটির টুকের বাজার বাসস্টেশনের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অপহরণের পর গুম করা হয় অপহৃতদের পরিবার ও বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে ৭ মে সুনামগঞ্জ শহরে মানববন্ধন এবং ৮ মে জেলাটিতে আধাবেলা হরতাল পালন করে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো। স্বাভাবিক কারণেই কূটনৈতিকভাবে মারাত্মক বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরের ১৮ আগস্ট নিখোঁজ মুজিবুর রহমান গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন মুজিবুর রহমানের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে ওই সময় জানিয়েছিলেন, ওইদিনই ভোরে গাজীপুরের শালনা ব্রিজের কাছে কে বা কারা তাকে ও তার চালককে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ছেড়ে দেয়। মুজিবুর রহমান চালককে একহাজার টাকা দিয়ে সুনামগঞ্জ পাঠিয়ে দেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির অবরোধ কর্মসূচী ব্যর্থ হলে সরকারকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখতে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিনের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, আরেক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর তাকে গুলি করে আহত করার ঘটনা ঘটায়। এসব অপকৌশল ভেস্তে গেলে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ রহস্যের অবতারণা হয়।
×