স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভা এখন নাগরিক দুর্ভোগের শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের অধিকাংশ সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও বছরজুড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ড্রেন নির্মাণের নামে যত্রতত্র লোহার রড খাঁড়া করে রাখা এবং নালা কাটার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি।
কর্তৃপক্ষ জানান, গলাচিপা পৌর এলাকায় মোট ৩৪ কিলোমিটার প্রধান সড়ক রয়েছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আরও প্রায় ৬ কিলোমিটার বাইলেন রয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহারপযোগী সড়কের পরিমাণ মাত্র এক কিলোমিটার রয়েছে কিনা, তা নিয়ে পৌরবাসীর যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পৌরশহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত সদর রোডের বেহাল দশা সবচেয়ে চরমে। সদর রোডে কয়েক ফুট জায়গা মিলবে না, যেখান দিয়ে স্বাচ্ছন্দে হাঁটাচলা করা যায়। এর বাইরে ওয়াপদা রোড, হাসপাতাল সড়ক, কলেজপাড়া, মুসলিমপাড়া, সামুদাবাদ রোড, ফিডার রোড, সাগরদী রোড, বালিকা বিদ্যালয় সড়ক, শেরে বাংলা সড়ক, নতুন বাজার, আনন্দপাড়া, আরামবাগসহ শহরের অন্য সড়কগুলোর দশাও চরমে। সামুদাবাদ, আরামবাগসহ এমন অনেক সড়ক রয়েছে, যেগুলোতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়েও রিক্সাচালকদের নেয়া যায় না। সড়কগুলো ভেঙেচুরে এর ইট-খোয়া পর্যন্ত বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও বড় গর্ত এবং খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে। যা পার হওয়া অনেকের পক্ষে অসম্ভব। একটু বৃষ্টিতেই অধিকাংশ সড়ক ডুবে থাকে পানিতে। বর্তমানে গলাচিপা পৌর এলাকায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ‘কোস্টাল টাউন এনভায়রনমেন্টাল ইনফ্রাস্টাকচার প্রজেক্ট’-এর (সিটিইপি) আওতায় এবং আর্থিক অনুদানে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ড্রেনসহ ৬ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ড্রেন ও সড়ক পৌরবাসীর কাছে ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে ড্রেন ও সড়ক নির্মাণে চলছে দুর্নীতি। অপরদিকে তা নির্মাণের নামে মাসের পর মাস ধরে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ড্রেনে ৫ মিলিমিটার লোহার রড ব্যবহারের কথা থাকলেও সেখানে ব্যবহার হচ্ছে ৩Ñ৪ মিলিমিটার। নিচে ৬ ইঞ্চি ঢালাই হচ্ছে না কোথাও। লোহার রডের ঘনত্ব নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এছাড়া, মাসের পর মাস ড্রেন নির্মাণের নামে সদর রোডের মতো ব্যস্ততম সড়কে লোহার রড খাঁড়া করে রাখায় তা জনদুর্ভোগের পাশাপাশি প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে সড়ক নির্মাণের কাজে চলছে ঢিলেমি এবং তা সিডিউল অনুযায়ী না হওয়ার অভিযোগ। সড়ক ও ড্রেন নির্মাণে ঢিলেমির অভিযোগ স্বীকার করলেও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুবলাল দত্ত বণিক জানান, কার্যাদেশে এ কাজ সম্পন্নের জন্য এক বছর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ কারণে কিছুটা ধীর হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর মেয়র আবদুল ওহাব খলিফা জনদুর্ভোগের সত্যতা কিছুটা হলেও স্বীকার করে জানান, আগামী এক বছরের মধ্যে গলাচিপা পৌর এলাকার কোন সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী থাকবে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: