ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন স্বপ্নপূরণে ওনাসিসের পথচলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ মে ২০১৫

তিন স্বপ্নপূরণে ওনাসিসের পথচলা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিবাস পরদেশ। কিন্তু হৃদয়ে স্বদেশ। হাজার মাইল দূরে থাকলেও দেশের জন্য কিছু করার জন্য মনটা আনচান করে। কিন্তু কী করা যায়? কিভাবে করা যায়? হ্যাঁ, একটা কাজই জানা আছে। চর্মগোলক। যাকে সবাই বিশ্বব্যাপী চেনে ফুটবল নামে। চামড়া দিয়ে তৈরি গোলাকার এই বস্তুটি বেশ ভালভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আহমেদুজ্জামান ওনাসিস। আগামী ২৫ মে তার বয়স হবে ১৭ (জন্ম-১৯৯৮ সালে, ঢাকার আরামবাগে)। জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী কিশোর ফুটবলার ওনাসিস চায় মাতৃভূমির লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপিয়ে ফুটবল খেলতে এবং নিজের দেশকে সাফল্য এনে দিতে। তবে বয়স যেহেতু কম এবং শুরুতেই ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন, সেহেতু ওনাসিস তিনটি লক্ষ্য স্থির করেছে। সিলেটে অবস্থিত বাফুফে ফুটবল একাডেমিতে অনুর্ধ-১৭ দলে ঠাঁই করে নেয়া, পরবর্তীতে জাতীয় অনুর্ধ-১৯ ও অনুর্ধ-২৩ দলে খেলা এবং ঘরোয়া পেশাদার লীগের সর্বোচ্চ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে খেলার জন্য যে কোন ভাল একটি ক্লাবে স্থান করে নেয়া। এই লক্ষ্যে আগামী ২৭ মে ওনাসিস আসছে বাংলাদেশে। অনলাইনে তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সে জানায় তার অতীত, বর্তমান, পরিবার, লক্ষ্য, পরামর্শ, পছন্দসহ বিভিন্ন বিষয়। ২০০৯ সাল। ওনাসিসের বয়স তখন ১১। পড়ে ক্লাস সিক্সে। ওনাসিসের মা-বাবা আবিষ্কার করলেন, তাদের ছেলে ফুটবলের প্রতি ভীষণভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে! পড়াশোনার না আবার বারোটা বেজে যায়, এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। পরে অবশ্য বুঝতে পারলেন একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তাদের এই আশঙ্কা ছিল নিতান্তই অমূলক। ওনাসিসের বাবা পেশায় একজন শেফ, কাজ করেন এক আমেরিকান স্টেক হাউসে। ২০০৫ সালে তিনি জাপানে চাকরি করতে যান। ২০০৮ সালে ওনাসিস এবং তার মা বাবার সঙ্গে জাপানে গিয়ে যোগ দেন। সেখানকার ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয় ওনাসিসকে। এ বছরের মার্চে ওই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সে। জাপানে গিয়ে কিভাবে ফুটবলের প্রতি অনুরক্ত হলো ওনাসিস? ‘ওখানে গিয়ে দেখি সবার মধ্যেই ফুটবল নিয়ে প্রবল আবেগ-উচ্ছ্বাস। অনেক জনপ্রিয় খেলাও বটে। আমার চেয়ে ওপরের ক্লাসে পড়া কিছু ছেলে ছিল, যারা দারুণ ফুটবল খেলত। সবাই তাদের খেলা দেখে হাততালি ও উৎসাহ দিত। এগুলো দেখেই আমি ফুটবল খেলাটাকে ভালবেসে ফেলি এবং উপলব্ধি করি এ খেলাটা আমাকেও যেভাবেই হোক খেলতে হবে। সেখান থেকেই ফুটবলে আমার হাতেখড়ি।’ ওনাসিসের ভাষ্য। যদিও অন্য বালকদের চেয়ে অনেক বেশি বয়সে ওনাসিস ফুটবল খেলা শুরু করে, তারপরও খেলাটাকে ভালভাবে রপ্ত করতে মোটেও বেশি সময় নেয়নি সে। ২০১২ সালে ওনাসিসের বাবা তাকে একটি স্থানীয় ফুটবল দল কানেজুকা স্পোর্টিং ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দিতে সাহায্য করলেন। সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওনাসিস ওই ক্লাবের হয়ে একটি ফুটসাল টুর্নামেন্টে অংশ নিল এবং সবার নজরও কাড়ল ভাল খেলে। নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে নিয়মিত জিম করত এবং সাঁতার অনুশীলন করত। লেফট উইং এবং এ্যাটকিং মিডফিল্ডÑ এই দুই পজিশনেই খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ওনাসিস। ‘আমি চাই আমার ফুটবল মেধা নিজ দেশের পক্ষে কাজে লাগাতে। বাংলাদেশেই ফুটবল ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন আমার। এক্ষেত্রে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য বাফুফে ফুটবল একাডেমিতে সুযোগ পাওয়া। তারপর পেশাদার কোন ক্লাবের হয়ে খেলা। তারপর জাতীয় দলের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলা এবং সবশেষে সিনিয়র-জাতীয় দলে খেলা।
×