ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছর আগে এদিনে এসেছিল প্রলয়ঙ্করী মহাসেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ মে ২০১৫

দুই বছর আগে এদিনে এসেছিল প্রলয়ঙ্করী মহাসেন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ আজ ভয়াল ১৬ মে। দু’ বছর আগে এ দিনে ‘মহাসেন’ নামের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলীয় জনপদে। এর আগে আরও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। ফলে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আজও আতঙ্ক কাটেনি ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় চরাঞ্চলের মানুষের। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখলেই তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। ২০১৩ সালের এদিনে ভয়াল রূপ নিয়ে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ দু’ দফায় ছয় ঘণ্টাব্যাপী তা-ব চালায় পটুয়াখালীসহ উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবকিছু ল-ভ- করে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। সেদিনের তা-বের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংগ্রহ করতে গিয়ে কেবলমাত্র সাগরপাড়ের রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মহাসেনের আঘাতে উপজেলায় ১৮ হাজার ৯৬০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবাদিপশু, ফসল, চিংড়ি ঘের, বেড়িবাঁধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। দিন কয়েক আগে সরেজমিনে মাত্র একটি চরে গিয়ে এখনও ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তা-বের চিত্র পাওয়া গেছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার কিছুটা পশ্চিমে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা দ্বীপ ‘চরকাশেম’। চার পাশে পানি, মাঝ খানে শুধু চরের অবস্থান। গোটা দ্বীপে পাঁচ শতাধিক লোকের বাস। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তা-বে বিধ্বস্ত হয়। দু’ বছর হয়ে গেলেও ঘর তোলার সামর্থ্য হয়নি অনেকের। বাধ্য হয়ে বিধ্বস্ত ঘরেই পরিবার সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছে। এমনিতেই এ দ্বীপের মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্যোগের মুখে থাকে। এরআগে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং আইলায় এ চরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। একেকটি ঘূর্ণিঝড় চরের মানুষের জীবনের গতি বদলে দেয়। এখনও ভাঙা ঘরে বসবাস করছেন প্রায় সকলেই। ঘরের বেড়া আছে তো চাল নেই, চাল আছে তো বেড়া নেই। অর্থের অভাবে এসব ঘর সংস্কার হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বিধ্বস্ত ঘরেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। শুধু চরকাশেমই নয়, রাঙ্গাবালীর চরআন্ডা, মৌডুবী, চরমোন্তাজসহ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ এভাবেই প্রতিনিয়ত দুর্যোগের তা-বের আতঙ্ক ঘাড়ে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। দ্বীপটির বাসিন্দা হাওয়া বিবি বলেন, ‘ঝড়-বইন্যার ভয়ে থাহি। চাইর ধারে সাগর। ঝড় আইলেই পোলা-মাইয়া লইয়া আল্লাহরে ডাহি। কহন যে ভাসাইয়া লইয়া যায় তা যানি না। আমাগো এই কষ্টের কতা কেউ না দেকলে বুঝবে না।’ আরেক বাসিন্দা সেকান্দার আলী জানান, এ দ্বীপের মানুষের ভরসা একমাত্র আল্লাহ। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হলে বুক কাঁপে। কখন যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় এখানকার মানুষের মনে। ঝড়-বন্যা হলে আশ্রয়ের জন্য নেই আশ্রয়কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার)। তাই ঘরের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসে থাকতে হয়। এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, চরকাশেমসহ বেশ কয়েকটি চরের মানুষ দুর্যোগের তা-বে পড়ে বেশি। চরকাশেমে সাইক্লোন শেল্টার হওয়া জরুরি। কিন্তু ওই চরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় সাইক্লোন শেল্টার দেয়া যাচ্ছে না।
×