ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ॥ দেখার কেউ নেই

রাস্তা সেতু নির্মাণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ মে ২০১৫

রাস্তা সেতু নির্মাণে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১৫ মে ॥ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে শরীয়তপুরের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা সংস্কার ও সড়ক রক্ষাকরণ বাঁধের নির্মাণ কাজ চলছে। জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে চলা এসব সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারদের বিরদ্ধে। এলাকাবাসী জানান, প্রকল্প তালিকায় নির্ধারিত নির্মাণ সামগ্রীর পরিবর্তে অত্যন্ত নি¤œমানের রড, সিমেন্ট, বালু ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। সিক্সটি গ্রেডের রডের পরিবর্তে অনেকটা চিকন ফরটি গ্রেডের রড ব্যবহার করা হচ্ছে। বালুর তুলনায় সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে কম । নিম্নমানের মরা পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এসব ব্রিজ, রাস্তাঘাট কোন কোনটা কয়েক মাস যেতে না যেতেই তা রেলিং ধসে পড়ে, ব্রিজে ফাটল ধরে, দেবে যায় বা ভেঙ্গে পড়ছে এবং রাস্তার খোয়া উঠে গিয়ে যত্রতত্র গর্ত হয়ে রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়ছে এলাকাবাসীর। সরকারদলীয় প্রভাবশালী ঠিকাদার হওয়ায় এলাকাবাসী এসব নি¤œমান কাজের প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পম লাকার্ত্তা থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়ক রক্ষাকরণ বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়া ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি রক্ষা করার জন্য খালের তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১ হাজার ৮শ’ মিটারের এ কাজটি বাস্তাবায়ন করছে। সড়ক রক্ষাকরণ এ বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরছে, বাঁধের সিসি ব্লক উঠে দিঘে বাঁধ ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কয়েক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজে অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন খোদ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ। শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক সম্প্রতি এ কাজের পরিদর্শনে এসে কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করেন। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্র জানায়, চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়কের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পম লার্কাত্তা হতে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদর পযর্šÍ ৫ কিলোমিটার এলাকা গভীর খালের পাশে অবস্থিত। খালের তীর ভেঙ্গে প্রায়ই সড়ক ভেঙ্গে যেত। এ কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বাবুল খানের দীঘি হতে সাজনপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৮শ’ মিটার খালের তীরে সিসি ব্লক দ্বারা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। গত ১৪ নবেম্বর ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শফিক ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। সড়ক হতে খালের তলদেশ পর্যন্ত ২৫ হতে ২৮ ফুট মাটি ভরাট করে সিসি ঢালাই, তার উপর জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দিয়ে সিসি ব্লক দিতে হবে। ১ হাজার ৮শ’ মিটার খালের তীরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ব্লক বসানের কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে অধিকাংশ এলাকায় বাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়েছে সিসি ব্লক, সঠিক নিয়মে কম্পেকশন না করার কারণে বাঁধের স্লোব তৈরি হয়েছে উঁচু নিচু আবার কোথাও দেবে গেছে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের কাজ নিয়ে । প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় খালের অপর প্রান্ত থেকে মাটি কেটে আনা হয়েছে। যার ফলে উক্ত প্রান্তে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নি¤œমানের ইটের সুরকি ও বালু দিয়ে ঢালাই দেয়া হচ্ছে। ঢালাইতে কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। স্তূপ করে রাখা ব্লক আঘাত করলেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। এসব ব্লক অত্যন্ত নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে । ব্লকের প্রতিটির সাইজ ৬ ইঞ্চি বাই ১ ফুট ধরা থাকলেও সাইজেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। টো ওয়ালের কাজ করার আগে ৬ ইঞ্চি বালু আর শুরকির সমন্বয়ে কম্পেকশন করে তার ওপর জিও টেক্সটাইল কাপড় বিছিয়ে তার ওপরে এসব সিসি ব্লক বিছানোর কথা থাকলেও সেখানেও নিয়ম মতো করা হয়নি কাজ। যার ফলে কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই অনেক স্থানে ব্লক দেবে গেছে। কোথাও কোথাও স্লোব না রেখেই ব্লক বসানো হয়েছে। মেসার্স শফিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ শফিক হাজি বলেন, আমি অনেক লেসে কাজ নিয়েছি। তাই কাজ তত ভাল করা যাবে না। একই অভিযোগ উঠেছে, শরীয়তপুর সদর রোড়ের সংস্কার কাজে। জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে চলা এ কাজের মানও ভাল হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। আমার আসার আগে এই কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাজের অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে আমি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করি। যে সব ক্ষেত্রে কাজের অনিয়ম পাওয়া গেছে তা নিরসনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে আমি সঠিকভাবে তদারকি করছি যাতে প্রকল্পটি সুন্দরভাবে শেষ করা যায়।
×