ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানে বর্বর হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ মে ২০১৫

পাকিস্তানে বর্বর হত্যাকাণ্ড

ফের সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হলো পাকিস্তান। এবার করাচিতে ইসমাইলিয়া শিয়াদের বহনকারী একটি বাসে বন্দুকধারীদের হামলায় ৪৭ জন নিহত হয়েছে। তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, হামলার শিকার বাসটি করাচির ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের আবাসিক এলাকা আল-আজহার কলোনি থেকে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করত। হামলাকারীরা বাসের ভেতরে ঢুকে যাত্রীদের মাথায় গুলি করে। বুধবার সকালে তিনটি মোটর সাইকেলে ৬ জন বন্দুকধারী বাসটিতে নৃশংস হামলা চালায়। নিহতদের মধ্যে ১৬ জন নারী রয়েছেন। আল কায়েদার সহযোগী তেহরিক-ই-তালেবানের অন্যতম টার্গেট শিয়া মুসলিম এবং বিদেশী পর্যটক। গত বছরের নবেম্বরে ইসলামিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গেও একাত্মতা ঘোষণা করে টিটিপি। হামলাকারীরা ঘটনাস্থলে তাদের মতাদর্শের বুকলেট ফেলে রেখে যায়। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে প্রার্থনা চলাকালে শহরের দুটি গির্জার ফটকে আত্মঘাতী হামলা চালায়। সেবার হামলায় হামলাকারীসহ প্রাণ হারিয়েছে ১৭ জন। ২০১৩ সালেও পেশোয়ারের একটি চার্চে বোমা হামলার ঘটনায় ৮১ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের থাবায় বিধ্বস্ত পাকিস্তান। সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাবে দেশটিতে বার বার এই ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, নেতৃত্বের লোভ, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বিদেশী শক্তির লেজুড়বৃত্তির কারণে রাষ্ট্রটি পালাবদলের চক্রে বেসামাল। এই সুযোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসারিত হচ্ছে। অথচ বিশ্বে পাকিস্তানের পরিচয় পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে। এশিয়ায় দেশটি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি নানা সময়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল কায়েদা-তালেবানসহ জঙ্গীদের রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এক কথায় খাল কেটে কুমির আনার পরিণতি যা হয় এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানে তাই হয়েছে। এই কারণে দেশটির গণতন্ত্র বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বড় সমস্যা জঙ্গীবাদ। বলা হচ্ছে, জঙ্গীবাদের জন্যই রাষ্ট্রটি আজ আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত। দেশটিতে আল কায়েদাসহ তালেবানদের উপস্থিতি ও প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। খোদ আল কায়েদাপ্রধান লাদেনের অবস্থান ছিল পাকিস্তানে। এখনও দেশটির কিছু এলাকা তালেবান নিয়ন্ত্রিত। নানা সময়ে তারা ভিন্ন মতাবলম্বী বা অন্য ধর্মের লোকদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষ, বিদেশী নাগরিক ও নানা প্রতিষ্ঠানের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে এই জঙ্গী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। এই ধরনের বর্বর হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় মানুষের আরও সোচ্চার হওয়া দরকার। এই ধরনের হামলা তথা নৃশংসতা বন্ধে দেশটির সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবেÑ এর মধ্যেই দেশটির শান্তি ও কল্যাণ নিহিত।
×