ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

নেতৃত্বের ৩৪ বছর ॥ পথ বন্ধুর, সাফল্য গগনচুম্বী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ মে ২০১৫

নেতৃত্বের ৩৪ বছর ॥ পথ বন্ধুর, সাফল্য গগনচুম্বী

সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। মাঝে-মধ্যে ঝড়োহাওয়া, আকাশে মেঘের গর্জন, দিনটি ছিল ১৭ মে ১৯৮১। মা নেই, বাবা নেই, ভাই-ভ্রাতৃবধূ নেই, নেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক বুলেট সবাইকে কেড়ে নিয়েছে। জার্মানিতে অবস্থান করায় স্বামী অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়া, দুই সন্তান জয়-পুতুল ও ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। তারপর আজ জার্মানি, কাল লন্ডন, পরশু দিল্লী- এভাবে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাসজীবন শেষে স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। পা রাখলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে বহনকারী বিমান অবতরণ করার পর ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউর মহাসমাবেশে আসতে সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা এবং অর্ধকোটি মানুষ হৃদয়ের অর্ঘ্য ঢেলে তাঁকে স্বাগত জানালেন। শেখ হাসিনা চোখের জলে মানুষের অভ্যর্থনার জবাব দিতে দিতে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে অপেক্ষমাণ জনতার মহাসমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘মা-বাবা, ভাই-ভ্রাতৃবধূ সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। আপনাদের মাঝেই আমি আমার হারানো মা-বাবা, ভাই-ভ্রাতৃবধূদের ফিরে পাব আশা করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছে। আমার লক্ষ্য হবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাকে দোয়া করবেন।’ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। তখনও বৃষ্টি পড়ছিল এবং তাঁর চোখের জল বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে যেন মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ থেকে গড়াতে গড়াতে বাংলার মাটি, ফসলের মাঠ ধুয়ে-মুছে পবিত্র করছিল। কতইবা বয়স। সবে ৩৪ পার হলো। সেই থেকে তাঁর নেতৃত্বেরও ৩৪ বছর পার হলো। এখনও নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন। বাংলার স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পাশাপাশি বাঙালী জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন। সেদিনের মিলিটারি স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান অনেক ষড়যন্ত্র করেছিলেন যাতে শেখ হাসিনা স্বদেশের মাটিতে ফিরতে না পারেন। কিন্তু যাঁর পিতাকে পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার লোহার গরাদে আটকে রাখতে পারেনি, সেই পিতারই তো রক্ত বইছে তাঁর ধমনীতে। তাঁকে আটকে রাখে শক্তি কার? যাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে যাঁরা ভেবেছিলেন ফায়দা লুটবেন, তাঁরাই বরং ব্যবহৃত হতে হতে নিঃশেষ হয়ে গেছেন। বড় বেশি আন্ডারমাইন্ড করেছেন তাঁরা এবং আরও অনেকে। বিশেষ করে টেলিভিশনের টক-শোতে বুদ্ধি ফেরি করে বেড়ানো বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক শাহাদুজ্জামানদের মতো বুদ্ধির ফেরিওয়ালারা এখন হতাশ। শেখ হাসিনার জন্ম এমন এক পরিবারে (টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবার) যার ইতিহাস আড়াই শ’ বছরের, যেখানে আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার সব উপকরণ-উপাদান হাতের নাগালের মধ্যেই ছিল, কিছু ছুঁয়েও দেখেননি। বরং গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, মাঠ ভরা ফসল এবং এর মাঝে কামলা-কামিলা বাড়ি গমগম করত, পরিবারের সদস্যদের মতই। এখানে ধর্ম-বর্ণের কোন বিভেদ ছিল না। যা তাঁকে ব্যক্তিক, পারিবারিক, রাজনীতিক এবং রাষ্ট্রিক জীবনে এ অঞ্চলের তথা বিশ্বপরিমণ্ডলে অনুকরণীয় শীর্ষ ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধী যেমন পিতা জওহরলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহচর্য পেয়ে নিজের এক স্বতন্ত্র সত্তা ও ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলেছিলেন, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, কবি জসীমউদ্দীন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাহচর্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শেখ হাসিনাকেও স্বতন্ত্র সত্তা নির্মাণে ভূমিকা রাখে। শেখ হাসিনা ৬ বছর প্রবাসে থাকাকালে ইন্দিরা গান্ধীর সাহচর্য পেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সাহচর্য সরাসরি না পেলেও তাঁদের কর্ম তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয়া কবি সুফিয়া কামাল ও মা মহীয়সী শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিবের আদর্শ তাঁর সত্তাকে পূর্ণতা দিয়েছে, যা পরবর্তীতে দল পরিচালনা, গণমুখী নীতির কারণে জনমনে স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্র পরিচালনায় অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। আগামীকাল রবিবার ১৭ মে, শেখ হাসিনার প্রবাস জীবন থেকে স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের ৩৪তম বার্ষিকী বা ৩৫তম দিন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি যেমন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো দেশের সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী দলের সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন, তেমনি শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তৃতীয়বারের মতো জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর্থ-সামাজিক ও মানব উন্নয়ন সূচকে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর এ চলার পথ মোটেই সহজ ছিল না, তাঁকে তিন তিনটি মিলিটারি স্বৈরাচারের (জিয়া-এরশাদ-মইনুদ্দিন) বিরুদ্ধে লড়াই করে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জয়ী হতে হয়েছে। এমনকি সিভিল লেবাসে আধা মিলিটারি স্বৈরাচার, রাজাকার ও দেশদ্রোহীদের (খালেদা-নিজামী-তেঁতুল শফী) বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। যে কারণে তাঁকে বার বার হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যেকবারই তাঁকে টার্গেট করে বৃষ্টির মতো গুলি চালানো হয়েছে, বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর হত্যা ষড়যন্ত্র। এখানে তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, পরে বৃষ্টির মতো গুলিও চালানো হয়। দলীয় নেতাদের মানব দেয়ালের কারণে বেঁচে গেলেও দলীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শেখ হাসিনার এক কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেডের স্পিøন্টার শরীরে, মাথায় নিয়ে দলের দুই জনপ্রিয় নেতা আবদুর রাজ্জাক ও মুহম্মদ হানিফ ইন্তেকাল করেছেন। অনেকে আজও স্পিøন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। এসব প্রতিকূলতা, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও জীবনের ঝুঁকি মোকাবেলা করেও নিরলস কাজ করে চলেছেন এবং আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানব উন্নয়নে তাঁর সাফল্য গগনচুম্বী। যেমন :Ñ ১৯৯৬ সালে (বঙ্গবন্ধু হত্যার পর) প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে কয়েকটি বড় কাজ করেছেনÑ ১. বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে জাতিকে পাপমুক্ত করা, ২. ৪০ টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে শুরু করে তখনই কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে ঘাটতি পূরণ করে দেশকে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা, ৩. ১৯৯৮-এর ভয়াবহ বন্যায় ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা’ বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলীয় মহাজোটের ভূমিধস বিজয় অর্জিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে আড়াই শ’র বেশি আসন লাভ করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবি হয়। নির্বাচনের অঙ্গীকার এবং অঙ্গীকারের পক্ষে গণম্যান্ডেট অনুযায়ী শেখ হাসিনা কতগুলো ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেন। এক. নির্বাচনের গণম্যান্ডেট অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন এবং এরই মধ্যে প্রধান যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ এক ডজনেরও অধিক যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড এবং আমৃত্যু কারাবাসের সাজা হয়েছে। গোলাম আযম ও আবদুল আলিম কারাগারেই মারা গেছেন। কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। আমৃত্যু কারাবাস সাজা হয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর, ফাঁসির রায় হয়েছে আলবদর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, সাকা চৌধুরীসহ কয়েকজনের এবং তাদের দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। এর বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার নির্দেশে ২০১৩ সালব্যাপী ছাত্রদল-ছাত্রশিবির সন্ত্রাসীদের দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড, মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা, নারী নির্যাতন, তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ- ৯ মাস এমনি আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড চালানো হয়। শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে ৫৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়, খালেদা জিয়ার আগুন সন্ত্রাসীরা প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা, পুলিশ হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। যথারীতি নির্বাচন হয়ে গেল, খালেদা এবং তাঁর আগুন সন্ত্রাসী বাহিনী ঘরে ঢোকে। এ বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে আবার সন্ত্রাস শুরু করে। এবার শুরু করে পেট্রোলবোমা। নিজেকে গুলশান কার্যালয়ে স্বেচ্ছা অবরোধ করে প্রতিনিয়ত পেট্রোলবোমায় ৯২ দিনে দেড় শতাধিক মানুষ হত্যা, দেড় সহস্রাধিক গাড়ি পোড়ানোসহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেও কোন সুফল ঘরে তুলে নিতে ব্যর্থ হয়ে রণে ভঙ্গ দেন এবং স্বেচ্ছা অবরোধ তুলে ঘরের বউ ঘরে ফিরে যান। চৌকস রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিলে খালেদা জিয়া নাকে খত দিয়ে তাতে অংশ নেন, কিন্তু জনগণ আগুন সন্ত্রাসিনীকে প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচিত হন শেখ হাসিনার প্রার্থী আনিসুল হক (ঢাকা উত্তর), সাঈদ খোকন (ঢাকা দক্ষিণ) ও আ জ ম নাছির (চট্টগ্রাম)। খালেদা আরেকটি ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ঘরে ফেরেন। ৯২ দিন কী ভয়াবহ পরিস্থিতি ও আতঙ্ক গোটা দেশকে সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও খালেদা জিয়া দিব্যি রাজনীতি করছেন! কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস? এমনি অনেক কাহিনী আছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়া বাংলাদেশ ও বাঙালী জনগণের জন্য দুষ্টগ্রহ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু অর্জন বলুন, সাফল্য বলুন, ব্যাগ শূন্য। পক্ষান্তরে রাষ্ট্র পরিচালনায় তথা দেশের আর্থ-সামাজিক, সংস্কৃতিচর্চা ও উন্নয়নে শেখ হাসিনা দৃপ্ত পদভারে এগিয়ে চলেছেন। আর খালেদা জিয়া চেয়ে চেয়ে দেখছেন আর জ্বলছেন। জ্বলতে তো হবেই। এক মেধাবী সুশিক্ষিতা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সুশীল পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং সর্বোপরি আন্দোলনের মধ্যে বড় হওয়া শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার তুলনা হবে কেন? বুদ্ধির ফেরিওয়ালারাও এখন ক্লান্ত। শেখ হাসিনার সাফল্যের তালিকা অনেক অনেক দীর্ঘ, যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করতে চাইÑ এক. আজ বাংলাদেশ চাল রফতানি করছে শ্রীলঙ্কায়। খাদ্য উৎপাদন এখন ৪ কোটি টনের ঘরে। দুই. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তিন. মানুষের মাথাপিছু আয় বছরে ১৩১৪ মার্কিন ডলার। চার. এখন একজন শহুরে রিক্সাওয়ালা বা গ্রামীণ দিনমজুরও দিনে যথাক্রমে ১০০০ টাকা এবং ৬০০-৮০০ টাকা রোজগার করে। পাঁচ. শিক্ষার হার ৭০%। বছরের প্রথম দিন ৩৪ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ। ছয়. জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ বছর ধরে টানা ৬%-এর ওপরে। সাত. দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ শত বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আট. খালেদা জিয়ারা এখন চেষ্টা করেও কোন বাসন্তি-দুর্গতি বানাতে পারছেন না। একটি মানুষও এখন আর না খেয়ে থাকে না। নয়. শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা (পুত্র) সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। দশ. এখন ঘরে ঘরে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে কম্পিউটার। এগারো. ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি সেলফোন ব্যবহার করে। বারো. জনবহুল রাজধানী ঢাকায় নান্দনিক হাতিরঝিল নির্মাণ। তেরো. যানজট হ্রাসে মহানগরব্যাপী একটার পর একটা ফ্লাইওভার, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মূল ঢাকার দিকে চলার পথে হাত-পা ছড়িয়ে ফ্লাইওভারগুলো যেভাবে এদিকে-ওদিকে চলে গেছে, তাতে ঢাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে, মনে হয় কোন উন্নত দেশে আছি। চৌদ্দ. এখন হচ্ছে এলিভেটেডওয়ে, মেট্রোরেলের কাজ। চরম আওয়ামী লীগ বৈরী নোবেল জয়ী প্রফেসর ইউনূসসহ কিছু মানুষ ও বিশ্বব্যাংকের চক্রান্তে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু সাহসী বাবার সাহসী কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু তোয়াক্কা না করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন, কাজ এগিয়ে চলছে। পনেরো. সর্বোপরি শেখ হাসিনা যে কাজটি সফলভাবে করেছেন তা হলোÑ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনা। চক্রান্ত আছে, হয়ত ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু দেশের নেতা যেখানে শেখ হাসিনা, সেখানে মানুষ স্বপ্ন দেখবে, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে, দেশ এগিয়ে যাবে, যাচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তি জীবনেও শেখ হাসিনা ও স্বামী অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার দুই সন্তান আজ আন্তর্জাতিকমানের ব্যক্তিত্ব। পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তিবিদ, কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল জাতিসংঘের অটিস্টিক বিশেষজ্ঞ। একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য। ছেলে ববিও উচ্চশিক্ষিত। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার সন্তানরা আজ বাঙালী তো বটেই, বিশ্বব্যাপী তাবৎ তরুণ-তরুণীর অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০১৯ সালের মধ্যে (ঐ বছর পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে) বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে, যা অনেক আগেই হওয়ার পথে। এভাবে শেখ হাসিনা সেরেস পুরস্কার, মাদার তেরেসা পুরস্কার, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, সাউথ সাউথ পুরস্কার এবং ভারতের বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা, ব্রিটেনের ডান্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর এক ডজনেরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত হয়ে জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। শেখ হাসিনা আজ ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণীদের জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর জাতি গঠনে যা খুবই জরুরী। সর্বোপরি তিনি দেশ ও জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ঢাকা, ১৫ মে ২০১৫ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
×