ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশাল বৃক্ষ থেকে সবুজ সুন্দর শিল্পিত উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ মে ২০১৫

বিশাল বৃক্ষ থেকে সবুজ সুন্দর শিল্পিত উপস্থাপনা

মোরসালিন মিজান ॥ বলা টলা হয় বটে, বৃক্ষ আদিপ্রাণ। কবিগুরুও লিখেছেন- অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান/ প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ...। আদতে ক’জন সবুজ ভালবাসেন? কতটা? চারপাশে তাকালে এমন প্রশ্ন মনে উঁকি দেয় বৈকি। তবে হ্যাঁ, যে বা যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা আর সব ভুলে যান। বৃক্ষ নিয়ে থাকেন। প্রেম দিয়ে একে বাঁচিয়ে রাখেন। বড় করে তোলেন। বনসাঁইয়ের বেলায় অবশ্য খুব বেশি বড় করার ব্যাপার নেই। একে গড়ে নিতে হয়। শিল্পীত করতে হয়। নিজের বোধ আর বুদ্ধি দিয়ে ঠিক করতে হয় আকার আকৃতি। এ জন্য প্রেম দরকার। রুচি থাকা চাই। শ্রম-ঘাম যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রশিক্ষণের। আর ধৈর্যের কথা তো বলাই বাহুল্য, এই গুণটি ছাড়া অন্তত বনসাই হয় না। সব মিলিয়ে যথেষ্ট কঠিন কাজ। আরও অনেকের মতো এ কাজটির সঙ্গে আছেন তরুণ শিল্পী কেএম সবুজ। সব দিক মোটামুটি মাথায় রেখে কাজ করেন তিনি। বয়সে তরুণ। এর আগে দলীয় বেশ কিছু প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। আর তার পর প্রথম একক প্রদর্শনী। তাঁর তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী শুক্রবার থেকে ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে শুরু হয়েছে। লিভিং আর্ট শিরোনামে সকালে এর উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। বিকেলে প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল সবুজের সমারোহ। দেশী-বিদেশী নানা জাতের গাছ। পথের ধারে, বাড়ির পেছনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত গাছের ডাল সযতেœ কুড়িয়ে নেন শিল্পী। ঘরে তুলেন। পরিচর্যার আওতায় আনেন। ওমনি তাতে ভরপুর প্রাণ! নার্সারি থেকে সাধারণ চারা সংগ্রহ করেও বনসাঁই করেন। এভাবে বিশাল বৃক্ষ থেকে টুকরো টুকরো সবুজ। দূর থেকে বাগানের মতো মনে হয়। কাছে গেলে দৃশ্যমান হয় শিল্পগুণ। হ্যাঁ, উপভোগ করার মতো। প্রদর্শনীতে ১০০ প্রজাতির প্রায় ৪০০ বনসাই। যথারীতি প্রাধান্য পেয়েছে দেশী ও বিদেশী জাতের বট। বার বার দেখা কোন কোনটি। এর পরও কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য এগুলোকে আলাদা করে। কেএম সবুজের দেশী বট ছোট্ট পরিসরেই বিশালাকার রূপ পরিগ্রহ করে। আম বটের একটি বনসাইকে তো গাছ মনে হয় না। যেন হাতে গড়া শিল্পকর্ম। এর ডাল ঘন পাতা সবই বছরের পর বছর ধরে তৈরি করতে হয়েছে। প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশের সময় একবার অন্তত গাছটির দিকে তাকাতে হয়। বনসাইটির দাম ৩ লক্ষ টাকা। জানা গেল, ক্রেতাদের পক্ষ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আগেই বলা হয়েছে। হাতছাড়া করেননি শিল্পী। চায়না বটের আছে বড়সড়ো দুটি বনসাই। খুব সহজে নজড়কাড়ে। কয়েকটি তেঁতুলগাছ থেকে বনসাই গড়েছেন শিল্পী। শক্ত কা-কে দক্ষ হাতে আঁকাবাঁকা আর দীর্ঘ করেছেন। পাতাগুলোও চিরুনির মতো। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কতবেলের টব সামান্য উঁচু। সেখান থেকে নিচের দিকে ছড়ানো একাধিক ডাল। একই গাছ অন্যত্র বিশেষ উপস্থাপনা পেয়েছে টবের কারণে। জাহাজ আকৃতির টব। সেখানে সামান্য দূরত্ব রেখে বেশ কয়েকটি গাছ। দারুণ কম্পোজিশন। প্রদর্শনীতে আছে ফুল ও ফলের গাছ। ছোট ছোট গাছে এমনকি ফুল ধরে আছে। ফলও। এইটুকুন পেয়ারা গাছে ফুল ফল দুটোই দেখা গেল। জামরুলের গাছে বেশ কয়েকটি জামরুল। মুকুল এসেছে আম গাছে। কামরাঙ্গা গাছের একটি ডাল থেকে কচি পাতা বের হয়েছে। কেএম সবুজ নিরীক্ষাপ্রিয়। হয়ত তাই জাম গাছেরও বনসাই করেছেন। এটি প্রথমবার। শেকড়ে হাত দিয়ে দেখা গেল, বেশ টিকে গেছে। বকুল গাছের বনসাইও কম দেখা যায়। প্রদর্শনীতে এই গাছের একাধিক বনসাই। শিমুল গাছ থেকে করা হয়েছে চমৎকার বনসাই। দেখতে অনেকটা টেবিল ল্যাম্পের মতো। মহুয়ার চারা থেকে করা বনসাইয়ের বয়স এখন ১৫! সব মিলিয়ে চমৎকার কর্মপ্রয়াস। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত চলবে।
×