ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক অস্থিরতাই মূল কারণ

রফতানি আয়ে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৫ মে ২০১৫

রফতানি আয়ে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না

জসিম উদ্দিন ॥ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে অর্থবছরের বাকি দুই মাসে ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার আয় করতে হবে। রফতানির সঙ্গে জড়িত ও এই খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থবছরের গত ১০ মাসের ধারাবাহিক আয় পর্যালোচনা করলে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করার পেছনে গত কয়েক মাসে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেন। পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন ও ইউরোপের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া এবং কম্পøায়েন্স ইস্যু এর পেছনে ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ রফতানি আয় করে ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে এই অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা নির্ধারণ করা হয়েছিল এর আগের অর্থবছরের রফতানি আয় থেকে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে। রফতানি আয়ের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি দুই মাসে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। দেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো তৈরি পোশাক রফতানি। যা ইতোমধ্যে তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয় ২০ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা হলো ২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাকের ওভেন খাত থেকে আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা তার লক্ষ্যমাত্রা থেকে মাত্র ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ দূরে। অন্যদিকে নিটওয়ার খাত থেকে আয় হয় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে মাত্র ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম রয়েছে। এছাড়া রফতানি আয়ের অন্যান্য বড় খাতের মধ্যে হিমায়িত খাদ্য তার লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম আয় করেছে। এছাড়া চা রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১৯ শতাংশ, চিংড়ি খাত ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, কাঁচা পাট ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং কম্পিউটার সেবা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম আয় করে। এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইবিএ) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করা আমাদের জন্য খুব সহজ ছিল। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এর মাঝে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের বর্তমান ধারাবাহিতকায় এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে বেশ দূরে অবস্থান করবে। ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন ও ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের রফতানি আদেশ কমে যাওয়া এবং কম্পøায়েন্স ইস্যু’ রফতানি আয় কমে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক। তিনি বলেন, আগামী দুই মাসে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হারে হলে ৩ বিলিয়ন আয় করতে সক্ষম হবে। আর এই প্রবৃদ্ধি যদি ১০শতাংশ হারে হয়, তাহলে ৩১ বিলিয়ন আয় করতে সক্ষম হবে। এদিকে ইপিবির ভাইস-চেয়ারম্যান শুভাশীষ বোস বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাক্সিক্ষত রফতানি আদেশ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ১০শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতনের কারণে এখন সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
×