ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানব পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া বিশেষ বৈঠক হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৫ মে ২০১৫

মানব পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া বিশেষ বৈঠক হবে

তৌহিদুর রহমান ॥ সমুদ্রপথে মানবপাচার রোধে স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। এ লক্ষ্যে কুয়ালালামপুরে দুই দেশের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠক হবে। অবৈধভাবে মানবপাচার প্রতিরোধে সরকার বিশেষভাবে সক্রিয় রয়েছে, তা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি অবৈধভাবে মানবপাচার রোধের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ১৬-১৭ মে দুই দিনব্যাপী যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে যোগ দিতে আজ শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনশক্তি রফতানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে এই বৈঠকের ফাঁকে সমুদ্রপথে মানবপাচার ঠেকাতে দুই দেশের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠক হবে। বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য কয়েক হাজার নাগরিক এখন সাগরে ভাসছে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য মালয়েশিয়ার সরকার বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। সেখানে মানবপাচার রোধের বিষয়ে একটি বিশেষ বৈঠকও হবে। সূত্র জানায়, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে এখন যে কয়েক হাজার বাংলাদেশী নাগরিক সাগরে ভাসছে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। এসব নাগরিকদের মালয়েশিয়ার সীমান্তে ভিড়তে না দিয়ে বিভিন্ন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া উচিত। তবে মালয়েশিয়া সরকার সেটা না শুনে অবৈধ অভিবাসীদের জাহাজ ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই এসব নাগরিকের সাগরেই মৃত্যু হতে পারে। আবার এসব নাগরিকরা অবৈধভাবে সাগরপথে পাড়ি দেয়ায় সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশও। সে কারণে উভয় দেশই এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানে আসতে আগ্রহী। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া থমকে আছে। রফতানি প্রক্রিয়া চলমান থাকলে সাগরপথে মানবপাচার কমে যেত। তাই এ বিষয়টিই মালয়েশিয়ার কাছে তুলে ধরতে চায় বাংলাদেশ। গত বছর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিব বিন তুন আব্দুল রাজাক সেদেশে শ্রমিক নেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন। তার আগে গত বছরের আগস্টে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী দাতো সেরি রিচার্ড রিয়তের ঢাকা সফরে ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত চাহিদাপত্র পাঠায়নি দেশটি। এবারের যৌথ কমিশন বৈঠকে এসব কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। এমনকি দুদেশের মধ্যে ভিসা অব্যাহতির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সেটি করা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার প্রতিশ্রুত সারওয়াক প্রদেশে শ্রমিক পাঠানো জন্য চাহিদাপত্রের বিষয়টি বিশেষভাবে জোর দেয়া হবে এবারের বৈঠকে। একই সঙ্গে ভিসা অব্যাহতির বাস্তবায়ন, নিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে মালয়েশিয়া মুক্তবাণিজ্য চুক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশটি চায়, পাকিস্তান ও ভারতের মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও তাদের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হোক। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে তিন বছর ধরে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে আসছে মালয়েশিয়া। কিন্তু এতদিনেও চুক্তির লাভক্ষতির হিসাব মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে এখনও ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার প্রস্তাব। এবারের যৌথ কমিশনের আলোচনায় মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়কমন্ত্রী দাতো মুস্তফা মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফরের সময় মুক্তবাণিজ্যের (এফটিএ) বিষয়টি উঠে আসে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায়। এবারের বৈঠকে এফটিএর বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ট্যারিফ কমিশনকে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়া থেকে বিনিয়োগ আনা বা দেশটিতে আরও শ্রমিক রফতানির সম্ভাবনা বিবেচনায় লাভক্ষতির হিসাব চাওয়া হয়। সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ।
×