ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক লাখ ৯৯৬ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ মে ২০১৫

এক লাখ ৯৯৬ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য মোট এক লাখ ৯৯৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ উন্নয়ন কর্মসূচী অনুমোদন করা হয়। চূড়ান্ত করা ৯৭ হাজার কোটি টাকার এডিপি বরাদ্দের মধ্যে সরকারী অর্থের পরিমাণ সাড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিল ব্যয় রয়েছে ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। যা নিয়ে আগামী অর্থবছরের মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার দাঁড়ায় এক লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এমইসি বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এডিপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত চাহিদা ও আমাদের সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় করে এ এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্জিত হবে। যদিও আমাদের লক্ষ্য ছিল ৭ শতাংশ। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজও করেছি। কিন্তু এ বছরের জ্বালাও- পোড়াওয়ের কারণে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে না।’ মন্ত্রী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া অর্থ ব্যয় করা হবে। এর আগে এনইসির সভায় এডিপির জন্য সাড়ে ৯২ হাজার কোটি টাকা উত্থাপন করে পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত ৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার বাড়তি এডিপি বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুত বিভাগ অতিরিক্ত আরও এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে এটা তাদের দেয়া হবে। এ ছাড়া যোগাযোগ আরও ৮০০ কোটি টাকা চায়। নৌপরিবহন ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত চায়। মন্ত্রী বলেন, দেশের কিছু এলাকা পিছিয়ে পড়েছে তাদের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এডিপির আওতায় নানা প্রকল্প প্রহণ করা হবে। সারাদেশে এডিপি বাস্তবায়নের গতি আরও বাড়বে। জানা যায়, এডিতে পদ্মা সেতুতে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরের (২০১৫-১৬) জন্য। সেই সঙ্গে নতুন এডিপিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পদ্মা সেতুর গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুত খাত ১৫ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। এ ছাড়াও নতুনভাবে আরও হাজার কোটি টাকার দাবি করেছে বিদ্যুত বিভাগ।ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে দেয়া হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৪৫৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ও ধর্ম খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩২৫ কোটি ৫৩ লাখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩৮ কোটি ৬৬ লাখ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১১৬ কোটি, আইন ও বিচার বিভাগে ৩২৯ কোটি ৩ লাখ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ২২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৮৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মূল এডিপি ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। মূল এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) ৫২ হাজার ৬১৫ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য ছিল ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধন করে এডিপি কমিয়ে আনা হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকায়। মুস্তফা কামাল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এ বছর জিডিপি অর্জন ৬.৫১ শতাংশ। আশা করেছিলাম এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে। প্রথম ছয় মাস ঠিক ছিল। পরবর্তীতে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে ৭ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য তিনি দেশের কৃষক, শ্রমিক, ড্রাইভার সকল পেশাজীবী মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হরতাল অবরোধেও বেসরকারী খাত ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে চাহিদা থাকবে সরকার তা মেটাবে। এক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানে ব্যত্যয় ঘটবে না। তবে এক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বার বার প্রকল্প সংশোধন করা যাবে না। আমি এমনটা দেখেছি কিছু প্রকল্প আছে যেটা ৫ ভাগ কাজ হলে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক সে কাজ শেষ না করে অযথা সময় বৃদ্ধির আবেদন করে। এটা করার মূল কারণ প্রকল্প থেকে বাড়তি সুবিধা ভোগ করা। এতে সরকারী অর্থ অপচয় হয়। সেই সঙ্গে এটা নিশ্চিত করবো একজন প্রকল্প পরিচালককে একের অধিক প্রকল্প দেয়া হবে না। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৫১ ভাগ। মোট জিডিপির মধ্যে কৃষি খাতের অবদান ১৫.৫৯ ভাগ, শিল্প খাতের অবদান ২৭.৯৮ ভাগ এবং সেবা খাতের অবদান ৫৬.৪২ ভাগ। গত বছর এ তিনটি খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে কৃষিতে ১৬.১১ ভাগ, শিল্পে ২৭.৭১ ভাগ এবং সেবা খাতে ৫৬.১৮ ভাগ। এ বছর এ তিনটি খাতে প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে কৃষিতে ৩.০৪ ভাগ, শিল্পে ৯.৬ ভাগ এবং সেবায় ৫.৮৩ ভাগ। গত বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে কৃষিতে ৪.৩৭ ভাগ, শিল্পে ৮.১৪ ভাগ এবং সেবায় ৫.৬২ ভাগ। তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ ২৮.৯৯ ভাগ। এর মধ্যে সরকারী বিনিয়োগ ৬.৬ ভাগ এবং বেসরকারী বিনিয়োগ ২২.৩৯ ভাগ। গত বছর জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ ছিল ২৮.৫৮ ভাগ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ব্যতীত বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত মোট প্রকল্প সংখ্যা ৯৯৮টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৫৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৩২টি, জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প ১২টি। এছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ১২৫টি প্রকল্প রয়েছে। এবারের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের সংখ্যা ৮৫৭টি। অপরদিকে, এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হলো ৩৬৮টি। জুন ২০১৫ এর মধ্যে যেসব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হবে না এরূপ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পকে তারকা চিহ্ন দিয়ে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মেয়াদকাল বৃদ্ধি ছাড়া অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা যাবে না। এ বছর এডিপিতে এ রকম প্রকল্পের সংখ্যা ২০৯টি। এ বছর এডিপিতে সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্পের সংখ্যা ৩২৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৮১টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৪১টি, জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প ২টি। এ বছর এডিপিতে পিপিপি প্রকল্প সংখ্যা ৪০টি।
×