ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নরেন্দ্র মোদির সফরসূচী তৈরির কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ মে ২০১৫

নরেন্দ্র মোদির সফরসূচী তৈরির কাজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার ঢাকা আসছেন। মোদির ঢাকা সফর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এখন তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আগামী ৬-৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সফরসূচী ও এজেন্ডা তৈরির কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬ ও ৭ জুন ঢাকা সফরের দিন নির্ধারণ করেছে। ৭ মে ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। দুই নেতা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ও সীমান্ত বিল পাসে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকার ও জনগণের পক্ষে নরেন্দ্র মোদিকে সীমান্ত বিল পাসের জন্য ধন্যবাদ জানান। সীমান্ত বিল পাসের জন্য নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়সূচী নির্ধারণে দেরি হচ্ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফর নিয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক হয়। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফর নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হয়। গত বছর মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিবেশী দেশগুলো সফরের পরিকল্পনা নেন তিনি। ইতোমধ্যেই তিনি নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। এবার বাংলাদেশ সফরের পালা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চিঠি লিখে বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান নরেন্দ্র মোদিকে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সফরের আগে কংগ্রেস আমল থেকে ঝুলে থাকা সীমান্ত বিল ও তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ওপর জোর দেন নরেন্দ্র মোদি। অবশেষে সীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর ঢাকা সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়। আর তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রধান বাধা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করানোর কাজ করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রেও মমতা মত পাল্টাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সফরকালে ‘তিস্তার জন্য আমার ওপর আস্থা রাখুন’ এমন কথা বলে যান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গত মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে মোদির এই আমন্ত্রণ সংবলিত একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ঢাকা সফরের জন্য আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আপনার ভারত সফরের জন্যও আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।’ তার এই আমন্ত্রণের জবাবে জয়শঙ্করের কাছে শেখ হাসিনাও জানিয়েছিলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী কবে বাংলাদেশ সফর করবেন, আমরাও সেজন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।’ শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছিলেন, খুব শিগগিরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসবেন। মোদির বাংলাদেশ সফরের পরে সুবিধাজনক সময়ে শেখ হাসিনাও ভারত সফর করবেন বলে জানা গেছে। সীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কিছু ইস্যু যুক্ত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। মোদির সফরে বাণিজ্য, নৌ, যোগাযোগ ও শিল্প ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতা বা চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ভারত সরকার বাংলাদেশকে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে চুক্তি সই হতে পারে মোদির সফরে। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৬ দিনের সফরে চীন, মঙ্গোলিয়া ও কোরিয়া যাচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদি প্রথমে তিন দিনের সফরে আজ চীনে যাবেন। ১৪-১৬ মে পর্যন্ত দেশটিতে অবস্থানকালে তিনি দেশটির রাজধানী বেইজিং ও সাংহাইয়ে যাবেন। এ সফরে মোদি দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ অন্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া সংস্কৃতি ও বাণিজ্যবিষয়ক কয়েকটি অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন। মূলত এশিয়ার তিন দেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি প্রথমে চীনে যাবেন। প্রথম তিন দিনের চীন সফর শেষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ১৭ মে মঙ্গোলিয়া যাবেন। প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশটি সফরে যাচ্ছেন। ৬ দিনের সফরের শেষ পর্বে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন। ১৮ ও ১৯ মে দেশটি অবস্থানকালে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট জিযুনি হিউর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এছাড়া সিউলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
×