ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিলেটে হরতাল পালন

ব্লগার অনন্ত হত্যায় কেউ গ্রেফতার হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ মে ২০১৫

ব্লগার অনন্ত হত্যায় কেউ গ্রেফতার হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ ব্লগার অনন্ত হত্যাকারীদের কেউ ধরা পড়েনি। উৎকণ্ঠায় আছেন সমমনারা। অনন্ত হত্যাকারীদের অবস্থান কোথায়? হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক কারা? হত্যাকারীরা সিলেটে অবস্থান করেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের যোগসূত্র ধরে এগুলেই প্রকৃত খুনীদের শনাক্ত করা যেত। কিছুদিন পূর্বে নগরীর মুন্সীপাড়া থেকে গ্রেফতার হওয়া ফারবির সঙ্গে সিলেটে কাদের যোগাযোগ ছিল সে বিষয়ে অগ্রগতি হলে খুনীদের চিহ্নিতকরণ সহজ হতো। এমন আলোচনা চলছে সকল মহলে। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানায় তার বড় ভাই রতনেশ্বর দাশ একটি মামলা করেছেন, যাতে অজ্ঞাত পরিচয় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার প্রতিবাদে ও খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে বুধবার গণজাগরণমঞ্চ আধাবেলা হরতাল পালন করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অনন্তের হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালানো হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। চারজন মুখোশধারী এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে তারা জানতে পেরেছে। পুলিশ তাদের ধরার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৩১ বছর বয়সী অনন্তের সম্পাদনায় সিলেট থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল বিজ্ঞান বিষয়ক ছোটকাগজ ‘যুক্তি’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র অনন্ত নিহত আরেক ব্লগার অভিজিতের মুক্তমনা ব্লগে নিয়মিত লিখতেন। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেও সোচ্চার ছিলেন তিনি। এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরপরই আনসার বাংলা ৮ নামে একটি টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডের পরও একিউআইএস দায় স্বীকার করেছিল, তবে এই সংগঠনটির তৎপরতার বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে তেমন তথ্য নেই। পুলিশের বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, তারা জানতে পেরেছে কিছুদিন আগে সিলেট থেকে গ্রেফতারকৃত ফারাবির হিটলিস্টেও অনন্তর নাম ছিল। এছাড়া ২০১৩ সালের অক্টোবরে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের পর ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪ জনের নামের একটি তালিকা পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ, যাতে আসিফ মহিউদ্দিন, রাজীব হায়দার ও অভিজিত রায়ের সঙ্গে অনন্ত বিজয়ের নামও ছিল। তবে এ হত্যকাণ্ডে কারা জড়িত তা এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান জানিয়েছেন, জঙ্গী সংগঠনের দায় স্বীকারের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার প্রতিবাদে বুধবার নগরীতে আধাবেলা হরতাল পালন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। সকালে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে গণজাগরণ মঞ্চ, প্রগতিশীল ছাত্র জোটসহ অন্যান্য প্রগতিশীল সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত হন। পরে সকাল পৌনে ৮টায় সেখান থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানান হরতাল সমর্থকরা। হরতালে বড় ধরনের কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সকাল ১০টার দিকে পিকেটাররা কোর্ট পয়েন্টে দুটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। হরতালে নগরীতে যান চলাচল কিছুটা কম ছিল। এদিকে, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে নগরীর সুবিদবাজার এলাকাবাসী। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় এই মানববন্ধনে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও অনন্ত বিজয়ের স্বজনরাও অংশ নেন। মানববন্ধনপরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। জয়ের মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল ॥ সিলেট অফিস জানায়, বুধবার দুপুরে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের হত্যাকা-ের প্রতিবাদে এবং খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও সমাবেশে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকা-ের পর প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্টেটমেন্টের কঠোর সমালোচনার প্রতিবাদ করেছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, ‘হত্যাকা-কে স্পর্শকাতর বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন তা মৌলবাদীদের জন্য একটা গ্রীন সিগনাল। জয়ের মন্তব্যে মনে হচ্ছে ‘তোমরা এভাবে হত্যাকা- চালিয়ে যাও সরকার কিছুই করবে না।’ একজন একজন করে মারা হবে সরকার কিছুই করবে না! সরকার যেটা করছে এবং জয় যেটা বলেছে, সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’ ব্লগার অনন্ত দাশ হত্যা ‘সরকারের ব্যর্থতা’ উল্লেখ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, ‘তোমরা স্বীকার করে নাও সরকারের কাছ থেকে বিশেষ কিছু পাবে না।’ ‘বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হত্যাকারীদের প্রসাশন ধরতে পারছে না সেটা আমি বিশ্বাস করি না। এটা সরকারের ব্যর্থতা।’ জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘তোমরা যারা সত্যি কথা বলো, তোমদের যে কোন সময় মেরে ফেলা হবে, আমাদের মেরে ফেলা হবে, সরকার কিছুই করবে না। নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিতে হবে।’ প্রেসক্লাবের দফতর সম্পাদক জাবেদ ইকবালের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমীন হক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফ মোঃ শরাফ উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাবি শাখার কমিটি সদস্য ইসরাত রাহি রিশতা এবং সম্মিলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া জোটের আহ্বায়ক গিয়াস বাবু প্রমুখ। জয়ের মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল ॥ সিলেট অফিস জানায়, বুধবার সকালে সিলেট নগরীর হুমায়ূন রশীদ চত্বরে প্রাইভেট কারসহ এক ছিনতাইকারীকে আটক করেছেন শিক্ষিকা। এ সময় অপর চার ছিনতাইকারী কার থেকে নেমে পালিয়ে যায়। আটক ছিনতাইকারী সুশীল সিংহ (৩০) মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার তারুয়া বিল গ্রামের মৃত তাবাউ মউ’র ছেলে। বর্তমানে সে সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানাধীন পনিটুলায় বসবাস করছে। ছিনতাই শিকার স্কলার্সহোম প্রিপারেটরি স্কুল দক্ষিণ সুরমা শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল রুমানা চৌধুরী জানান, বুধবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের সময় তার মেয়ে রুবিয়া মেহজেবিন (১১) ও বোনের ছেলে আহমেদ হাসানকে (১০) নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাযোগে স্কলার্সহোম দক্ষিণ সুরমা শাখায় যাচ্ছিলেন। শাহজালাল ব্রিজের উপর যাওয়ার পর সামনে ডাক্তার লেখা একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো ক ০৩-৮৭৯৪) থেকে চালকসহ ৫ জন ছিনতাইকারী নেমে ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ ৪০ হাজার ২০০ টাকা, ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্যামসাং নোটপ্যাড, ৯ হাজার টাকা মূল্যের ১টি সিম্ফনি ট্যাব, ১টি মোবাইল ফোন সেট ও জরুরী কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। হুমায়ূন রশীদ চত্বরের ফুলকলি মিষ্টির দোকানের সামনে যাওয়ার পর ছিনতাইকারীদের প্রাইভেট কারটি দেখে তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ও দায়িত্বরত পুলিশ এগিয়ে আসলে কার থেকে নেমে ৪ জন ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। তখন জনতা কার চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
×