ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২ শুরু ডিসেম্বরে

সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল, তবে...

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ মে ২০১৫

সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল, তবে...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ম্যাচ গড়াপেটা কা-ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বিগ বাজেটের টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ যে দুই বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে, এখনও সেই গ্যাঁড়াকলেই পড়ে রয়েছে। অবশেষে টাকার ছড়াছড়ির এ টুর্নামেন্ট আবারও আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এ বছর ডিসেম্বরেই বিপিএলের তৃতীয় আসর আয়োজন হবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল। শুধু কী এই ঘোষণা এসেছে, বোমা ফোটানো একটি ঘোষণাও দিয়ে দিয়েছেন বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের কর্মকর্তারা। সেটি কী? বিপিএলে অংশ নেয়া সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে! তবে একটি ‘খালি স্থান’ও রাখা আছে। যেই স্থান পূরণ করেই ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আবার বিপিএলে অংশ নিতে পারবে। সেই খালি স্থান কী? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে যার যা দেনা আছে, তা পূরণ করতে হবে। তাহলেই কেবল বিপিএলের তৃতীয় আসরে অংশ নিতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। নয়ত আর কোন সুযোগই দেয়া হবে না। বাতিল করে দেয়া হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বিপিএল চালানো হবে। এমনটি জানিয়েছেন বিসিবির পরিচালক ও বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাঈল হায়দার মল্লিকই। মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল। সংবাদ সম্মেলনে মল্লিকের সঙ্গে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহা, বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন উপস্থিত ছিলেন। মল্লিক বলেন, ‘কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিই তাদের অঙ্গীকার রাখেনি। আইনত তাদের আর অধিকার থাকে না। হয়ত তারা থাকবে না। নতুন করে করব আমরা। ওনারা (ফ্র্যাঞ্চাইজিরা) বাদ যেতে পারেন। আমরা আমাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে তাদের চিঠি দিছি, লিগ্যাল নোটিস দিছি। ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিলের চিঠিও দেয়া হয়ে গেছে। আপীলের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা আসেও না, জবাবও দেয় না। প্রয়োজন হলে তাদের ছাড়াই করতে হবে।’ বিপিএলের প্রথম আসরে ২০১২ সালে অংশ নেয় ৬টি দল-ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, চিটাগং কিংস, দুরন্ত রাজশাহী, বরিশাল বার্নার্স, খুলনা রয়েল বেঙ্গলস, সিলেট রয়্যালস। ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি যে বিপিএলের দ্বিতীয় আসর শেষ হয়, তাতে প্রথম আসরের ৬ দলের সঙ্গে নতুন দল হিসেবে যুক্ত হয় রংপুর রাইডার্স। এ বছরই ঘটে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত ঘটনা। ম্যাচ গড়াপেটা হয়। এরপর এ নিয়ে তদন্ত হয়। সেই তদন্তে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স যে ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত। সেই প্রমাণও মেলে। তাতে শাস্তিও হয় মালিকপক্ষের। এ দলটি যে আর বিপিএলে অংশ নিতে পারবে না, তা বোঝাই যাচ্ছে। এর পরও দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স অংশ নিতে পারবে কিনা জানতে চাইলে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব বলেন, ‘আইনত তারা থাকতে পারছে না। তাদের বিরুদ্ধে একটা রায় এসেছে।’ সেই সঙ্গে অন্য দলগুলোকে নিয়ে বলেন, ‘আর্থিকভাবে সবাই ব্যর্থ। চুক্তি বাতিলের চিঠি দেয়া হয়েছে। তার পরও বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে খেলতে পারবে কিনা। একেকবার দল গড়তে তাদেরও অনেক খরচ হয়েছে। তারাও এর অংশ। আমরা নতুন দল নিয়েই করব। তার আগে কেউ আসলে, টাকা পরিশোধ করে আসতে হবে। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে। আমরা তো বাদ দিতে চাইনি।’ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘আগে ম্যাচ গড়াপেটা ইস্যুতে পূর্ণাঙ্গ রায় আসতে হবে। এরপর বিপিএল আবার আয়োজন করার ভাবনা করতে হবে।’ রায় এসেছে, এখন বিপিএল আয়োজন করার ভাবনাও করছে বিসিবি। তবে এবার আর আগের কোন নিয়মই বহাল থাকছে না। নতুন কাঠামোতে বিপিএল আয়োজন হবে। আগামী বছর ভারতে টি২০ বিশ্বকাপ হবে। সেই বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই বিপিএল আয়োজন করতে চায় বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল। তবে আগের কাঠামো বহাল থাকবে না। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখে, বাস্তবসম্মত আর্থিক কাঠামোতে এবার বিপিএল আয়োজন করবে বিসিবি। সব দিকে পরিবর্তন করে নতুনভাবে শুরু করার আশা করছে বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল। যেন আর কোন সমস্যা না থাকে। মল্লিক বলেছেন, ‘বিসিবির এখন কোন অফিসিয়াল টি২০ টুর্নামেন্ট নেই। ডিসেম্বরে একটা সময় আছে। আমরা দেখছি সেটা কিভাবে সেট করা যায়। দীর্ঘদিন বিপিএল বন্ধ। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে এটা একটা কাঠামোর মাঝে আনা যায়। আগে আর্থিক কাঠামোটা বাস্তবসম্মত ছিল না। যেমন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে ৪০০ কোটি টাকা দিতে হবে বিসিবিকে। এটা টিকে থাকার মতো নয়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে যায় না। আমরা এমন কাঠামো করতে চাচ্ছি যা সবার জন্য সহনীয় হয়।’ দেশী-বিদেশী ক্রিকেটারদের আর্থিক নিশ্চয়তাই আসলে মূল সমস্যা। সেই সমস্যা সমাধান নিয়েই চিন্তা করতে হচ্ছে। সদস্য সচিব যেমন জানান, বিসিবি থেকেই দেশী-বিদেশী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ৯০ ভাগ শোধ করা হয়েছে। তার পরও সঠিক দাবি থাকলে সেগুলো শোধ করবে বিসিবি। দেশী ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে এ জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে। সব মিলিয়ে ক্রিকেটারদের যে টাকা বাকি আছে তা দুই সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহা বলেন, ‘আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিপিএল শুরু করবো। ডিসেম্বরেই করব। ফরমেট পরিবর্তন হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ সব কিছু হবে বাস্তবসমম্মত।’
×