ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তিতে কালজয়ী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ

প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকায় গণসংবর্ধনা দেবে ১৪ দল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ মে ২০১৫

প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকায় গণসংবর্ধনা দেবে ১৪ দল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ধৈর্য, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা ও কালজয়ী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজধানী ঢাকায় গণসংবর্ধনা দেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। জোট নেতারা ঐতিহাসিক এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে কোন অভিনন্দন না জানানোয় কঠোর সমালোচনাও করেন। ছাত্র ইউনিয়নের ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশী হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের দাবিও জানিয়েছে ১৪ দল। মঙ্গলবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ঢাকায় বড় ধরনের অনুষ্ঠান করে এই সংবর্ধনা দেয়া হবে। দীর্ঘ ৬২ বছর পর ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত নির্ধারিত হয়েছে। ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে এটি পাস হয়েছে। ১৪ দল এতে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীসহ সেদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানায়। বৈঠকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী এবং ড. রূপা হক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁদেরও অভিনন্দন জানানো হয়। নেতারা এই তিন বাঙালী কন্যাকেও সংবর্ধনা প্রদানের প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়, সুযোগ পেলে বাঙালী এই তিন ব্রিটিশ এমপিকেও সংবর্ধনা দেবে ১৪ দল। নেতারা বলেন, এই তিনকন্যার বিজয় বাঙালীর গৌরব বাড়িয়েছে। তবে এই নির্বাচন বাংলাদেশে হলে কারচুপির অভিযোগ তোলা হতো। বৈঠকে ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালনের সময় পুলিশের হামলার কঠোর নিন্দা জানান শরিক দলের কয়েক নেতা। জবাবে মোহাম্মদ নাসিম সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হবে। আমরা ১৪ দল সকল হামলার নিন্দা জানাই। আমরা কোন হামলার পক্ষে নই। এই ঘটনাকে আমরা সমর্থন করি না। আমরা চাই একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে, সেই কমিটির সঠিক তদন্তে বিচারের মাধ্যমে দোষীরা উপযুক্ত পাবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, সিটি নির্বাচন থেকে বিএনপি কোন সুবিধা পায়নি। কারণ তারা মাঠ থেকে পালিয়েছে। তারা আসলে আহম্মকের দল। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক নয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। বৈঠকে জোটের নেতারা বলেন, স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যেমন অবদান, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সমান অবদান রয়েছে। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে বিএনপি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, দুঃখজনক ও হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়েছে। জোটের শীর্ষ নেতারা এই চুক্তি বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ বিজয় এসেছে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাননি। এর মাধ্যমে উনি (খালেদা) বাংলাদেশের জনগণকে খাটো করেছেন। বৈঠক শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই ছিটমহল সমস্যর সমাধান সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, খালেদা জিয়া এবারও পারলেন না শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে। ভারতের সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে এই চুক্তি পাস করেছে। জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ছিটমহল সমস্যার সমাধান হওয়ায় জাতিগতভাবে সকলের প্রশংসা করা উচিত ছিল। যে দলটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়নি তারা সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন না জানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ছোট করেছেন। এটা তাদের হীনম্মন্যতা। তিনি বলেন, সীমান্ত চুক্তি বিল পাস করার মাধ্যমে ভারতের সরকার উদারতার পরিচয় দিয়েছে। ভারতের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি এই চুক্তিকে সমর্থন করেছে। এটা সকল গণতান্ত্রিক শক্তির শিক্ষণীয় বিষয়। তিনি বলেন, ঐকমত্যের মানে এই নয় যে, আমার মতের সঙ্গে সকলের এক মত হতে হবে। সীমান্ত চুক্তি করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শিতা ও গোপনীয়তা বজায় রেখেছিলেন। এটা নিয়ে তিনি কী করছেন, এটা তাঁর ক্যাবিনেটের অনেকেই জানতেন না। এর একক কৃতিত্ব তিনি (শেখ হাসিনা) একা দাবি করতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এটা তাঁর উদারতা। তাই শুধু ১৪ দলের পক্ষ থেকে নয়, জাতির পক্ষ থেকে তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংবর্ধনা দেয়া হবে। রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকে ১৪ দলের নেতার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ বড়ুয়া, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, শিরিন আখতার, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, এনামুল হক, ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডাঃ অসিত বরণ রায়, রেজাউর রশীদ খান, নুরুর রহমান সেলিম, ডাঃ শাহাদাত হোসেন, মাহমুদুর রহমান বাবু, এসকে শিকদার, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মৃণাল কান্তি দাস, আফজাল হোসেন, আবদুস সাত্তার, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
×