ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোটা গ্রহণে সদস্যদের বাধ্য করতে ইইউর পরিকল্পনা

অভিবাসন নিয়ে তিক্ততা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১২ মে ২০১৫

অভিবাসন নিয়ে তিক্ততা বাড়ছে

অভিবাসন ইউরোপীয় রাজনীতির অন্যতম তিক্ততাপূর্ণ ইস্যু ও বিভেদমূলক পরিণত হতে যাচ্ছে। কারণ চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে অভিবাসীদের পুনর্বাসন করার দায়িত্ব আরও সুষমভাবে ও বাধ্যতামূলকভাবে বণ্টন করে দিতে এক নতুনত্বে কোটা ব্যবস্থা সমর্থন করবে। ইইউর নির্বাহী সংস্থা ওই সব দেশ ভূমধ্যসাগরের অপর পার থেকে ইউরোপে আগত হাজার হাজার শরণার্থীর গৃহসংস্থানের দায়িত্ব ভাগ করে নিক বলে প্রস্তাব করবে। খবর এএফপি টাইমস ও গার্ডিয়ানের। কমিশনের প্রস্তাব সদ্য পুনর্নির্বাচিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ অনেক জাতীয় নেতার মধ্যেই উত্তেজনার সৃষ্টি করবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ ক্লদ জাঙ্কার বুধবার ব্রাসেলসে ওই বাধ্যতামূলক অভিবাসী কোটা ব্যবস্থার প্রস্তাব করবেন। এর আওতায় ২৮টি রাষ্ট্র জরুরী পরিস্থিতিতে অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নেবে। বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথমে যে দেশে পৌঁছায়, সেই দেশকেই তাদের দেখাশোনায় দায়িত্ব নিতে হয়। সেই কারণে অভিবাসীদের সাগরপাড়ি দেয়ার রুটগুলোর সংলগ্ন রাষ্ট্রগুলো যেমন ইতালি, মাল্টা ও গ্রীস ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কটের অধিকাংশ আদেশই মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার সঙ্কট এবং গ্রীষ্মকালে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে আরও হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। ইউরোপের দক্ষিণ উপকূলে সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনাগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর ইইউ দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে। উত্তর আফ্রিকা থেকে সাগরপাড়ি দেয়ার বিপজ্জনক যাত্রায় গত ১৮ মাসে ৫ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। দুটি বড় উদ্যোগ নিতে চাওয়া হচ্ছে। একটি হলো ইউরোপে শরণার্থীদের ছড়িয়ে দিতে এক কোটা ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা এবং আরেকটি হলো অভিবাসী পাচারকারী নেটওয়ার্কগুলোর ওপর ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট লাভের প্রয়াস। ব্যর্থ রাষ্ট্র লিবিয়ায় আদম পাচারই একমাত্র প্রশাসন ব্যবসা। সামরিক ও রসদ সরবরাহের দিক দিয়ে শক্তি প্রয়োগ খুবই সমস্যা সঙ্কুল বলে মনে হয়। তবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে অন্তত ইউরোপে সামরিক উপায়টি সহজ পথ। ব্রাসেলসে ২৮টি সরকারের সবগুলোই চোরা পাচারকারীদের ওপর আঘাত এনে তাদের নৌযান ধ্বংস করে দেয়ার পক্ষপাতি। কিন্তু অভিবাসী কোটা চালু করা আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এ নিয়ে দ্রুত কোন ঐকমত্য হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ভূমধ্যসাগরীয় সম্মুখ সারির রাষ্ট্র ইতালি। গ্রীস ও মাল্টা স্পষ্ট করলেই শরণার্থীদের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাবের পক্ষে। জার্মানী, সুইডেন ও অস্ট্রিলিয়াও প্রস্তাবের পক্ষে। এর সহজ কারণ এই যে, এসব দেশ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে গ্রহণ করছে এবং কোন কোটা ব্যবস্থা তাদের ওপর চাপ হ্রাস করবে। নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা ক্যামেরন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতর অভিবাসনের ওপর বাধা নিষেধ আরোপে ইইউর অবশিষ্ট সদস্যদের রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি ব্রিটেনের জন্য আরও বড় ধরনের অভিবাসী কোটাতে সম্মত হবেন না, বিশেষজ্ঞ যদি তা ব্রাসেলস থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসেরও একই মত ফরাসি সরকারও অভিবাসী কোটা গ্রহণে খুবই সতর্ক হবে, কারণ মেরিন লাপেনের অভিবাসীবিরোধী ফ্রন্ট ন্যাশনাল নির্বাচনে বেশ সফলতা পেয়েছিল। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো কদাচিৎই কোন শরণার্থীকে গ্রহণ করে থাকে এবং তারা অভ্যাসও বদলাতে চায় না। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্ট্র ওরবান ইইউ কমিশনের প্রস্তাবগুলোকে পাগলামি বলে অভিহিত করেন। তিনি ব্রাসেলসের নির্দেশ অসমাপ্ত করার সংকল্পও ব্যক্ত করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইইউর পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য নয় এবং মানব পাচারকারীদের দমন করার দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, যাদের আশ্রয়ের খুবই দরকার তাদের আশ্রয় দেয়ার গর্বিত ইতিহাস যুক্তরাজ্যের রয়েছে। কিন্তু শরণার্থী পুনর্বাসনের বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা কোন সমাধান বলে আমরা মনে করি না। আমরা কোন অস্বেচ্ছাসেবক কোটা প্রবর্তনের ইইউর যে কোন প্রস্তাবের বিরোধিতা করব।
×