ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১২ মে ২০১৫

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন

আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আরও কিছুদিন বাকি। আসছে রমজান মাস। তাই পণ্যের মূল্য নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। যুক্তিগ্রাহ্য কোন কারণ না থাকলেও রমজানে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছেÑসরবরাহও স্বাভাবিক, তবুও নানা কারণ দেখিয়ে বাজারে কৃত্রিম পণ্যসঙ্কট সৃষ্টির অপচেষ্টা অতীতে লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও মুনাফাখোরদের এ ধরনের তৎপরতা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এদিকে গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯২ দিনের টানা অবরোধ-হরতালও পণ্যের বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই ক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদারকি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাই এই বিষয়ে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা শোনা যাচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রমজানের আগেই কম্পিটিশন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ করতে চায় সরকার। এই কমিশন হবে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ লক্ষ্যে নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কমিশনের কাজ হবে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং একচেটিয়া ব্যবসা রুখে দিয়ে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করা। এছাড়া এ কমিশন আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে তা হলো- মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙ্গা, মূল্যের ওঠানামার ওপর নজর রাখা, অতিরিক্ত মুনাফার শিকার হওয়া থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করা, বাজার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করা এবং ভোগ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা। আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান এবং চারজন কমিশনার নিয়ে গঠিত হবে প্রতিযোগিতা (কম্পিটিশন) কমিশন। এই কমিশন মুনাফাখোরদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করবে। কমিশনে একজন সচিব থাকবেন, যিনি সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং তার চাকরির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে। আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলেই অভিযুক্তকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিধান থাকছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রতিযোগিতা কমিশন। সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করলে আইনে ১ বছরের কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। এই কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হবে এবং একচেটিয়া বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে এ কথা সত্য যে, যে কোন আইন করা হয়ে থাকে একটি ভাল দিককে সামনে রেখে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহারের কথাও শোনা যায়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার যে আইন করতে যাচ্ছে তার যেন অপপ্রয়োগ না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরী। ভোগ্যপণ্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরদারির বাইরে থাকলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই কেউ যাতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। তার সুযোগ নিয়ে এই জনভোগান্তি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। পাইকারি বাজার মনিটরিংয়ে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। মুনাফাখোরদের দমনে কঠোর মনোভাবও থাকা উচিত। প্রয়োজনে সরকারী উদ্যোগে খোলাবাজারে অন্যান্য পণ্যও বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য, সরকার যে লক্ষ্যে কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে তা স্বাধীনভাবে কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে সফল হবে।
×