ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর যেন বোঝা না হয়

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ মে ২০১৫

কর যেন বোঝা না হয়

সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে নতুন ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে। উপার্জনক্ষম সব মানুষকে করের আওতায় আনার যে আভাস তিনি দিয়েছেন তা ইতিবাচক। তবে এ বিষয়ে কিছু চিন্তার অবকাশ রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ১১ লাখ মানুষের কর দেয়াকে তিনি লজ্জাজনক ও অপ্রত্যাশিত বলে যে মন্তব্য করেছেন, এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে আমরা সহমত প্রকাশ করছি। তবে কথা হলো, সবাই কি কর্মক্ষম কিংবা তা হলেও তাদের সবারই কি কর প্রদানের আর্থিক বাস্তবতা আছে? করদাতার সংখ্যা যদি বাড়েও পক্ষান্তরে করদাতা কতটুকু নাগরিক সুবিধা পাবেন সেটার নিশ্চয়তাই বা কী? বর্তমান বাস্তবতায় হাতেগোনা কিছু চাকরিজীবী ছাড়া সিংহভাগই সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষ। শহরে বাস করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে তারা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক বিস্তর। অন্যদিকে দেশে প্রায় ৪০ লাখ বাড়ির মালিক রয়েছে উল্লেখ করে তাদের ওপর যে কর নির্ধারণের প্রসঙ্গটি এসেছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটাও প্রশ্নাতীত নয়। সেখানে সব বাড়ির মালিকই যে ঘরভাড়া থেকে আয় করেন সেটারইবা নিশ্চয়তা কী? সব বাড়িই তো আর বাণিজ্যিক নয়। যদি বাড়িওয়ালার ওপর কর ধার্য করা হয় সেটার সরাসরি চাপ পড়তে পারে ভাড়াটিয়ার ওপর। সেখানে ওই চাকরিজীবীরাই সাধারণত থাকেন বেশি। বিষয়টা দাঁড়াবে এমনÑ চাকরিজীবী প্রকারান্তরে দু’বার করের আওতায় এলেন। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন কৃষক, সাধারণ বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনেক চাকরিজীবীর চেয়ে বেশি আয় করে থাকেন। উচ্চহারে সুদের ব্যবসা করেও অনেক নব্য মহাজনই রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি। এর সঙ্গে আছে ঋণ প্রদানের নামে স্থানীয় পর্যায়ে মাল্টিপারপাস কোম্পানি ও কিছু অর্থলোভী এনজিও। এদের স্ফীত আয়ের ওপর কতটা করারোপিত হবে তা স্পষ্ট নয়। সরকারের রাজস্ব আয় আরও বৃদ্ধি পাক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটুক এ প্রত্যাশা সবার। তবে এখানে কথা হলোÑ যে নাগরিক কর দেবেন তার নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তি কতটুকু? করের অর্থ দিয়ে হয়ত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নানা অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয় বা হবে। উপার্জনক্ষম কোন নাগরিক নিয়মমাফিক কর দিয়ে গেলেন। বয়সের স্বাভাবিক গতি ও নিয়মে একটা সময় তিনি আর কর্মক্ষম থাকবেন না; হয়ে পড়বেন জ্যেষ্ঠ নাগরিক। তখন তিনি রাষ্ট্রের কাছ থেকে এইজন্য কী সুবিধা পাবেন তার নিশ্চয়তার কোন আভাস-ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর কথায় পাওয়া যায়নি। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোয় এমনকি প্রতিবেশী ভারতেও রয়েছে এমন জ্যেষ্ঠ নাগরিক সুবিধার দৃষ্টান্ত। করের বিনিময়ে করদাতার জন্য কোন সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। রাষ্ট্রের কল্যাণে করারোপ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এটা যেন কারও ওপর বোঝা না হয়ে যায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যাবশ্যক।
×