স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতার কবলে পড়া এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে আগামী ৩০ মে। ওইদিন সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের কপি তুলে দেয়ার পর দুপুর একটায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফল প্রকাশ করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, বেলা ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের পরই শিক্ষার্থীরা ফল জানতে পারবে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ ই-মেইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফল জানিয়ে দেবে। এছাড়া ওয়েবসাইট (িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ) থেকেও ফল জানা যাবে।
জানা গেছে, এছাড়া যে কোন মোবাইল থেকেও এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এজন্য এসএসসি লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কবলে পড়া এবারের পরীক্ষা ছিল অন্য যে কোন বছরের তুলনায় আলোচিত। পরীক্ষার মাসে লাগাতার হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষ হত্যা ছিল শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে আতঙ্ক। ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে পরীক্ষা চলে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যেই প্রায় দুই মাস ধরে চলার পর শেষ হয় লিখিত পরীক্ষা। অথচ ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১০ মার্চ। একটি দিনের পরীক্ষাও পূর্ব ঘোষিত সময়সূচী অনুসারে হয়নি। দফায় দফায় হরতালে ১৬ দিনে ৩৬৮টি পরীক্ষা পরিবর্তন করতে হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষা পিছিয়ে নিতে হয়েছে ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে। দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা চলায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া জান্নাতুল ফেরদৌস বলছিলেন, বারবার পরীক্ষা পেছানোয় ভাল প্রস্তুতি নেয়া যায়নি। কোন বিষয়ের পড়া শুরু করলেই সেদিনই আবার হরতাল দেয়া হতো। আবারও পরীক্ষা পিছিয়ে যেত। শুক্র ও শনিবার টানা পরীক্ষা হওয়ায় প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত হয়েছে। সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুলের ছাত্র সোহান বলে, মনের মতো পরীক্ষা হয়নি। কোন্ দিন কোন্ বিষয় পড়ব ঠিক ছিল না। হরতালে সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। পুরন ঢাকার পোগোজ স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক অশোক দত্ত বলেন, শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে দুর্বল থাকে। এবার ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় দুই বিষয়ের পরীক্ষা পেছানো হয়। মাঝে শিক্ষার্থীরা ধর্ম বিষয়ের প্রস্তুতি নেয়। সেই পরীক্ষাও হয়নি। সব মিলিয়ে এটা একটি মানসিক চাপ। তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার দুদিন টানা দুটি পরীক্ষা দিতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা রিভিশনের সময়ও খুব কম পেয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা কাক্সিক্ষক ফলাফল বঞ্চিত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, পরীক্ষাসূচী অনুযায়ী সাধারণ গণিত পরীক্ষাও হয়নি। ইংরেজি ও গণিত ভাল ফলাফলের নিয়ামক। কিন্তু মানসিক চাপে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে খারাপ করলে সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব ফেলবে।
এবার ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সারাদেশে তিন হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাত লাখ ৩৩ হাজার ২২০ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ জন ছাত্রী। আটটি সাধারণ বোর্ডের এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, দাখিলে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া অন্য সব বিষয়ের পরীক্ষা এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে সৃজনশীল প্রশ্নে। এবারই প্রথম গণিত ও উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতিতে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: