ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটেন হতে পারে লিটল ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১১ মে ২০১৫

ব্রিটেন হতে পারে লিটল ইংল্যান্ড

ব্রিটেনের নির্বাচন দেশটিকে ‘লিটল ইংল্যান্ড’ হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে মন্তব্য করেছে। অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক ক্যারিশমা ও কৌশল ডেভিড ক্যামেরনকে আরেক মেয়াদের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসিয়েছে। এখন ইতিহাসে সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেক নাম লিটল ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অভিহিত হওয়া এড়াতে হলে তাকে ঐসব দক্ষতাকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে হবে বিশ্লেষণ ওয়াশিংটন পোস্টের। সদ্য সমাপ্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে স্থিতাবস্থা বজায় রেখে ব্রিটেনে চলমান পরিবর্তন আড়াল করেছে। এসব পরিবর্তন এ দেশকে এর আধুনিক ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় অধিকতর একঘরে করে ফেলতে উদ্যত হয়েছে। মঙ্গলবারের নির্বাচন দ্রুত পরম্পরাগত তিন বারের ভোটাভুটির মাত্র প্রথমটি হতে পারে। এসব ভোটাভুটি এ দ্বীপকে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে যাচ্ছে, জাতীয় পরিচিতির প্রাচীন ধারায় একে দু’ভাগে বিভক্ত করতে যাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত এক খ- রাষ্ট্র রেখে যাচ্ছে, আমেরিকান মিত্রদের কাছে যার মূল্য ক্রমশই কমতে থাকবে। ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক ডেভিড টোরেস বলেন, আগামী পাঁচ বছর দুটি ইউনিয়ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য নিয়ে এক সঙ্গে দুই বিতর্ক চলবে। ব্রিটেন এক থাকছে কিনা এবং এটি ইউরোপে থাকছে কিনা এ দুটি প্রশ্ন গভীরভাবে পরস্পর জড়িত। একটির ফলাফল অন্যটির ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হয়। স্কটল্যান্ডে ইউরোপপন্থী মনোভাব লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি ব্রিটেন ইউরোপ ত্যাগ করে, তা হলে স্কটল্যান্ডে নব ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতীয়তাবাদীদের স্বাধীনতার জন্য আরেকবার চেষ্টা চালানোর সম্ভাবনা তৎক্ষণাৎ জাগ্রত হবে- যদিও গত বছরের গণভোটে স্বাধীনতা লাভের ব্যর্থ চেষ্টা হলে ‘এক প্রজন্মের জন্য’ বিষয়টি মীমাংসিত হয়েছে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এ কারণেই ইউরোপের প্রশ্নটি প্রথমে মীমাংসা করা হবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যামেরনের পুনর্নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক আবেগময় ও ঝুঁকিবহুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ক্যামেরন ওই বিষয়ে ২০১৭ সালের শেষনাগাদ এক গণভোট অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ গণভোটের তারিখ আরও অনেক এগিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন, যাতে পরবর্তী আড়াই বছর ব্রিটেনের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা বিরাজ না করে। জনমত জরিপে দেখা যায়, যদি আজই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, তা হলে ব্রিটেন ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষেই রায় দেবে। কিন্তু ইইউ ত্যাগের পক্ষের লোকজন উজ্জীবিত হয়ে গণভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের বিশ্বাস, ব্রাসেলসের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থেকে দেশ এর বিষয়াদি আরও ভালভাবে পরিচালনা করতে পারবে। ইইউ ত্যাগের বিরোধীরা বলছেন, এটি বিপর্যয়কর হবে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে যাবে এবং ইউরোপে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রে ব্রিটেনের মতামতের গুরুত্ব ক্ষীণ হয়ে পড়বে। ক্যামেরন ঐ ইস্যুতে মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি চান দেশটি ইউরোপের মধ্যে থাকুক, কিন্তু তা কেবল যদি তিনি ইইউ চার্টারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেন। তার ইউরোপীয় মিত্ররা এরূপ পরিবর্তন মেনে নিতে অনিচ্ছুক বলে বারবার জানিয়ে এসেছে। ঐ প্রশ্নে কেবল দেশের ভেতরই নয়, ক্যামেরনের সরকারের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিতে পারে। তার কোন কোন শীর্ষস্থানীয় সহকারী ইইউ ত্যাগের জন্য চাপ দিতে পারেন। ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বিদায় স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিকে (এসএনপি) স্বাধীনতা প্রশ্নে আরেক বার গণভোট চাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। গত বছরের গণভোটে দলটি ১০ পয়েন্ট ব্যবধানে হেরেছিল। ক্যামেরন নিজে নির্বাচনী প্রচার অভিযানে ইংলিশ জাতীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি স্কটিশ জাতীয়তাবাদীদের সমর্থনপুষ্ট এক লেবার সরকার গঠিত হওয়ার বিপদ সম্পর্কে ইংলিশ ভোটারদের বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এ কৌশল এক চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে তাকে সহায়তা করে থাকতে পারে কিন্তু ইংলিশ আবেগ অনুভূতিকে উস্কে দেয়া তার ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস নেতা নিক ক্লেগ সতর্ক করে দেন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড উভয় স্থানে জাতীয়তাবাদের উত্থান বিশ্বে ব্রিটেনের অবস্থান এবং যুক্তরাজ্যের অব্যাহত অস্তিত্বের প্রতি হুমকির সৃষ্টি করছে।
×