ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পিকেএসএফের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

অনেকে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক করতে চেয়েছিলেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ মে ২০১৫

অনেকে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক করতে চেয়েছিলেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, একজনের উপর নির্ভর করে না, অনেকে ক্ষুদ্র ঋণকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করতে চেয়েছিল। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকার সেটি থেকে ক্ষুদ্র ঋণকে বের করে আনে। পিকেএসএফ এর ২৫ বছর পূর্তির সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর আশির দশকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নতুন নতুন প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনার শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। যার ফলশ্রুতিতেই প্রতিষ্ঠা পায় পিকেএসএফ। অনেক দাতা সংস্থা অর্থ দিতে চেয়েছিল, সেটি সরকার না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নিজেদের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, এমপি এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা বহু পুরানো। এদেশে ১৯০৪ সালে ক্ষুদ্র ঋণ চালু হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। দেশের মানুষ দারিদ্র্যের শিকার। তাই ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োজন। তবে আগামী দশকে হয়ত গরিব কেউ থাকবে না। তখন আরও বড় পরিসরে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। দেশে প্রায় ২০ হাজার নিবন্ধিত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান খুবই মূল্যবান। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পিকেএসএফ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো মৌলিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। পিকেএসএফ তার নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, গত ছয় বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানোর জন্য শিল্পায়নের বিকাশ দরকার। এজন্য বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে সরকার। আর এক্ষেত্রে পিকেএসএফসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ভাল অবস্থানে চলে এসেছে। এর পেছনে অন্যতম সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে পিকেএসএফ। মঙ্গা দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা খাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এ প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানের পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সংস্থাটির নেয়া বিভিন্ন কর্মকা-ের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্রীড়া ও মননশীলতার বিকাশে বিভিন্ন উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে পিকেএসএফ। তিনি বলেন, শুধু ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ নয়; মানুষকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন সাজাতে হবে। মানুষকে সক্ষম করতে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। টেকসই উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ ছাড়াও গঠনমূলক মানবিক উন্নয়ন পিকেএসএফ কাজ করে যাচ্ছে। ১৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদে মানুষের জীবনে বহুমাত্রিকতা আনয়নে পিকেএসএফ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের দারিদ্র্যতা বহুমাত্রিক। তাই বহুমাত্রিক কর্মসূচীর মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। কারণ উৎপাদনশীলতা না বাড়লে সঞ্চয় বাড়বে না। সুষ্ঠু সমাজ গঠনে বাল্যবিবাহ রোধ, নারী শিক্ষার উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি সংস্কৃতি-ক্রীড়া ও মননশীলতার বিকাশ ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছে পিকেএসএফ। তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে ১৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ জন করে ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে আরও বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানান। পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম বলেন, পিকেএসএফের ২৫ বছরের পথ চলার পেছনে সহযোগী সংস্থাগুলোর ভূমিকা অনেক বেশি। ২৫ বছরে এটি সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে পিকেএসএফ। শুধু তাই নয় দরিদ্র মানুষের জীবনে গতিশীলতা এনেছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্ভাবনীমূলক নানা কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। দাতা সংস্থা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ২৫টি প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একটি প্রকল্প বিশ^ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ বিভিন্ন খাতে অবদান রাখায় গুণীজনদের সম্মাননা দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১১ মে শুরু হয় বর্ষব্যাপী এ অনুষ্ঠান মালার। রজতজয়ন্তী উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নবেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে, উন্নয়ন মেলা ২০১৪ এর আয়োজন করা হয়েছিল। এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ‘রজতজয়ন্তী উদ্যাপন’-এর অংশ হিসেবে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে সম্মেলন, কর্মশালা, আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্বোধনীর ঠিক এক বছর পর সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষব্যাপী রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়। সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে সরকার পিকেএসএফ গঠন করে। বর্তমানে এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৭৩টি।
×