ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের ৩০ নেতাকর্মী আহত

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১১ মে ২০১৫

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের ৩০ নেতাকর্মী আহত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী উপলক্ষে রবিবার ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করা হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন পুুলিশ ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে পাল্টা পুলিশ লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালনকালে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের আন্দোলনকারীদের এই সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মী ৩০ জন ও পুলিশের ৬ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘেরাও কর্মসূচী থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। কর্মসূচী পালনকালে সংঘর্ষ হলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলকারী ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। রবিবার দুপুর প্রায় পৌনে একটায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিন্টু রোডের ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে আসে ছাত্র ইউনিয়নের শতাধিক নেতাকর্মী। রাস্তায় তাদের একাধিক স্থানে বাধা দেয় পুলিশ। ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে শাহবাগ দিয়ে ডিএমপির সদর দফতরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পুলিশের কয়েকদফা বাধা পেরিয়ে মিছিলকারীরা কার্জন হল, হাইকোর্ট মোড় পেরিয়ে মৎস্য ভবন হয়ে মিন্টো রোডের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ডিএমপি কার্যালয়ের কাছাকাছি শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণি পর্যন্ত পৌঁছে পুলিশের সর্বাত্মক বাধায় সড়কে বসে পড়ে মিছিলকারীরা। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য ও সেøাগান দিতে থাকে। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান তারেক বক্তব্যে বলেন, এখানে যত সংখ্যক পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছে, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে তারা থাকলে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটত না। তারা বর্ষবরণে নারী নির্যাতনকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সেøাগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের মাইক কেড়ে নেয় পুলিশ। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। আচমকা পুলিশ তাদের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা, বুটের লাথি, বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছোড়ার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণ থেকে বাদ যায়নি নারীরাও। পুলিশী পিটুনি খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে নেতাকর্মীরা। তাতে রক্ষা হয়নি নিরীহ আন্দোলনকারীদের। নিষ্ঠুর পুলিশ সদস্যরা তাদের উপর পায়ের বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এভাবে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সেখানে ভীতিকর পরিবিশের সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তারা বাধা অতিক্রম করে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে আসে। ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে প্রথমে তাদের ব্যাপক বাগবিত-া শুরু হয়। বাগবিত-ার এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি শুরু করে তারা। পুুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি করে তারা ডিএমপি কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। এই পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে পাল্টা ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে পুলিশও পাল্টা তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারিক গণমাধ্যমকে বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালন উপলক্ষে তারা আসার সময়ে পুলিশ দোয়েল চত্বরে, হাইকোর্টেও উল্টো পাশে তাদের দুই দফা বাধা দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সার্কিট হাউস অফিসার্স ক্লাবের এর উল্টো পাশে আশিয়ান সরকারী অফিসার্স কোয়ার্টার এলাকায় লাঠিপেটা করে নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। এতে তিনি নিজে এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি লিটন নন্দী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তন্ময় ধর, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সুমন সেন গুপ্তসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি তারিক। রমনা থানার ওসি মসিউর রহমান জানিয়েছেন, মিছিলকারীদের ঢিলে ছয়জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে হচ্ছেন, এসআই কামরুল, নায়েক জাহিদ, শাহীন, কাজী আরিফ, আলী হোসেন, আরাফাত। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলকারীরা অবরোধ করে যানজট সৃষ্টি করেছিল। পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। দাবিদাওয়া থাকলে তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা পুলিশের কথায় না সরে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের সরিয়ে দেয়। কোন হামলা হয়নি বলে জানান পুলিশের উপ-কমিশনার। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে গত পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় একদল যুবক নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পর থেকেই দোষীদের গ্রেফতার ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করাতে প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্র ইউনিয়ন ও নারী অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। পুলিশ ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারেনি। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ কার্যালয় ঘেরাওয়ের এই কর্মসূচী দেয় ছাত্র ইউনিয়ন। মঙ্গলবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট কর্মসূচী ॥ মঙ্গলবার সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে এই কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। রবিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। আটক করা হয় ছাত্র ইউনিয়নের পাঁচ নেতাকর্মীকে। জাসদ-বাসদের বিবৃতি ॥ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এক যুক্ত বিবৃতিতে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পুলিশের হামলায় আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের দেখতে যান সিপিবি-বাসদ নেতৃবৃন্দ। হামলার নিন্দা বিএনপির ॥ বিডিনিউজ জানায়, যৌন নিপীড়কদের গ্রেফতার দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের পুলিশের লাঠিপেটার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। দলটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিবাদ করার অধিকার থাকলেও দেশে আজ কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা আজ একটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের মিছিলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা দেখেছি, যা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। দলীয় প্যাডে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, একটি স্বাধীন সভ্য দেশে নারী লাঞ্ছনার মতো ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক, যা বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ক্ষেত্রে অহরহ ঘটছে। অপর এক বিবৃতিতে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচীতে পুলিশি ‘তাণ্ডবের’ নিন্দা জানিয়েছেন।
×