ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাদাতের অভাব বোঝালেন শহীদ

আরেকজন পেসারের হাহাকার...

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৯ মে ২০১৫

আরেকজন পেসারের হাহাকার...

মোঃ মামুন রশীদ ॥ হয়ত ভাগ্যদেবী এভাবেই মিরপুর টেস্টের ভাগ্যটা লিখে রেখেছিলেন। সে কারণেই খুলনায় প্রথম টেস্টেও চতুর্থ দিনে তিনি ইনজুরি দিলেন বর্তমানে বাংলাদেশ দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য পেসার রুবেল হোসেনকে। একাদশে তাই শাহাদাত হোসেন রাজিব। কিন্তু ডানহাতি এ পেসারও মাত্র দুই বল করেই ইনজুরির কাছে হার মানলেন। দশজনে পরিণত বাংলাদেশ দল। দুই পেসার নিয়েই সফরকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নেমেছিল মুশফিকুর রহীমের দল। কিন্তু মিরপুরের উইকেটে থাকা ঘাস এবং হয়ে যাওয়া তিন ইনিংস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল আরেকজন স্বীকৃত পেসারের বড়ই অভাব টের পেয়েছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে আগুন ঝরানো একমাত্র পেসার মোহাম্মদ শহীদ দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই পাক শিবিরে কাঁপন ধরিয়েছেন। উভয় ইনিংসে উদীয়মান এ পেসার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে দুটি করে উইকেট শিকার করেন। তাঁকে ভালভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন অনিয়মিত পেসার হিসেবে ব্যাটিং অলরাউন্ডার সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ ইনিংসে ভীতি সঞ্চার করেছেন পাক পেসাররাও। ওয়াহাব রিয়াজ আর জুনাইদ খান তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এখান থেকেই পরিষ্কার হয়েছে একজন পেসারের অভাবে পাক ব্যাটসম্যানরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই মোকাবেলা করেছেন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের চার নম্বর উইকেটটা বরাবরই রহস্যঘেরা। এই টেস্ট শুরুর আগেই দু’দলের অধিনায়ক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন একটা ফলাফল হবে। স্পোর্টিং উইকেট হলেও ঠিক লাইন-লেন্থ আর গতি বজায় রেখে বোলিং করতে পারলে পেসাররা যথেষ্ট সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। প্রথম দিনশেষে ১৪৮ রান করা ইউনুস খানই এমন কথা বলেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু এদিন নবাগত শহীদ দারুণ যন্ত্রণা দিয়েছেন তাঁর পেস বোলিং দিয়ে পাক শিবিরকে। পাকিস্তানের পুরো প্রথম ইনিংস জুড়েই তিনি ত্রাসোদ্দীপক ছিলেন। শাহাদাতের অভাবে তাঁর ওপর বেশ চাপ গেছে। দীর্ঘক্ষণ বোলিং করার চাপটা নিতে হয়েছে। প্রথম ইনিংসে তিনি ৩১ ওভার বোলিং করেছেন একাই। নয়জন বোলার ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এর মধ্যে শহীদ দ্বিতীয় সর্বাধিক ওভার বোলিং করেছেন। দুর্দান্ত লাইন-লেন্থের কারণে সবচেয়ে বেশি সমীহও তিনি আদায় করে নিয়েছেন পাক ব্যাটসম্যানদের কাছে। সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ হাফিজকে আর দিনের শেষভাবে সেঞ্চুরিয়ান ইউনুসকে। সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার হিসেবে মাত্র ২.৩২ রেটে ৭২ রান দিয়েছেন সর্বাধিক ১০টি মেডেন ওভার করে। এ কারণেই দিনশেষে শহীদ বলেন, ‘শাহাদাত ভাই থাকলে খুব ভাল হতো। উইকেটে যথেষ্ট ঘাস আছে, তাঁকে মিস করছি।’ সত্যি উপযুক্ত সঙ্গী হতে পারতেন শহীদের জন্য শাহাদাত। গতিময় বোলার হিসেবে দুজন দুই প্রান্তে বোলিং চালিয়ে গেলে যে কোন একজন আরও বেশি সফলতা পেতেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেটা বোঝা গেছে বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর পর। শুরু থেকেই বাংলাদেশের ইনিংস হামলে পড়েছেন জুনাইদ। এক পেসারের দলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন পেসার নিয়ে নেমেছিল পাকরা। সেটাতে সফল হয়েছে খুব ভালভাবেই। জুনাইদ দুটি আর ওয়াহাব তিনটি উইকেট দখল করেছেন। দ্বিতীয় দিন বিকেলে জুনাইদ যে ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলেন তৃতীয় দিনের শুরুতে একই রকম ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলেন ওয়াহাব। সৌম্য ও শুভাগতকে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে নিজেকে বিধ্বংসী ভূমিকায় অবতীর্ণ করেন। আগের দিনই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পাক পেসারদের সাফল্যে এবার চলতি সিরিজে সবচেয়ে বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়েছে বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকরা আবার ব্যাটিং নামার পর আবারও ভয়াল রূপে তাদের ওপর হামলে পড়লেন শহীদ। মোহাম্মদ হাফিজ আর সামি আসলামের উইকেট দ্রুতই তুলে নিয়ে চাপে ফেললেন পাকিস্তানকে। এমনকি অনিয়মিত পেসার সৌম্যও সাফল্য পেলেন। আরেকবার অনুভূত হলো- ইস আরেকজন পেসার যদি থাকতেন? পুরো টেস্ট ম্যাচটাই বাংলাদেশ দল বোলিং করল একজন মাত্র স্বীকৃত পেসার নিয়ে। আরেকজন থাকলে মুশফিকের বোলিং অপশনও বেশি থাকত আর পেসাররা যেভাবে সফলতা পেয়েছেন সেটাও পাকিস্তান দলকে আরেকটু চাপে রাখতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশ দলের। আরেকজন পেসারের অভাবে পাক ব্যাটসম্যানরা চাপমুক্ত থেকেই ব্যাট চালাতে পেরেছেন।
×