ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দরপতন আর শ্রমিক সঙ্কটে দিশেহারা

ধানের বাম্পার ফলনেও ॥ হাসি নেই কৃষকের মুখে

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৯ মে ২০১৫

ধানের বাম্পার ফলনেও ॥ হাসি নেই কৃষকের মুখে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারদর পতনে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছে না। অপরদিকে শ্রমিক সঙ্কটে মাঠের ধান কেটে ঘরে তোলা যাচ্ছে না। এসব কারণে কৃষকের দিশেহারা অবস্থা। স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানোÑ যশোর ॥ ধানের বাম্পার ফলন হলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটেÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধানের ভাল ফলন হলেও যশোরে কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ চাষীরা কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না। যশোরে এখন কৃষকের আঙিনায় নতুন বোরো ধানে ভরে উঠছে। বাড়ির উঠানে রয়েছে কাটা ধানের মজুদ। কিন্তু হতাশ তারা। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ফলানো ধানের বাজারদর নেই। যশোরাঞ্চলে ধানের বড় মোকাম শহরতলীর পুলেরহাট বাজার। নসিমন ও ভ্যানবোঝাই করে মাহিদিয়া, রূপদিয়া, সাড়াপোল, পতেঙ্গালী, মালঞ্চি, চাঁচড়া থেকে কৃষকরা এ মোকামে ধান বিক্রির জন্য আসছেন। শুক্রবার মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৮০ থেকে ৫৪০ টাকা। চিকন ৬৮০ থেকে ৭৪০ টাকা। ধানের এ বাজারমূল্যে চাষীরা হতাশ। পুলেরহাট মোকামে আসা পতেঙ্গালী গ্রামের চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন। ৩৬ মণ মিনিকেট (জিরে) ধান পেয়েছেন। লিজের টাকাসহ চাষে খরচ ৩০ হাজার টাকা। আর আড়তে ৭৪০ টাকা দরে বিক্রি করে পেলেন ২৬ হাজার ৬৪০ টাকা। মাহিদিয়ার কৃষক আহমদ গাজী জানান, তিন বিঘা জমিতে তিনি স্বর্ণলতা চাষ করেছিলেন। বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছেন ১৮ মণ। এ ধানের বাজারমূল্য প্রতি মণ ৭১০ টাকা। এবার ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে বেশি। কিন্তু মূল্য পাচ্ছেন না। চাষী আব্দুল আজিজ, আইয়ুব গাজীসহ আরও অনেকে জানান, এবার ধান উৎপাদন করে প্রতি বিঘায় তাদের ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। মাহিদিয়া মোকামের চিত্র একই রকম। হতাশা ব্যক্ত করেন এ মোকামে ধান বিক্রি করতে আসা চাষীরা। কথা হয় ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে তিন বিঘায় এবার পাঞ্জাব মিনিকেট চাষ করেছিলেন। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। বিঘায় ফলন হয়েছে ১৬ মণ। বাজারে বিক্রি করে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকাও উঠছে না। টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবকিছু অনুকূলে থাকায় এবারও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ধানের ফলন ভাল হলেও খুশি হতে পারছেন না কৃষক। কারণ বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ মাত্র ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের পরিবর্তে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে হতাশা। এভাবে চলতে থাকলে ধানের আবাদ আস্তে আস্তে কমে যাবে বলে জানান কৃষকরা। দিনাজপুর ॥ ‘দেশের খাদ্য ভা-ার’ হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর জেলায় এবার ধান কাটা মাড়াই কাজের শ্রমিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আবহাওয়া খারাপ ও ঘনঘন বৃষ্টির কারণে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক। পুরুষ শ্রমিকের অবর্তমানে অতিরিক্ত বেতন লাভের আশায় ধান কাটা কাজে নারী শ্রমিকের উপস্থিতি ও কদরও বেশ বেড়েছে। চলতি বছরের আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় দিনাজপুর জেলায় ধানের চাষাবাদ খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। বাজারে সদ্য ওঠা ইরি ধানের বর্তমান বাজারমূল্যে কম থাকার কারণে ধান কাটা মাড়াই কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বক্তব্যÑ প্রাপ্ত মজুরিতে তাদের চলছে না। এলাকার শ্রমিকরা ধান কাটা মাড়াই কাজ বাদ দিয়ে অধিক বেতনের আশায় দলে দলে ছুটছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে ধান কাটা মাড়াই কাজের জন্য শ্রমিক সঙ্কট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে দিনাজপুরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন কৃষিশ্রমিক চলতি মৌসুমে সারাদিন ধান কাটা মাড়াই কাজ করে যে পরিমাণের পারিশ্রমিক হিসেবে ধান পেয়ে থাকেন, তার দ্বিগুণ বেতন পান রবিশস্যর জমিতে কাজ করে। এদিকে কাটার উপযুক্ত হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান প্রয়োজনীয় লোকজনের অভাবে মাঠে ফেলে রেখে চরম অশান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ধানচাষীরা। মাঠের ফসল ঘরে তোলার চিন্তায় চাষীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এদিকে পুরুষশ্রমিকের সঙ্কট থাকায় কিছুটা বেশি উপার্জনের আশায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন নারীশ্রমিকরা। সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের বৈরাগীডিঘি গ্রামের মাঠে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত নারীশ্রমিক বাতাসী মুরমু, নারায়ণী, খোদেজা বানু জানান, প্রতিদিন ২-৩শ’ টাকা করে তারা উপর্জন করছেন। গফরগাঁও ॥ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা সকলেই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন; কারও কোন দম নেয়ার সময় নেই। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে মেতে উঠেছেন তারা। কৃষকদের এই বোরো ধান কাটার উৎসব আর চোখ জুড়ানো পাকা ফসলের মাঠ প্রকৃতিতে এনে দিয়েছে এক অনন্য সজীবতা। অনুকূল আবহাওয়া আর সময়মতো সার এবং সেচের সুবিধা পাওয়ায় এবার প্রতিটি ইউনিয়নে বা এলাকাতেই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলন নিয়ে কৃষকরা দারুণ খুশি হলেও দাম নিয়ে আছেন দুচিন্তায়।
×