ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোক্তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

ভেজাল খাদ্য ও নকল পণ্যে সয়লাব ঈশ্বরদী

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৯ মে ২০১৫

ভেজাল খাদ্য ও নকল পণ্যে সয়লাব ঈশ্বরদী

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বেকারিতে তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের বেকারি খাদ্য পণ্য। বিএসটিআইসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রহস্যজনক নীরব ভূমিকার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় নিম্নমানের বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, চানাচুর ও মিষ্টি জাতীয় খাবার ভোক্তাদের হাতে প্রকাশ্যে তুলে দিচ্ছে। এতে ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা অল্পদিনেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে এসব ভেজাল রোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব খাদ্য পণ্য খেয়ে ক্রেতারা লিভার ও কিডনির সমস্যাসহ ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ভুক্তভোগী ক্রেতা চিকিৎসকসহ সচেতন মহলের দেয়া অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, ঈশ্বরদীর বিভিন্ন অঞ্চলে নকল খাদ্য পণ্য তৈরি হয়েছে। এসব কারখানায় প্রতিদিন কেক, বিস্কুট, পাউরুটি তৈরি হচ্ছে কাপড়ের রং ও কৃত্রিম সুগন্ধ মিশিয়ে। এছাড়া হাইড্রোজ ও নিষিদ্ধ ঘন চিনিও মেশানো হয়। মিষ্টিতে ব্যবহৃত হয় স্যাকারিন, ময়দা, চালের গুঁড়া ও টিস্যু পেপার। স্যাকারিন, বিভিন্ন রং ও পচা ডিম দিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্রিমরোল। বাসি পাউরুটি পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে টোস্ট বিস্কুট বানানো হচ্ছে। চানাচুর ও বেকারি সামগ্রী মচমচে ও সুস্বাদু করতে পোড়া মবিল দিয়ে ভাজা হচ্ছে। এসব বেকারির অধিকাংশই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) লোগো ব্যবহার করছে। আদৌ তাদের কোন লাইসেন্স নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করছে বেকারিসহ এসব খাদ্য পণ্য। বিএসটিআই’র আইন অনুযায়ী বেকারির ছাদ, মেঝে, জানালা, দরজা ও অন্যান্য অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথা থাকলেও নিয়ম মানার প্রবণতা নেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের। পণ্যের মোড়কে কী কী উপাদান আছে তা এবং উৎপাদন ও মেয়াদ শেষের তারিখ উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও সেটা মানা হচ্ছে না। সূত্র মতে, বেকারি পণ্য বিক্রি করার পর পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও সেগুলো ফেরত নিয়ে পুনরায় টোস্ট কিংবা বেকারি পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে ঈশ্বরদীতে নকল পণ্য বাজারে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন বেশি লাভের প্রলোভনে নকল পণ্য তুলে দিচ্ছে দোকানিদের হাতে। ফলে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা না বুঝে পণ্য কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। স্কুল শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানান, পণ্যের একই রকম প্যাকেট হওয়ায় ভোক্তাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। অনেক ক্রেতা পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। বাজারে ডিটারজেন্ট পাউডার, সাবান, শ্যাম্পু, চিপস্, বিভিন্ন প্রসাধনীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নকলে ভরে গেছে। এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দোকানি বলেন, আমরা ভাল কোম্পানির মাল বিক্রি করে যা টাকা পাই তার চেয়ে একই রকম দেখতে অন্য কোম্পানির জিনিসপত্র বিক্রি করে দিগুণ লাভ পাই। নতুন কোম্পানির সেলসম্যানরা আমাদের বিক্রির ওপর বিভিন্ন পুরস্কার দিয়ে থাকেন। তাই আমাদের মতো দোকানিরা নতুন কোম্পানির জিনিসপত্র বেশি বিক্রি করে। এ বিষয়ে ঈশ্বরদীর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. আমীন আহমেদ খান জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি নিম্নমানের বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, চানাচুর ও মিষ্টি জাতীয় খাবার ভোক্তার হতে তুলে দিচ্ছেন। যা খেয়ে লিভার ও কিডনিতে সমস্যাসহ ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ঈশ্বরদীর সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুকুল কুমার মৈত্র জানান, ভেজাল বেকারি পণ্য ও নকল পণ্যের দৌরাত্ম্য কমাতে অতিদ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
×