ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির সিনিয়র নেতারা চরম হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৯ মে ২০১৫

বিএনপির সিনিয়র নেতারা চরম হতাশ

শরীফুল ইসলাম ॥ হতাশায় ভারাক্রান্ত বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন চরম দুঃসময় অতিক্রম করছেন। কোন সিনিয়র নেতাই ভাল নেই। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকার পাশাপাশি আন্দোলনে সফল হতে না পারাই তাদের হতাশার মূল কারণ। এ ছাড়া সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ, কেউ কারাবন্দী আবার কেউ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভুগছেন। তাদের এ দুরবস্থার কারণেই দলটি এখন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের এ দুরবস্থার কারণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সূত্র মতে, বিএনপির সিনিয়র নেতারা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এখন রাজনীতিতেও তেমন সক্রিয় হতে পারছেন না। এ কারণে দলীয় কর্মকা-ও স্থবির হয়ে পড়েছে। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দল প্রতিষ্ঠার পর এমন দুঃসময় কখনও অতিক্রম করেনি বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকার কারণে হতাশায় ভারাক্রান্ত হয়ে বয়সের ভারে ন্যুব্জ, রোগাক্রান্ত ও মামলায় আক্রান্ত হয়ে দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই এখন আস্তে আস্তে রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে নিজেদের আড়াল করে রাখার কৌশল নিয়েছেন। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথাও ভাবছেন। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা, টানা ৯২ দিন বাসা থেকে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের পরও সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন চরম হতাশায় ভুগছেন বলে তার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রয়েছে দলের এমন একটি সূত্র জানিয়েছেন। এ ছাড়া লন্ডনে চিকিৎসাধীন বড় ছেলে তারেক রহমান দেশে ফিরে দলের হাল ধরতে না পারা এবং দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকা একের পর এক মামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া এখন চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পায়ের ব্যথা ও শ্বাসকষ্টসহ ক’টি জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি আত্মীয়স্বজন কিংবা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে খোলা মনে কথাও বলতে পারেন না বলে জানা গেছে। হতাশার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় তিনি নিরিবিলি বাসায় বিশ্রাম নিয়ে কাটান বলে জানা যায়। খালেদা জিয়ার পর বিএনপিতে বর্তমানে সবচেয়ে সিনিয়র নেতা হলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি। তিনি এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অসুস্থতার কারণে নিয়মিত দলীয় কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। ধানম-ির বাসায় দিনের অধিকাংশ সময় শুয়ে-বসে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কাটান। মাঝেমধ্যেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। দলের দুরবস্থা দেখে তিনি এখন হতাশ বলে জানা গেছে। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুদকের মামলায় জড়িয়ে বর্তমানে কারাগারে আনছেন। অসুস্থতার কারণে মাঝেমধ্যে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে হয়। হাতেগোনা ক’জন আত্মীয়স্বজন ছাড়া তেমন কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এ ছাড়া দলের দুরবস্থা দেখে এবং কারাগার থেকে কবে মুক্তি পাবেন এ কথা ভেবে তিনি এখন মানসিক কষ্টে ভুগছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অনেক দিন দলে নিষ্ক্রিয় থাকার পর ৩ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে রাজনীতিতে আবার সরব হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কিন্তু এ নির্বাচনে দলের জন্য সুবিধা আদায় করতে না পেরে তিনি এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গুলশানের বাড়ি নিয়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার এখন পর্যন্ত সুরাহা না হওয়ার বিষয়টিও তার জন্য পীড়াদায়ক বলে জানা গেছে। আর এ কারণেই ইচ্ছে থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে পারছেন না তিনি। তবে দলের ভেতরেও তাকে নিয়ে সমালোচনা আছে। দলের কোন কোন নেতাকর্মী মনে করেন গুলশানের বাড়ি রক্ষা করতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সরকারের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেন। বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলীয় কোন কর্মসূচীতে অংশ নেন না। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সারোয়ারী রহমানও এখন দলীয় কর্মকা-ে তেমন অংশ নেন না। জানা যায় হতাশার কারণেই তিনি এখন দলবিমুখ হয়ে পড়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মোটামুটি সক্রিয় বলা যায় লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানকে। বিএনপির যেসব কর্মসূচী পালিত হয় তার অধিকাংশতেই তিনি অংশ নেন। তবে টানা ৩ মাসের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়া এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জনের পর তিনিও এখন কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
×