ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৯ মে ২০১৫

রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর যাপিত জীবনে সর্বক্ষণই যেন বিরাজমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চেতনে কিংবা অবচেতনে আপন সৃষ্টি ও দর্শনে তিনি ঠাঁই করে নিয়েছেন বাঙালীর মননে। অনুপ্রেরণার সঙ্গী হয়েছেন বাঙালীর সঙ্কটে, সংগ্রামে, আনন্দ ও ভালবাসায়। আর সেই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে শুক্রবার প্রাণের প্রগাঢ় উচ্ছ্বাসে উদ্্যাপিত হলো বিশ্বকবির ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী। হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করা হয় কবিগুরুকে। দিনভর নানা আনুষ্ঠানিকতায় বাঙালীর চিন্তা-মননের সঙ্গী এবং শিল্প-সংস্কৃতির অগ্রদূত কবিকে বন্দনা করা হয়। আর এই কবি বন্দনার পাশাপাশি ছিল তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে হিংসা-বিদ্বেষ দূরে ঠেলে মানবতার বাণী ধারণ করে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলার প্রত্যয় গ্রহণ। রাজধানীতে ছিল সরকারী পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনের বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজন। কবির জন্মদিনে দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সরকারী-বেসরকারী চ্যানেলগুলো দিনভর প্রচার করেছে রবীন্দ্র সৃষ্টিস্নাত নানা অনুষ্ঠানমালা। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রকমারি আয়োজনে বর্ণিল রূপ ধারণ করেছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। নৃত্য, গীত, পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, নাটক, মেলাসহ বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে একইসঙ্গে কবি বন্দনা ও স্মরণের আয়োজন করা হয়। আর এসব আয়োজনে গানের সুরে, কবিতার ছন্দে কিংবা নৃত্যের মুদ্রায় কিংবা বক্তার কথায় নির্মল আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি প্রাণের কবির প্রতি হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানিয়েছেন উপস্থিত রবীন্দ্র অনুরাগী দর্শক-শ্রোতারা। ছায়ানটের রবীন্দ্র-উৎসব ॥ শুক্রবার বৈশাখী সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ছায়ানটে সূচনা দুই দিনের রবীন্দ্র উৎসব। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে উৎসব উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিনের আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চমৎকার একটি উপস্থাপনা। এই উপস্থাপনা শেষে পরিবেশিত হয় অতিথি এবং ছায়ানটের শিল্পীদের একক গান ও আবৃত্তি ও পাঠ। অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য যোগ করে সুরের ধারার শিল্পীদের পরিবেশিত রবীন্দ্র-নাটকের গান। আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানও শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। এদিন পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রনাথের গান থেকে কবিতা, কবিতা থেকে গান নিয়ে সন্জীদা খাতুনের গ্রন্থনা ‘রূপে রূপে অপরূপ’। থাকবে সুরতীর্থ-এর মূল গান ও তা থেকে ভাঙা রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপস্থাপন, নৃত্যদল জাগো আর্ট সেন্টার ও ভাবনার পরিবেশনা। পাশাপাশি থাকবে অতিথি এবং ছায়ানট-এর শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি ও পাঠ। জাদুঘরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বন্যার সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ বাঙালী জাতি একুশ শতকে প্রবেশ করেছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। রবীন্দ্রনাথ একাই শতহস্তে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলা সঙ্গীতের ভুবনও শতাধিক বছর যাবত রবীন্দ্র সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় আপ্লুত হয়ে আছে। আর সেই রবীন্দ্র সুরের আবাহনে শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রোতাদের একইসঙ্গে মুগ্ধ ও সিক্ত করলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। শিল্পীর অনবদ্য কণ্ঠে কারুকার্যে যেন স্নিগ্ধ রূপ পায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় সুরতরঙ্গে মিলনায়তন ভর্তি শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখেন শিল্পী। সঙ্গীতসন্ধ্যায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। রবীন্দ্রনাথের কবিতার আশ্রয়ে বক্তৃতা পর্ব সম্পন্ন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। পাঠ করেন সোনার তরী কবিতাখানি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমিরিটাস অধ্যাপক আলমগীর মোঃ সিরাজউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। শিল্পকলার দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু ॥ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা, একক সঙ্গীত, সমবেত সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য, আবৃত্তি ও নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে দুই দিনের এ আয়োজন। প্রথম দিনের আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর ড. নূরুল আনোয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে গান শোনান অনিমা রায়, নার্গিস চৌধুরী, সাইদা হোসেন পাপড়ী, শামা রহমান, সাজেদ আকবর, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সালমা আকবর, অনিরুদ্ধ সেন গুপ্ত, সেমন্তী মঞ্জরী, বুলবুল ইসলাম, ইলোরা আহমেদ, শুক্লা সরকার ও তপন ভট্টাচার্য। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে বাংলার মুখ, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ মহানগর শাখা ও গীতাঞ্জলি সমবেত সঙ্গীত। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সঙ্গীত উৎসব ॥ সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে চলছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব। ‘হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ,/ যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ’ সেøাগানে অনুষ্ঠিত উৎসবের চতুর্থ দিন ছিল শুক্রবার। অন্য দিনের মতো এদিনও সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সঙ্গীতাসর। আজ শনিবার এ উৎসবের শেষ দিন। উন্মুক্ত এ আয়োজন শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রমেলা ॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তি উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো ‘এবি ব্যাংক চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা’। এবছর আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন শেষে আতাউর রহমানের হাতে পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, মেলার প্রধান পৃষ্ঠাপোষক এবি ব্যাংকের ডিএমডি মশিউর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি ও সিইও শাহ এ. সারোয়ার, কবি আসাদ চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান প্রমুখ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়’ শীর্ষক সঙ্গীত সঙ্কলনের উন্মোচন করা হয়। মেলায় গান পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লিলি ইসলাম, সাদী মহম্মদ, আমেনা আহমেদ, হীমাদ্রি শিখর, সালমা আকবর, সাজিদ আকবর, সরোয়ার হোসেন বাবু, ফাহিম হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। মেলায় আগত বিশিষ্টজনরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও আফরোজা বানু। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে মঞ্চস্থ স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ ॥ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার মঞ্চস্থ হলো স্বপ্নদলের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ‘চিত্রাঙ্গদা’। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় নাটকটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরায়ত সৃষ্টি চিত্রাঙ্গদার গবেষণাগার নাট্যরীতিতে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান অবলম্বনে কিছু রূপান্তরসহ দুই ভিন্ন সময়ে এবং দু’টি আলাদা আঙ্গিকে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেছিলেন। ১৮৯২ স্মরণ তাঁর একত্রিশ বছর বয়সে রচনা করেন কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। এর প্রায় চুয়াল্লিশ বছর পরে ১৯৩৬ সালে পঁচাত্তর বছর বয়সে রচনা করেন নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। স্বপ্নদলের প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ পা-ুলিপি অবলম্বনে। আধুনিক সময়ে মানবের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবিরূপে রচিত কাব্যনাট্য চিত্রাঙ্গদার নাট্যকাহিনীতে উপস্থাপিত হয়Ñ মহাবীর অর্জুন সত্যপালনের জন্য একযুগ ব্রহ্মচার্যব্রত গ্রহণ করে মণিপুর বনে এসেছেন। মণিপুর-রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
×