ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান, বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান...

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৯ মে ২০১৫

ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান, বিস্ময়ে তাই  জাগে আমার গান...

মোরসালিন মিজান ॥ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পুরো একটি দিন। চমৎকার পরিভ্রমণ। সৃষ্টির বিপুল ভা-ার থেকে কবিগুরুকে খুঁজে নেয়া। নব নব রূপে আবিষ্কার। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা। আনন্দ আয়োজনে ছিল গান নাচ কথা, কবিতাÑ কত কী! সবই উৎসর্গ করা হলো রবীন্দ্রনাথকে। কারণ আর কিছু নয়, শুক্রবার ছিল ২৫ বৈশাখ। বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে উদ্যাপিত হয়েছে ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী। আনন্দ আয়োজন আর আনুষ্ঠানিকতা নয় শুধু, রবির আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার আহ্বান এসেছে সব মঞ্চ থেকে। সর্বত্র উচ্চারিত হয়েছেÑ জয় জয় জয় হে জ্যোতির্ময়। প্রতিবারের মতোই কবিগুরুর জন্মদিনে দারুণ উৎসবমুখর ছিল রাজধানী ঢাকা। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার। এদিন সন্ধ্যায় ছায়ানটে আয়োজন করা হয় রবীন্দ্র উৎসবের। দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মেলক নৃত্যগীত ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুরু। পরে গানে গানে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা জানান শিল্পীরা। একক গান ছিল। ছিল সম্মেলক পরিবেশনা। আবৃত্তি পাঠ ছিল। ছিল রবীন্দ্র-নাটকের গান। তবে বিশেষ পর্বটি আলোকিত করেন কলকতার অতিথি সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রচিত্রকলা নিয়ে দৃষ্টান্তসহ বক্তৃতা করেন তিনি। নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দারুণ সমৃদ্ধ করে শ্রোতাকে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। আজ শনিবারও অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রনাথের গান থেকে কবিতা, কবিতা থেকে গান নিয়ে সন্জীদা খাতুনের গ্রন্থনা ‘রূপে রূপে অপরূপ’। থাকবে সুরতীর্থ-এর মূল গান ও তা থেকে ভাঙা রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপস্থাপন, নৃত্যদল জাগো আর্ট সেণ্টার ও ভাবনার পরিবেশনা। পাশাপাশি থাকবে অতিথি এবং ছায়ানট-এর শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি ও পাঠ। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে রবীন্দ্র উৎসব। কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার এর উদ্বোধন করা হয়। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সেøাগানÑ ‘হও মৃত্যুতোরণ উত্তীর্ণ,/ যাক, যাক ভেঙে যাক যাহা জীর্ণ’। এই সেøাগানে শুক্রবারও মুখরিত ছিল মিলনায়তন। এখানে বিশাল মঞ্চ থেকে গানে গানে স্মরণ করা হয় কবিগুরুকে। শ্রদ্ধা জানান নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। আজ শনিবার শেষ হবে শিল্পী সংস্থার উৎসব। ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এবারও আয়োজন করা হয় রবীন্দ্রমেলার। সকাল ১০টায় শুরু হয় উৎসব। ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য, রবীন্দ্র কবিতা থেকে আবৃত্তি, রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে পাঠ, রবীন্দ্র বিষয়ক ছবি আঁকাসহ নানা আয়োজন। এদিন নাট্যজন আতাউর রহমানের হাতে পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেন প্রধান অতিথি সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হক। এ সময় কবি আসাদ চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উৎসবে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একক রবীন্দ্র সঙ্গীতের সিডি ‘ভরা থাক্ স্মৃতিসুধায়’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলায় গান পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লিলি ইসলাম, সাদী মহম্মাদ ও আমেনা আহমেদ, হীমাদ্রি শেখর, সালমা আকবর, সাজিদ আকবর, সরোয়ার হোসেন বাবু, ফাহিম হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। মেলায় আগত বিশিষ্টজনরা নিজেদের রবীন্দ্র ভাবনা তুলে ধরেন। আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও আফরোজা বানু। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরের ধারা। নৃত্য পরিবেশন করে ভোরের পাখি নৃত্যকলা, তারায় তারায় দীপশিখা ও নটরাজের শিল্পীরা। এক কোণে ছবি আঁকেন চিত্রশিল্পীরা। মেলায় ছিল ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫টি স্টল। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে তিন দিন রাজধানীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিগুরু আঁকা ছবি নিয়ে এখানে আয়োজন করা হয় বিশেষ প্রদর্শনীর। জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করে প্রখ্যাত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের। জনপ্রিয় শিল্পী গানে গানে মন্ত্রমুগ্ধ করেন শ্রোতাদের। ১৫৪তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’র বিশেষ মঞ্চায়ন করে স্বপ্নদল। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। স্বপ্নদলের প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ পা-ুলিপি অবলম্বনে। এভাবে বিভিন্ন মঞ্চ থেকেও শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করা হয় বাঙালীর আত্মপরিচয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে একটি পুরো দিন কাটায় বাঙালী।
×