ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাউরি বাতাস কাঁদিয়া লুটায়...

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৯ মে ২০১৫

বাউরি বাতাস কাঁদিয়া লুটায়...

‘আঁখি মেলে তোমার আলো/প্রথম আমার চোখ জুড়াল/ওই আলোতে নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে ...’- কবিতার এই চরণগুলো বেশ করে মনে পড়বে নিজ জন্মভূমিতে পুনরায় এলে। আজ এই রাজধানীতে যারা বাড়িঘর করেছেন কিংবা বসবাস করছেন এক সময় তাদের অনেকেরই জন্ম হয়েছিল কোন এক গাঁয়ে কিংবা ছোট এক মফস্বল শহরে। আজ যারা বয়সে প্রবীণ তাদের অনেকের স্মৃতিতে ভাসে শৈশবে গ্রামবাংলায় কাটানোর সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা। তখন তো মনে পড়বেই ‘আমার বাংলা অনেক রাত্রে/গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দের মতো/স্বচ্ছ নির্মল গাছের পাতায় মুক্তা/ছোট ছোট ফুল যেন অনেক তারা/যেন বনকন্যাদের চোখের পানি...’ কবিতার এই লাইনগুলো। গ্রামবাংলায় নিজ জন্মস্থানের অনেকের বাড়ির কাছেই আছে খাল। সেখানে সমবয়সীদের সঙ্গে একত্রে মিশে সাঁতার কাটা, ডুবাডুবি খেলা, গাছ থেকে খালে লাফিয়ে পড়াÑ সে কী আনন্দের! সে কী মজার দিন। কত হৈ চৈ, কতই না আনন্দ। বিকেলে দল বেঁধে গ্রামের হাটে যাওয়া। অতীতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নদীপথে লঞ্চে নয়ত নৌকায় যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বড় বড় খাল দিয়ে নৌকা চলত। পালতোলা নৌকা চলত নদীতে। খাল-বিল প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় আজ নৌকা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সর্বত্রই যেন সড়কপথÑ সেখানে চলছে বাস। সময়ও লাগে কম। হঠাৎ নদীতে নৌকা দেখে কার না মনে পড়ে শৈশবের কথা। শৈশবকাল পঞ্চাশ বছর আগেকার হলেও স্মৃতিতে ভাস্বর। কেউবা বাবার মুখে শুনতেন, তিনি জুলুহার হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৮ সালে। সেই বাবা নেই, ছেলেটি এতদিনে বৃদ্ধ হয়ে গেছে। তারও ইচ্ছে জাগে, দেখি না বাবা যেখানে লেখাপড়া করেছেন সেই স্কুলটি। নৌকায় বসে ঐ জুলুহার স্কুলটি দেখতে বৃদ্ধ বয়সে তারও ভাল লাগে। গ্রামের পথ দিয়ে চলতে গেলে এক সময় ঢেঁকির পাড় শোনা যেত আজ তাও যেন হারিয়ে গেল। শুধু কী তাই, গ্রামবাংলা থেকে আজ কত না পাখি হারিয়ে গেছে। শৈশবে দেখা পানকৌড়ি, ঘুঘু, তোতা, টিয়া, ময়না, চখাচখি, বাবুই পাখির কথা এখনও অনেকের বেশ করে মনে পড়ে। আরও মনে পড়বে কমলা ঝরিয়ার গাওয়াড় বুকে পাথর চাপা দিয়া সোনার চাপা দিয়া সোনার বধূ যায় চলিয়া বুকে আমার ঢেঁকির পাড় পড়েরে ... গানের কথাগুলো। বৃদ্ধ বয়সে চশমা দিয়ে যখন বাইরে তাকান তখন দেখেন বিল্ডিংয়ের পর বিল্ডিং। ঢাকা নগরীতে বসে আর দেখতে পান না গাছপালা, নদী, নদীতীর, দামোদর খাল। শুনতে পান না আর পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। তখন সেদিনের ছেলেটির কত গানের কথাই না মনে পড়ে। মনে পড়বেই না কেন, শৈশব যে কেটেছে তার কোনো এক গাঁয়ে। তখন নিজ জন্মস্থানের গাঁওখানিকে ‘বন্ধু’ মনে করে অনুশোচনার সুরে গুণগুণ করে গেয়ে ওঠেন ‘তুমি কি জানোরে বন্ধু কান্দাও যে আমায়/আমার মনের বনে বাউরি বাতাস কাঁদিয়া লুটায়/যখন তাকাই দূরের গাঁয়ের পানে কার জল ভরা চোখ আমায় টানে/আমি ভেসে যেন চলেছি হায় কোন অচেনার নায় গো/মনের বনে বাউলি বাতাস কাঁদিয়া লুটায়...’। লিয়াকত হোসেন খোকন ঢাকা।
×