ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্দীদশা থেকে মুক্তি ছিটমহলগুলোতে চলছে আনন্দ উল্লাস

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৯ মে ২০১৫

বন্দীদশা থেকে মুক্তি   ছিটমহলগুলোতে চলছে আনন্দ  উল্লাস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ১৬২ ছিটমহলবাসীর জীবনে বইছে আনন্দের জোয়ার। তারা এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের প্রায় ১৭ হাজার মানুষ বাংলাদেশের নতুন নাগরিকত্ব পেতে চলছে। একইসঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরে ৫১টি বাংলাদেশের ছিটমহলের প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে যাচ্ছে। ভারতীয় লোকসভায় সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এই বিল পাসের মধদিয়ে ছিটমহল হস্তান্তরে কোন বাঁধা রইল না। এখন এই দু’দেশের সরকারের একটি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। লোকসভায় ছিটমহল ও সীমান্ত চুক্তি সংশোধনী বিলটি ৩৩১ জন লোকসভার সদস্যের উপস্থিতে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এতে করে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দী ও দাশত্বের জীবনের অবসান ঘটল। বিল পাসের খবর নিশ্চিত হবার পর ছিটমহলগুলোর মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা মুজিব চুক্তির আলোকে ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত চুক্তি বিল ভারত পাস করে। বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের বিল ১৯৭৪ সালের ৬ মে পাস করেছিল। ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ভারত সরকার লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করার পর পাস না করে স্থগিত করে রাখে। পরবর্তী সরকারগুলো এই বিষয় নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিল না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ’৭৪ সালের ইন্দিরা মুজিব চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতার ফসল এই চুক্তিকে সফল করতে ভারতের লোকসভায় বিলটি পাস হয়। খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও স্টাফ রিপোর্টারের। ছিটমহল বিনিময় বিল পাস হতেই লালমনিরহাট শহরের অদূরে বাঁশপচাই ছিটমহলে রাতে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক মোঃ মতিয়ার রহমান ও পুলিশ সুপার মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম ছিটমহলটি পরিদর্শন করেন। তাদের উপস্থিতি ছিটমহলবাসীর আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী জানায়, তার ইউনিয়নে দুটি ছিটমহল রয়েছে। এখন এর উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এদিকে বিলটি পাস হওয়ায় শুক্রবার ছিটমহলগুলোর মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। লালমনিরহাটের ভিতরে ভারতীয় ৩৩টি ছিটমহল রয়েছে। এসব ছিটমহলের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে ইচ্ছুক। এখন তারা বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের মানুষের মতোই সকল সুযোগ সুবিধা পাবে। পঞ্চগড় ॥ জেলার অভ্যন্তরে ৩৮টি ছিটমহলে বইছে বাঁধভাঙ্গা আনন্দের বন্যা। বৃহস্পতিবার ভারতের লোকসভায় স্থল সীমান্ত বিলটি পাস হওয়ার পর থেকেই ছিটমহলের নাগরিকরা আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, রং খেলা, নামাজ ও নফল রোজা রাখছেন। ছিটমহলের প্রতিটি বাড়িতে চলছে উৎসবের আমেজ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত প্রত্যেকটি ছিটমহলে উড়ছে বাংলাদেশী পতাকা। পতাকা হাতে নিয়ে হচ্ছে আনন্দ মিছিল। এদিকে রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিরা যারা এতদিন ছিটমহলে যায়নি, বুধবার থেকে অনেককেই ছিটমহলে গিয়ে ছিটমহলবাসীদের খোঁজখবর নিতে দেখা যাচ্ছে। কারণ, পঞ্চগড়, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে এক হয়ে গেলে ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশের ভোটার হয়ে যাবেন। ছিটমহলের নাগরিকরাও ভোটের বড় ফ্যাক্টর। তাই আগেভাগেই তাদের সমর্থন ও সহমর্মিতা আদায়ে বাড়ি বাড়ি ছুটছেন নেতা ও জনপ্রতিনিধিসহ সমাজসেবী অনেকে। নীলফামারী ॥ ছিটমহলের বাসিন্দাদের দুর্দশার কথা আমরা জানি। তাদের দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা, বঞ্চনার অবসান হলো। বৃহস্পতিবার লোকসভায় বিলটি পাস হবার খবরে নীলফামারীর ৪টি ছিটমহলে চলছে আনন্দ উৎসব। আনন্দধারায় ছিটবাসী চোখের পানি আটকাতে পারেনি। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বড়খানকাবাড়ি খারিজা, তালুক বড়খানকা খারিজা, গীতালদহ, জিগাবাড়ী ছিটমহলে চলছে আনন্দ উল্লাস। উড়ছে বাংলাদেশের লাল সবুজের জাতীয় পতাকা। এই চারটি ছিটমহলে মোট জমির পরিমাণ ৯৩ একর। সর্বশেষ জনগণনা অনুসারে চারটি ছিটমহলে মোট ১১৯টি পরিবার বাস করছে। জনসংখ্যা ৪৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৫৮ ও মহিলা ২৪৮ জন। বিভিন্ন সূত্র মতে আসছে জুন মাসে ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে ছিটমহল চুক্তি বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটমহলের নাম ঘুচিয়ে দেবেন। এদিকে সব বাধা দূর হয়ে যাওয়ার পর এখন ছিটের লোকজন নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে সেøাগান দিচ্ছে। অনেকে নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুই হাতে তুলে তার মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করেছেন। জিগাবাড়ী ছিটমহলের জয়নাল আবেদীন (৬২) বলেন, ছিটমহলের বেশির ভাগ মানুষ গরিব। প্রায় সবাই কৃষিশ্রমিক। আমরা শুক্রবার সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক হলাম। দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলাম। বড়খানকাবাড়ি খারিজায় বাসিন্দা যদুনাথ চন্দ্র রায় জানায়, ৬৮ বছর বন্দী থাকার কারণে আমরা জমি বিক্রি করতে পারতাম না, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে ভর্তি করতে পারতাম না।
×