ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুর টেস্ট ॥ অবিশ্বাস্য কীর্তির আশায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৯ মে ২০১৫

মিরপুর টেস্ট ॥ অবিশ্বাস্য কীর্তির আশায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ ‘সুপ্রবাত, তুমি কেমুন আচো।’-মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনের সকালে বাংলাদেশের ধারাভাষ্যকার শামীম চৌধুরীকে বললেন পাকিস্তানের ধারাভাষ্যকার আমির সোহেল। মিরপুর টেস্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটিই হতে চলেছে। এক পাকিস্তানীর কণ্ঠে বাংলা কথা! তা যতই ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরে হোক। বাংলা কথা তো বললেন পাকিস্তানীরা। এছাড়া আসলে ম্যাচে তেমন আর কিছুই নেই। নিশ্চিত হারের পথেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ফলোঅনে পড়ার পরও পাকিস্তান আবার ব্যাটিংয়ে নামায় ইনিংস হার এড়ানো গেছে। কিন্তু এখনও যে জিততে হলে দুইদিনে ৪৮৭ রান করতে হবে, তা অসম্ভবই। অলৌকিক কিছু না ঘটলে এ ম্যাচে বাংলাদেশের হারই লেখা আছে। সেই অবিশ্বাস্য কীর্তির আশাতেই এখন মুশফিক, তামিম, মুমিনুল, সাকিবরা। মিরপুর টেস্ট এখন যে স্থানে দাঁড়িয়ে গেছে, যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক; তাতে নিশ্চিত হারের পথেই আছে বাংলাদেশ। ম্যাচ আর বাংলাদেশের হাতে নেই। পাকিস্তানের হাতে চলে গেছে। যখন বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিজেই বলেন, ‘স্বাভাবিক সম্ভাবনা আমরা হারছি।’ তখন আর কী বলার থাকে। এখন ম্যাচ বাঁচাতে হলে বা ইতিহাস গড়ে জিততে হলে, অলৌকিক কিছুর সন্ধানই করতে হবে। এ জন্য আলাদিনের চেরাগের মতো আশ্চর্য প্রদীপের আশাই করতে হবে। বাংলাদেশের হাতে আছে দু’দিন। আছে ৮ উইকেট। শাহাদাত না থাকায় একটি উইকেট কমই ধরতে হচ্ছে। এ ৮ উইকেটেই বাংলাদেশকে যা করার করতে হবে। তৃতীয় দিন শেষে পাকিস্তানের ছুড়ে দেয়া ৫৫০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১ উইকেটে (ইমরুল-১৬ রান) ৬৩ রান করেছে বাংলাদেশ। ৩২ রান করা তামিম ও ১৫ রান করা মুমিনুল আজ চতুর্থদিনে ব্যাট করতে নামবেন। সেই সঙ্গে দলকে বাঁচাতেও নামবেন। তামিম, মুমিনুলের পর ব্যাটিংয়ে আছেন মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিব, সৌম্য, শুভগত, তাইজুল ও শহীদ। পারবেন এ ব্যাটসম্যানরা দলকে বাঁচাতে? প্রথম ইনিংসে আজহার আলীর ২২৬, ইউনুস খানের ১৪৮ ও আসাদ শফিকের ১০৭ রানে ৮ উইকেটে ৫৫৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ১০৭ রান করে। কিন্তু হারিয়ে বসে ৫টি উইকেট। পিছিয়ে থাকে ৪৫০ রানে। সেখান থেকে তৃতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আর ৯৬ রান যোগ করতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০৩ রানের সময় ৯ উইকেট পড়ে। শাহাদাত ইনজুরিতে পড়ে যাওয়ায় ব্যাট করতেও পারেননি। অনুপস্থিত থাকায় এখানেই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়। এত রানও করা যেত না। যদি সৌম্য, শুভগতর মতো ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও সাকিব একাই হাল না ধরতেন। শেষপর্যন্ত সাকিব ৮৯ রান করে মিরপুরে প্রথম বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান পূরণ করে অপরাজিতই থাকেন। বাকি সব উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তাতে করেও ফলোঅন এড়ানো থেকে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে থাকে ৩৫৪ রানে। ফলোঅনে পড়ার পরও বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি পাকিস্তান। নিজেরাই ব্যাটিং করে। তাতে অবশ্য খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি। ৬ উইকেট হারিয়ে আরও ১৯৫ রান যোগ করে পাকিস্তান। মিসবাহ উল হক ৮২ রান করে আউট হতেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় পাকিস্তান। ৫৪৯ রানে এগিয়ে যায়। রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। সামনে জিততে ৫৫০ রানের বিশাল টার্গেট দাঁড় হয়ে যায়। এ বিশাল রান করা কি সম্ভব? কোনভাবেই নয়। ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যে ৫০০ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে কোন দলই জিততে পারেনি। সর্বোচ্চ জয়টি এসেছে ৪১৮ রানের টার্গেট অতিক্রম করে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই জয়টি বিশ্বরেকর্ড হয়েই আছে। আর বাংলাদেশ তো কোনদিনই ৩০০ রানের বেশি টার্গেট হলেও জিততে পারেনি। সেখানে এত বড় স্কোর কিভাবে তাড়া করবে? জিততে হলে ইতিহাসই গড়তে হবে বাংলাদেশকে। সাকিবও মানছেন তা। তাই তো তাঁর কথা এমন, ‘এ ম্যাচে হারই হচ্ছে। এখন চতুর্থদিন সকালের সেশনটিই মুখ্য। যদি ভাল কিছু হয় তাহলে কিছুটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। দুইদিন ব্যাট করা না গেলে টার্গেট অতিক্রম করা যাবে না। খুলনার মতো নয় উইকেট। অনেক পরিবর্তন আছে।’ তবে বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ইনিংস হারের চেষ্টা না করানোর ব্যাখ্যায় এমন কথাই বললেন পাকিস্তানের স্পিন বোলিং কোচ মুসতাক আহমেদ, তা শুনে মনে হয়েছে; ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, টি২০’তে হারের পর প্রথম টেস্টে ড্র করার স্মৃতি যেন ভুলেই গেছে পাকিস্তান। তা না হলে কী আর মুসতাকের কণ্ঠে এমন সুর বের হয়, ‘আসলে ম্যাচটি তিনদিনেই শেষ করার কোন কারণ দেখি না।’ বাংলাদেশকে পাত্তাই যেন দিচ্ছেন না মুসতাক। এক ম্যাচে ভাল করেই উচ্চ কণ্ঠে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন অথচ সিরিজজুড়েই কিন্তু ‘নিচু কণ্ঠ’ই শোভা পেয়েছে। তবে এখনও হাল ছাড়ছে না বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানরাই আছেন। যাঁরা ম্যাচে ‘অঘটন’ ঘটাতেও পারেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ৩০০০ রান এরই মধ্যে করে ফেলেছেন। আর ১৭ রান হলে হাবিবুল বাশারের করা ৩০২৬ রান টপকে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড গড়বেন। তামিমের দৃষ্টি নিশ্চয়ই সেদিকে নেই। তার দৃষ্টি আছে ৭ টেস্ট শতকের মধ্যে যে চারটিই দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন, আরেকটি শতক তুলে নেয়ার এবং ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে যে এখনও কোন শতক পাননি তামিম, তা করার। তা হলেই তো আশা খানিকটা বাড়ে। এখন বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ভাল কিছু আদায় করে নিতে হলে ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস, বড় জুটি গড়তে হবে। সাকিব যেন সেই দিকটি নিয়েই ভাবছেন। তাই বলেছেন, ‘আমরা কোন লড়াই ছাড়া ম্যাচ হাতছাড়া করব না।’ সেই লড়াইটি এখন তামিম, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিব, সৌম্য, শুভগতরা দেখিয়ে দিলেই হলো। তবে যে অবস্থা, পাকিস্তানের যে আগ্রাসী বোলিং, তাতে এখন অলৌকিকতার আশাতেই থাকতে হচ্ছে।
×