ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি

আরেকটি অর্জন আজহারের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ মে ২০১৫

আরেকটি অর্জন আজহারের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সহজে হার স্বীকার করেননি আজহার আলী। যখন বাংলাদেশী স্পিন অলরাউন্ডার শুভাগত হোমের কাছে হারলেন ততক্ষণে নতুন এক মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন। দলকেও মজবুত এক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। মিরপুর টেস্টেও প্রথম দিন পুরোটাই উইকেটে কাটিয়েছিলেন ইনিংস উদ্বোধন করতে এসে। অপরাজেয় থেকে দেখেছেন তিন সতীর্থের সাজঘরে ফেরা। কিন্তু উইকেটে অনড় ছিলেন আজহার। ক্যারিয়ারে ৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। সারাদিন উইকেটে থেকে ১২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। দারুণ ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে খেলেছিলেন ২৫৮ বল। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আরও শম্বুকগতির ব্যাটিং করেছেন তিনি। তবে আরেকটি অর্জন যোগ হয়েছে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৪২৮ বলে ২০ চার ও ২ ছক্কায় ২২৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এর আগেই পঞ্চম উইকেটে আসাদ শফিকের সঙ্গে ২০৭ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানের সংগ্রহকে বিশাল করে ফেলেন আজহার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সেরা জুটি। পুরোটা দিন উইকেটে থাকলেন। যেভাবে ব্যাট চালালেন সেটাকে শম্বুকগতিই বলা হয়। তাঁর পরে ক্রিজে এসে ইউনুস খান ১৪৮ রানের ইনিংস খেলে ফিরে গেছেন। তবে ধীর গতিতে ব্যাট চালালেও ঠিকই দলকে ভাল একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। ইউনুসের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন তৃতীয় উইকেটে ২৫০ রানের জুটি। ইউনুস ফিরে গেলেও আজহার দিন শেষ করেছেন অপরাজিত থেকে। সেজন্য অবশ্য ভাগ্যেরও সহায়তা পেয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার সুযোগ দিলেও সেসব কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তবে সারারাতের বিশ্রামে যেন নিজেকে আরও উজ্জীবিত, আর দৃঢ় করে ফেলেছেন। তাই দ্বিতীয় দিন শুরু থেকেই বেশ সাবধানী ছিলেন। বড় কোন ভুলও করেননি। ধীরে ধীরে পৌঁছে যান কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। যদিও দিনের শুরুতেই তিনি হারিয়েছেন আগের দিনের সতীর্থ অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হককে। কিন্তু তরুণ শফিককে সঙ্গে নিয়ে দারুণ ব্যাট চালিয়েছেন। দু’জন মিলে গড়ে তুলেছেন দীর্ঘ এক জুটি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে সপ্তমবারের মতো দুই শতাধিক রানের জুটি গড়ে তোলেন তাঁরা। ২০৭ রানের জুটিটি ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকদের পঞ্চম উইকেটে দ্বিতীয় সেরা। এর আগে এই শফিকের সঙ্গেই ইউনুস খান ২০১১ সালের নবেম্বরে চট্টগ্রামে করেছিলেন ২৫৯ রানের জুটি। দারুণ এ জুটি পাকিস্তান দলকে এনে দিয়েছে বিশাল এক জুটি। শুরু থেকেই সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকা আজহার অবশ্য ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগেছেন। আর বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও বিষয়টি বুঝে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন। ১৯৯ রানে পৌঁছার পর তাইজুল ইসলামের টানা দুই বলে অল্পের জন্য রক্ষা পান আজহার। যেভাবে ব্যাট চালিয়েছিলেন ব্যাটের কানা ঘেঁষে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়েছিল। পরের ওভারেই অবশ্য এই চাপটা কাটিয়ে ওঠেন আজহার। সাকিব আল হাসানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান। দারুণ এই ছক্কার মাধ্যমে পাকিস্তানের ২০তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দেশের পক্ষে ৩৯তম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন আজহার। সবমিলিয়ে ৫২১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪০৬ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বি-শতক হাঁকিয়ে নতুন মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। এটি ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। এছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চারটি করে ডাবল সেঞ্চুরি আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সর্বাধিক ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। সবমিলিয়ে ৯০তম টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশ নিজেদের বিরুদ্ধে এটিসহ মোট ২২টি ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেখল প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অজেয় থাকেননি আজহার। তাঁকে ফিরিয়েছেন শুভাগত। উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে লংঅফ দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দী হন। এর আগেই ৪২৮ বলে ২২৬ রান করে ফেলেছেন। আগের দিনের সঙ্গে আরও ৯৯ রান যোগ করেছেন ১৭০ বল খেলে।
×