ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সামনে ফলোঅন এড়ানোর চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৮ মে ২০১৫

বাংলাদেশের সামনে ফলোঅন এড়ানোর চ্যালেঞ্জ

মিথুন আশরাফ ॥ খুলনা টেস্টেও একই দশা হয়েছিল। রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছিল বাংলাদেশ। এবার মিরপুর টেস্টেও তাই হলো। তবে খুলনায় বাংলাদেশ আগে ব্যাট করেছিল। এবার পাকিস্তান আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৫৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করল। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান করল। তাতে বাংলাদেশের সামনে এখনও ফলোঅন এড়ানোর চ্যালেঞ্জই রয়ে গেছে। আজহার আলীর (২২৬) প্রথম দ্বিশতকের সঙ্গে আসাদ শফিকের ১০৭ রানে পাকিস্তান রানের পাহাড়ই গড়ল। পঞ্চম উইকেটে দুইজন মিলে ২০৭ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে ৫৩০ রানে নিয়ে যান। সেখান থেকে দল দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগে আরও ২৭ রান যোগ করে ইনিংস ঘোষণা করে। তখন বাংলাদেশের সামনে ফলোঅন এড়াতে ৩৫৮ রানের চ্যালেঞ্জ পড়ে যায়। আগে ফলোঅনই এড়াতে হবে বাংলাদেশকে। এরপর পাকিস্তান যে প্রথম ইনিংসে রান করেছে, তা অতিক্রম করার বিষয় আসবে। বাংলাদেশ যে তৃতীয় দিন শেষে ১০৭ রান করেছে, তাতে পাকিস্তান থেকে ৪৫০ রানে পিছিয়ে রয়েছে। এখন বাংলাদেশের সামনে ফলোঅন এড়াতেই ২৫১ রান লাগবে। হাতে আছে মাত্র ৫ উইকেট। ফলোঅন এড়াতে পারবে বাংলাদেশ? সেই প্রশ্নই তাই দ্বিতীয় দিন শেষে এসে পড়ল। এ দিনটিতে বাংলাদেশ যে হারিয়ে ফেলেছে ৫ উইকেট। একটি সেশন পুরো খেলার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। এ ইনিংসেই যেন বিপদ ঘনিয়ে আসল। মাত্র ৪ রানের সময়ই খুলনা টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল (৪) সাজঘরে ফিরলেন। জুনায়েদের বলে এলবিডাব্লিউ হলেন। রিভিউ নিলেন। তাতে কাজ হলো না। দেখতে দেখতে আরও ৪টি উইকেট পড়ে গেল। ৩৮ রানে মুমিনুল হকও (১৩) আউট হয়ে গেলেন। ৬৯ রানে গিয়ে শুরুতেই জুনায়েদের এক ওভারেই চারটি চার হাঁকিয়ে ব্যাটিং করা কত সহজ তা বুঝিয়ে দেয়া ইমরুল কায়েস (৩২) আউট হয়ে যেতেই বাংলাদেশ এ টেস্টে যে বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে তা ভালভাবেই বোঝা গেল। ৮৫ রানে যখন ওয়াহাবের বাউন্সি বলটি বুঝতে না পেরে আজহারের কাছে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়লেন মাহমুদুল্লাহ (২৮) তখন বাংলাদেশ ফলোঅন এড়াতে পারবে কিনা, সেই প্রশ্নই উঠে গেল। এরপর দিনের শেষ বলে এসে যখন মুশফিকও (১২) আউট হয়ে গেলেন। মুশফিক আউট হতেই দ্বিতীয় দিনও শেষ হয়ে গেল। তখন মুশফিকের সঙ্গে ব্যাট হাতে ১৪ রান করা হতাশ সাকিব মাঠ ছাড়ছেন। তারওপরই এখন সব নির্ভর করে। যে ব্যাটসম্যানরা আছেন তাদের নিয়ে এখন সাকিবকেই এগিয়ে যেতে হবে। তাতে সাকিবের যোগ্যতারও প্রমাণ মিলবে। কঠিন সময়ে দলকে কী দিতে পারেন সাকিব, তারও প্রমাণ মিলবে। পাকিস্তান প্রথমদিন ৩ উইকেটে ৩২৩ রান করেছিল। ১৮ রানে আউট হওয়ার পরও ‘নো’ হওয়াতে বেঁচে যাওয়া আজহার ১২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। আজহারের সঙ্গে দ্বিতীয় দিন ৯ রান করা মিসবাহ ব্যাট হাতে নামেন। মিসবাহ আর ১ রানও স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেননি। সাকিবের বলে দিনের দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান মিসবাহ। সেই থেকে যে আজহার ও আসাদ মিলে উইকেট আঁকড়ে থাকেন, আরেকটি উইকেট শিকার করতে ৫৩০ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত একেবারে ঝিমিয়ে খেলতে থাকে পাকিস্তান। এক সেশনে ১০৫ রান যোগ করে পাকিস্তান। আজহার ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। সেই সঙ্গে আসাদও। ৪০৬ বলে গিয়ে ২০০ রান করে আজহার। আগেরদিনই শতক করে ফেলা আজহার ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক তুলে নেন। দ্বিতীয় সেশনের পানি বিরতি শেষ হওয়ার পর মাঠে নেমেই আজহার-আসাদ মিলে পাকিস্তানকে ৫০০ রানে নিয়ে যান। এরপর আসাদেরও ১৪৯ বলে ১০০ রান হয়ে যায়। দুজন মিলে আরও ৩০ রান এগিয়ে যান। অবশেষে শুভগত হোম ‘ব্রেক থ্রু’ দেন। ৪২৮ বলে ৫১২ মিনিট খেলে ২০ চার ও ২ ছক্কায় ২২৬ রান করা আজহারকে আউট করে দেন শুভগত। শুরু হয়ে যায় যেন পাকিস্তানের উইকেট পড়ার ধুম। দেখতে দেখতে ৫৪৫ রানে ১৬৭ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ রান করা আসাদকেও আউট করে দেন শুভগত। ৫৫২ রানে গিয়ে ওয়াহাব (৪), ৫৫৭ রানে গিয়ে যেই ইয়াসির আউট হয়ে যান, দ্বিতীয় সেশনও শেষ হয়। তখনও পাকিস্তান যে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছে বোঝা যায়নি। দ্বিতীয় সেশন শেষ হতেই পাকিস্তান ক্রিকেটাররা ফিল্ডিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখনই বোঝা গেল ইনিংস তাহলে ঘোষণা হয়েছে। পাকিস্তান এত বেশি রান এরই মধ্যে করে ফেলেছে যে বাংলাদেশ তাতেই চাপে পড়ে গেছে। যে চাপ থেকে উতরাতে হলে এখন বাংলাদেশকে বিশেষ কিছুই করতে হবে। যেমন খুলনা টেস্টে হয়েছে। কিন্তু করবে কে? সেই প্রশ্নও থাকছে। ব্যাট হাতে আছেন সাকিব। ব্যাট করার অপেক্ষায় আছেন সৌম্য সরকার, শুভগত হোম, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ। আরেকজন ছিলেন। তিনি শাহাদাত হোসেন রাজীব। কিন্তু প্রথমদিনের প্রথম বলেই যে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছেন, দ্বিতীয় বল করে মাঠই ছেড়েছেন। এরপর মাঠে নেমেছেনও। প্রথম সেশনের পর যখন আবার বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের সঙ্গে বোলিং অনুশীলন করতে মাঠে এসেছেন, ৩ বল করেই যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন, আর উঠতে পারেননি। স্ট্রেচারে করে তাকে মাঠ থেকে বের করতে হয়েছে। আর মিরপুর টেস্টে মাঠেই ফিরতে পারবেন না। তাহলে আর ৪ উইকেট আছে বাংলাদেশের হাতে। এ চার উইকেটের মধ্যে এক সাকিব বিশেষ কিছু করতে পারবেন, সেই ভরসা করা যেতে পারে। বাকিরা কি সেই মানের! তাতেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ফলোঅনে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই যদি হয়, এখনও যে ৪৫০ রানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা হলে, তাতে ইনিংস হারের সম্ভাবনাই তো থেকে যাবে। আপাতত বাংলাদেশকে সেই হিসাব নিয়ে না ভাবলেও হবে। ভাবতে হবে ফলোঅন এড়ানো নিয়ে। ২৫১ রান করে যে ফলোঅন এড়ানোই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
×