ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে নগর ভবনে গেলেন

বাবার চেয়ারেই বসলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ মে ২০১৫

বাবার চেয়ারেই বসলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কার্যালয়ের দেয়ালে টাঙানো বোর্ডটির দিকে তিনি একবার তাকালেন। সেখানে মেয়রদের তালিকার প্রথম নামটি তার বাবার। ১৯৯৪ সালে শীতের এক সকালে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। কুড়ি বছর বাদে গ্রীষ্মের এক সকালে সেই বাবার চেয়ারেই বসলেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একটি ক্ষেত্রে প্রথম হওয়ার অনন্য ইতিহাসও গড়লেন পিতা-পুত্র। মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র। আর বিভক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রথম নির্বাচত নগরপিতা হলেন সাঈদ খোকন। দায়িত্ব গ্রহণের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বৃহস্পতিবার নগরভবনে এলেন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়ে নগরবাসীর উদ্দেশে আবারও বললেন, পিতা নয়, নগরের সন্তান হিসেবে আপনাদের সেবা করতে চাই। বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র। মেয়র হিসেবে খোকার মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত। এরপরই নাগরিক সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকাকে ভাগ করে দুটি সিটি কর্পোরশেন করা হয়। সেই হিসেবে গত প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে মেয়রশূন্য ছিল দক্ষিণের নগরভবন। তাই নবনির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণকে ঘিরে বৃহস্পতিবার নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। নতুন মেয়রকে বরণ করে নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকেই প্রস্তুত ছিলেন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ উর্ধতনরা। ওই দিকে বনানীর বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে রাজধানীর বঙ্গবাজারে এসে নামেন সাঈদ খোকন। সেখান থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে সকাল ১০টার দিকে গুলিস্তানে অবস্থিত নগর ভবনে আসেন তিনি। এ সময় নগরভবনের প্রধান ফটকে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। প্রথম কার্যদিবসের শুরুতেই করপোরেশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নব নির্বাচিত কাউন্সিলর, করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি বলেন, নগরভবন হবে নগরবাসীর সেবাকেন্দ্র। বিরোধী দলের যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তারাও আমাদের কাছে নিরাপদ থাকবেন। আমরা বিরোধীদের সঙ্গে মিলেমিশে কর্পোরেশনের উন্নয়ন করতে চাই। এরপর সকাল পৌনে ১১টার দিকে মেয়রের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সাঈদ খোকন। নগর ভবনের যে কক্ষটিতে এক সময় তার বাবাও বসতেন, সেই একই আসনে বসেন সাঈদ খোকন। মেয়র হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের কবরস্থানগুলোর উন্নয়নে একটি প্রকল্প ফাইল সই করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার দাফতরিক কাজ। পরে নিজ কার্যালয়ে বসেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএসসিসি মেয়র। তিনি বলেন, খুব শিগগির সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঘাটতি বাজেট পূরণ করে নগরবাসীর জন্য বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করবেন। তিনি বলেন, আমার বাবা ঢাকার মেয়র ছিলেন। নগরবাসী আমার মাঝে তাঁর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছেন। নগরের খেদমত করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার পিতা অবিভক্ত ঢাকাবাসীর জন্য অনেক কাজ করে গেছেন। আজকে আমার সময় এসেছে। এই শহরের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করব। আমার বাবা যেমন এই শহরের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন। আমিও তাঁদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি। বাজেট ঘাটতির কারণে স্বনির্ভর হতে পারছে না করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের ৫শ’ কোটি টাকার বাজেট ঘাটতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নবনির্বাচিত এই মেয়র বলেন, আমিও এটা শুনেছি। কিভাবে এটা ম্যানেজ করা যায় সে বিষয়ে শিগগিরই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলব। ‘ঢাকা ডায়ালগ’ হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে ঢাকা ডায়ালগ হবে। ঢাকার সমস্যা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করব। নতুন মেয়র এরপর নগর ভবনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবাজার মার্কেট, বংশাল, ধোলাইখাল, নয়া বাজার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন। এ সময় কয়েকটি স্থানে অবৈধ স্থাপনা নজরে আসায় মেয়র দ্রুত তা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত হেভিওয়েট প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন।
×