ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লন্ডনের আধিপত্যও অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে

টোরি-লেবার লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৭ মে ২০১৫

টোরি-লেবার লড়াই আজ

পার্টি নেতৃবৃন্দ ও প্রার্থীরা ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের আগে বুধবার শেষদিনের প্রচারাভিযানে ভোটারদের আকৃষ্ট করার শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটেনকে ‘উজ্জ্বলতর ভবিষ্যত অভিমুখে’ ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড এমন এক সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছেন ‘যে সরকার শ্রমজীবী মানুষকে সবার ওপরে স্থান দেবে।’ লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা নিক ক্লেগ দেশের ‘স্থিতিশীলতা ও শোভনতা’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। জনমত জরিপে আভাস পাওয়া গেছে, কোন দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো যথেষ্ট আসনে জয়ী হতে পারবে না। খবর বিবিসির। বিবিসির রাজনীতি বিষয়ক উপ-সম্পাদক জেমস ল্যানডেল বলেছেন, রাজনীতিবিদ, জরিপবিদ এবং গণমাধ্যম নির্বাচনের ফল কি হতে যাচ্ছে তা অনুধাবন করতে হিমশিম খাচ্ছে। অনিশ্চিত ফলাফলের ক্ষেত্রে কি ঘটতে পারে তাদের অনেকের দৃষ্টি এখন সেদিকে। তিনি বলেন, ‘এমনটি হলে বৃহস্পতিবার হয়ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শেষ নয়।’ ‘এটা ঠিক খেলার মাঝামাঝি বাঁশি বাজানোর’ মতো হতে পারে। প্রধান দলগুলোর নেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করেছেন এবং তাদের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। জনমত জরিপে প্রধান দুটি দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ (টোরি) পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টির অবস্থান খুব কাছাকাছি। তাই সবার দৃষ্টি ছোট ছোট দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির (ইউকিপ) মতো দলকে সঙ্গে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কারা সরকার গঠন করে সেদিকে। বিভিন্ন ইস্যুতে যেমন লড়াই হচ্ছে তেমনি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন দলের নেতাদের ব্যক্তিত্ব ও এবার ভোটারদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুশতাক খান বিবিসিকে বলেন, দুই প্রধান নেতা কনজারভেটিভ পার্টির ডেভিড ক্যামেরন ও লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ডের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য অনেকটা ভিন্ন। এর ওপর ভিত্তি করেই অনেক ভোটার ভোট দেবেন। তার মতে, এড মিলিব্যান্ড একজন আবেগময় ব্যক্তিত্ব ও তিনি দর্শনভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। আর ডেভিড ক্যামেরন বাস্তবমুখী, যেটা অনেক ব্রিটিশ পছন্দ করেন। মুশতাক বলেন, যারা লেবার পার্টিকে ভোট দেন, তারা মিলিব্যান্ডকে পছন্দ করেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে ক্যামেরন সম্পর্কে একটা ধারণা আছে যে, তিনি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এদিকে, ব্রিটেনের সমাজজীবনে লন্ডনের আধিপত্য ব্রিটিশ নির্বাচনের একটি ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। লন্ডন বিশ্বের ধনাঢ্যতম দেশগুলোর অন্যতম এবং এর জনসংখ্যা ৬টি ব্রিটিশ নগরীর মোট জনসংখ্যার সমান। একটি বৈশ্বিক প্রাণকেন্দ্র লন্ডন সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনযাত্রার ওপার প্রাধান্য বিস্তার করে আছে, এত ব্যাপকভাবে যে তা খুব কমই অন্যত্র দেখা যায়। যুক্তরাজ্য দশকের পর দশক ধরে এই ভারসাম্যহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। বৃহস্পতিবারের নির্বাচন ও এই বিভাজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সতর্ক করে দিয়েছেন যে, লন্ডন থেকে ক্ষমতার কেন্দ্র সরিয়ে নিলে দেশটি ‘অর্থনৈতিক ধ্বংসের’ দিকে ধাবিত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কনজারভেটিভ পার্টি ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩০৭টি আসন লাভ করে। তিনি স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) সমর্থিত একটি সম্ভাব্য সংখ্যালঘু লেবার সরকারের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছেন এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস কিংবা ইউকিপ দ্বারা প্রলুব্ধ হওয়া ভোটারদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। ক্যামেরন বলেন, ব্রিটিশ জনগণ ‘একটি প্রজন্মের জন্য তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।’ ‘আপনারা যখন বৃহস্পতিবার ভোট কেন্দ্রে যাবেন, তখন এটা জেনে রাখুন যে, আপনার ভোট আসলেই একটা ফারাক সৃষ্টি করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা একটি স্থিতিশীল সরকার এনে দিতে এবং একটি নিরাপদ ভবিষ্যত পেতে পারেন। তবে, যদি কেবল কনজারভেটিভকে এবং আপনাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাকে ভোট দেন।’ লেবার পার্টির মিলিব্যান্ডের লক্ষ্য দলের আসন সংখ্যা ২০১০-এর তুলনায় আরও বৃদ্ধি করা। তখন দলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের নেতৃত্বে ২৫৮টি আসন পেয়েছিল। তিনি বলেছেন, ভোটাররা যে ‘পরিষ্কার বাছাইয়ে’র মুখোমুখি হয়েছেন সেটা হলো ‘একটি সরকার যে শ্রমজীবী মানুষদের অগ্রাধিকার দেয় অথবা যে সরকার মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীদের জন্য কাজ করে।’ ক্লেগের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল ৫ বছর আগে তাদের পাওয়া ৫৭টি আসন ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। ক্লেগ বলেন, ‘আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি ভবিষ্যতের যে কোন কোয়ালিশন সরকারে তার পার্টিকে কেন্দ্রস্থলে ‘দৃঢ়বদ্ধ’ অবস্থানে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটসদের সমর্থন ছাড়া ‘লেবার অথবা কনজারভেটিভদের একটি বিশৃঙ্খল ও অস্থিতিশীল সংখ্যালঘু সরকার পরিচালনা করতে হবে। তারা তখন নির্ভরশীল হবে একদিকে এসএনপির ওপর কিংবা অন্যদিকে ইউকিপ বা ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ানিস্ট পার্টি (ডিইউপির) ওপর। ব্রিটোনের নির্বাচনে অন্য যেসব ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়া হবে সেগুলো হলো : ৯ হাজার কোটি পাউন্ডের বাজেট ঘাটতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা বা না থাকার প্রশ্ন, অভিবাসন ও ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রশ্ন।
×