ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দু’বছর আগে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ মে ২০১৫

ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দু’বছর আগে

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও দুই বছর আগে। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্যবার কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি উঠলেও জেলা সম্মেলনের অজুহাত দেখিয়ে বার বার পেছানো হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটির বয়স দুই বছরের জায়গায় তিন বছর পেরিয়ে চার বছরে পদার্পণ করেছে। এখনও নিত্য নতুন কৌশলে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল এড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব। দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটির তরুণ-ত্যাগী নেতারা হতাশ হচ্ছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নিষ্ক্রিয়তায় সারা দেশে সংগঠনের চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত সংগঠনে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কেন্দ্রীয় নেতারা কিছুতেই সামাল দিতে পারছে না এসব কোন্দল। কুমিল্লায় কেন্দ্রীয় সভাপতির সামনেই খুন হয়েছেন শহর শাখার সভাপতি। সম্মেলন কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ জানিয়েছেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সত্বরই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তবে কবে হতে তা তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) ধারায় বলা আছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। ২০১১ সালের ১০-১১ জুলাই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হওয়া ‘সোহাগ-নাজমুল’ কমিটির সদস্য সংখ্যা ইতোমধ্যে পাঁচ শ’ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ সংখ্যা ২৫১ হওয়ার কথা। অনেককে আবার মৌখিকভাবে কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকৃত সদস্য সংখ্যা খোদ কমিটির নেতারাই জানেন না! বার বার কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দাবি উঠলেও জেলা কমিটির সিডিউল ঘোষণা দিয়ে সম্মেলনের বিষয়টি বিভিন্নভাবে এড়িয়ে গেছেন বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব। ২০১৪ সালের শেষ দিকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার জোর দাবি উঠেছিল। এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের একটি প্রোগ্রামে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘এটাই আমাদের শেষ প্রোগ্রাম’। এরপর আরও পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে, কেন্দ্রীয় সম্মেলন আর হয়নি। সর্বশেষ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সকালে ধানম-িতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে দ্রুত সাবেক হওয়ার কথা বলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এরপর তারা বলতে শুরু করেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরই তারিখ ঘোষণা করা হবে। গত ২৮ তারিখের নির্বাচনের পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে আর কোন কথাই বলছেন না শীর্ষ নেতারা। তিন সিটির নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছিলেন ‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ জানাতে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।’ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২৯ বছরের কম বয়স্ক ও ‘নিয়মিত’ শিক্ষার্থীরাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে থাকতে পারেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতাই এখন আর নিয়মিত ছাত্র নন। কেন্দ্রের অন্তত ৩০ জন নেতা রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারী-বেসরকারী চাকরি করছেন। কমিটির দীর্ঘসূত্রতার কারণে সংগঠনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী অনেক তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ তাদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর্যায়ে। নতুন কমিটি দিতে যদি আরও বেশি দেরি হয় তাহলে অসংখ্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ সংগঠক হারিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পর্কে সংগঠনটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা একটি খসড়াও তৈরি করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ দেশবাসী কে জানানো হবে। তবে তিনি কোন নির্দিষ্ট দিন বা তারিখের কথা জানাননি।
×