ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মঙ্গলবার পার হলো দু’বছর আগের সেই ভয়াল ৫ মে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ মে ২০১৫

মঙ্গলবার পার হলো দু’বছর আগের সেই ভয়াল ৫ মে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ মঙ্গলবার গেল সেই ভয়াল ৫ মে, দুই বছর আগে যেদিন রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সন্ত্রাসের ভয়াবহ তা-বলীলা চালিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। গত দুই বছরেও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪২টি মামলার দুই বছরেও তদন্ত শেষ করতে পারল না পুলিশ। মামলাগুলোর তদন্ত কার্যত হিমাগারে ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাগুলোর আসামিদের অনেকেই গ্রেফতার হয়নি। আসামিদের অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও তৎপরতায় লিপ্ত আছেন। তদন্ত শেষ না হওয়ায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি আসামিদের। ২০১৩ সালের ৫ মে শত শত হেফাজতকর্মী রাজধানীর শাপলা চত্বরে অবস্থান করে ব্যাপক সন্ত্রাসের তা-ব চালায়। ঘটনার দিন ছাড়াও বিভিন্ন সময় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। এসব জবানবন্দীতে নাশকতার নির্দেশদাতার নাম-পরিচয় উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হেফাজত কা-ের ঘটনায় দায়ের ৪২টি মামলার মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা মামলার মধ্যে পল্টন থানায় ১৬টি, মতিঝিল থানায় ছয়টি, রমনা থানায় চারটি, যাত্রাবাড়ী থানায় তিনটি ও মিরপুর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এছাড়া শাহবাগ, রামপুরা, শেরেবাংলানগর ও কোতোয়ালি থানায় আরও ৫টি মামলা হয়। ৪২টি মামলার মধ্যে ডিবি পুলিশ ১৩টি মামলা তদন্ত করছে। অপর মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এসব মামলায় হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অন্তত ৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের অনেকে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফরিদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবু, তাজুল ইসলাম, আবুল মালেক হালিম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ফজলুল হক জিহাদী, নেজামে ইসলামের সাহিত্য সম্পাদক মুফতি হারুন ইজাহার, হেফাজতে ইসলামের অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াছ ওসমানী, নূর হোসেন কাসেমী, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, আবদুল কুদ্দুস, নুরুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আমিনী, মোস্তফা আজাদ, মুফতি নুরুল আমিন, শাখাওয়াত হোসেন, আতাউল্লাহ আমিন, গোলাম মহিউদ্দিন একরাম, শেখ লোকমান হোসেন, মুফতি শায়দুল ইসলাম প্রমুখ। রাজধানীসহ সারাদেশে হেফাজতের তা-বের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। গত ৫ মে গভীর রাতে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো অভিযানের মুখে মতিঝিল ছাড়তে বাধ্য হয় হেফাজতের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় স্মরণকালের সেই ভয়াবহ তা-ব ও সহিংস ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪২টি মামলা হয়। হেফাজতের তা-বের পর সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অন্তত আড়াই হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকেও নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো হয়। বেসরকারী মানবাধিকার সংগঠন অধিকার দাবি করেÑ ৬১ জন নিহত হয়। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে- হেফাজত ও অধিকারের তথ্য সঠিক নয়। হেফাজতের সঙ্গে সংঘর্ষে রাজধানীতে একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জন নিহত হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের পাল্টা মঞ্চ হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। যুদ্ধাপরধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে মাঠে নামে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক চট্টগ্রামের হাটহাজারীকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজত। ওই বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকামুখী লংমার্চ কর্মসূচী দিয়ে ফের আলোচনায় আসে তারা। এক মাসের মাথায় ৫ মে ঢাকা ঘেরাও এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচীতে সংগঠনটির ভয়ঙ্কর রূপ দেখা যায়। মতিঝিল-পল্টন ও আশপাশ এলাকায় সরকারী প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ব্যাংকে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। কেটে ফেলা হয় বৃক্ষরাজি। বায়তুল মোকারমে কোরান শরীফে আগুন দেয়া হয়। তাদের নৃশংস হামলা থেকে রক্ষা পায়নি শত শত ফুটপাথের দোকানিরা। তবে ওই এলাকায় জামায়াত সমর্থিত বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়নি হেফাজত। বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতায় সরকারের পতন ঘটানোর জন্য স্মরণকালের ভয়াবহ সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়েছে হেফজাতে ইসলাম। স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে বিশেষ কোন কর্মসূচী ছাড়াই হেফাজতে ইসলাম পার করল বহুল আলোচিত ৫ মে। ২০১৩ সালের এদিন রাতে হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপি ঘরানার বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। দিনটি হেফাজতে ইসলামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সংগঠনটি ৫ মে পালন করেছে কেবল দোয়া-মাহফিলের মধ্য দিয়ে। এদিন কোন ধরনের জমায়েত কিংবা মিছিল-মিটিংয়ের কর্মসূচী পালন করা হয়নি। হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থেকে জনকণ্ঠের সংবাদদাতা জানান, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ৫ মে নিহতদের স্মরণে দোয়া-মাহফিল। এছাড়া বিশেষ কোন কর্মসূচী ছিল না কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনটির পক্ষ থেকে। আজ বুধবার হাটহাজারীর পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রেসালত সম্মেলনের কর্মসূচী রয়েছে। তবে এটি ৫ মে স্মরণে নয় বরং এটি একটি নিয়মিত আয়োজন। আজ রক্তাক্ত সেই ৬ মে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, আজ রক্তাক্ত সেই ৬ মে। এদিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলাম, স্থানীয় লোকজন, মাদ্রাসার ছাত্র, হেফাজতের লেবাসে থাকা জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টার ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় দুই বিজিবি সদস্য ও দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হন। আহত হয়েছিলেন কমপক্ষ অর্ধশত। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিল নিরীহ। এদের পরিবারে আজও কান্না থামেনি। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পরদিন ৬ মে সিদ্ধিরগঞ্জে এ রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছিল।
×