ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত দাবি ॥ স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত?

ভৈরবে ৬৯ মুক্তিযোদ্ধার সনদ স্থগিত করায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৫ মে ২০১৫

ভৈরবে ৬৯ মুক্তিযোদ্ধার সনদ স্থগিত করায় তোলপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, ৪ মে ॥ ভৈরবের বীরপ্রতীক, শহীদসহ ৬৯ মুক্তিযোদ্ধার সনদ স্থগিত করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল প্রকাশিত যাচাই- বাছাইয়ের তালিকা নিয়ে তোলপাড় চলছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক (উন্নয়ন, পরিকল্পনা, এস্টেট ও কল্যাণ) জেসমিন আক্তার এবং সার্টিফিকেট সহকারী নয়ন দেবনাথের যৌথ স্বাক্ষরিত এক পত্রের আলোকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম আলম, ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তারকে নির্দেশনামূলক প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এক বীরপ্রতীক, শহীদ এবং ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কমান্ডার (অব) আবদুর রউফ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকসহ ৬৯ জন প্রকৃত বীরমুক্তিযোদ্ধার সনদ স্থগিত করায় প্রকাশিত তালিকা নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। একই কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। সম্প্রতি প্রকাশিত এ তালিকা স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে এলে শুরু হয় তোলপাড়। সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সহযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রকাশিত এ তালিকা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে বিতর্কিত করে তুলবে। এটি ওই মন্ত্রণালয়সহ সহযোগী দফতরে ঘাঁপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীচক্রের কু-মতলবের কর্ম কি-না, সেটি তলিয়ে দেখারও দাবি তাদের। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (গেজেট নোটিফিকেশন নম্বর ৮/২৫/ডি-১/৭২-১৩৭৮) উপাধিপ্রাপ্ত ৪২৬ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকার ১৫৫ নম্বর হলেন, ভৈরবের মুক্তিযোদ্ধা আমীর হোসেন বীর প্রতীক। পুলিশ বাহিনীর সদস্য আমীর হোসেন ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। ২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী রাজারবাগ আক্রমণ করলে তারা প্রতিরোধ করে তোলেন। প্রতিরোধ ব্যর্থ হলে তিনি পালিয়ে চলে আসেন ভৈরবে তার নিজগ্রাম কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আদর্শপাড়ায়। জুনের প্রথমদিকে চলে যান ভারত। যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। তাকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথমে তিন নম্বর সেক্টরে পরে এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর লিখিত ইতিহাসধর্মী বিভিন্ন লেখা থেকে ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়, ভৈরবের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন আশুরঞ্জন দে। ’৭১-এ তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনের তান্দুয়া ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং নেন। ১৯৭১-এর ২৪ অক্টোবরে তিনি ২৮৩ মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ব্রাক্ষণবাড়িয়া দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বর্তমান কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুর দিয়ে ভৈরব আসার পথে তাদের দলটি পাকবাহিনীর এ্যাম্বুশে পড়ে যায়। উভয়পক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এর ২/৩দিন পর তাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে অমানবিক নির্যাতনে হত্যা করে খালে ফেলে দেয়া হয়। পরে তার মৃতদেহ কসবার কোল্লাপাথর নামক স্থানে সৎকার করা হয়। ওইস্থানে এখনও শহীদ আশুরঞ্জনের নাম সম্বলিত স্মৃতিসৌধ রয়েছে। ১৯৭২ সালে তার স্মরণে ভৈরবের পৌর শহরের টিনবাজারের একটি সড়কের নামকরণ হয় ‘শহীদ আশুরঞ্জন সড়ক’। শহীদ আশুরঞ্জন দে ২৮৩ মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্য, ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ ও রফিকুল ইসলাম মহিলা অনার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম ওই সময়ের বিভিন্ন ঘটনাসহ শহীদ আশুরঞ্জন দের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার বর্ণনা নিয়ে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ স্থগিত করাকে সুগভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। এমন ঘৃণ্য কাজে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তিরও দাবি জানান ওই দুই বীরমুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অব) আবদুর রউফের চাচাত ভাই, ভৈরব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক কালা মিয়ার ছেলে, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামন ফারুক বলেন, ‘এ তালিকা প্রণয়নের আগে আমাদের কাছে প্রমাণাদি দেখতে চাওয়া উচিত ছিল। এটি করে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। সমাজে ছোট করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। তারা এর প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভৈরব মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার এ তালিকাতে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে স্বীকার করে বলেন, ‘ভাল করে প্রচার চালিয়ে সবার উপস্থিতিতে যাচাই-বাছাই করে সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে।’
×