ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র রাজনীতিকে বিদায় জানিয়েছেন

মনজুর আলম এখন আবার পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৫ মে ২০১৫

মনজুর আলম এখন আবার পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও সদ্যসমাপ্ত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত পরাজিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মনোনিবেশ করেছেন। ব্যবসায় জড়িত হয়ে সফল হওয়ার পর রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনবার হয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আর এক দফায় মেয়র। সে রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে তিনি এখন আবার পুরোদস্তুর ব্যবসায়িকে পরিণত হয়েছেন। সোমবার যোগাযোগ করা হলে মনজুর আলম জনকণ্ঠকে জানান, গত ২৮ এপ্রিল সিটি নির্বাচনে ভোটের দিন তিনি সবদিক ভেবে-চিন্তে নির্বাচন বর্জন করেছেন এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন কি-না জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এখানে লিখিতভাবে দেয়ার কোন অবকাশ নেই। কারণ আমি আর কোন ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাই না। অপরদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকেও আপাতত তাকে কোন ধরনের ফিরে আসা বা তার সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার অনুরোধ বা কোন ধরনের তৎপরতা নেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, একটি উত্তেজনাকর পরিবেশে মনজুর আলম নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পরিবেশ পরিস্থিতি ঠা-া হোক। একটি অস্বাভাবিক পরিবেশে তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন। সবকিছু শান্ত ও স্বাভাবিক হলে বিষয়টি নিয়ে তারা ভাববেন বলে জানান। এদিকে, একের পর এক রাজনৈতিক বিপর্যয়ে দলের সর্বত্র এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। লাগাতার অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার ও মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন বহু নেতাকর্মী। এ অবস্থায় তাদের সমর্থক মহলে চরম হতাশা বিরাজমান। এছাড়া মনজুর আলমের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে তেমন কোন প্রতিক্রিয়াও নেই। কারণ তিনি বিএনপি রাজনীতির আষ্টেপৃষ্ঠে কখনও জড়িত ছিলেন না। যা ছিলেন নামকাওয়াস্তে। অপরদিকে, ২০১০ সালে বিএনপির সমর্থনে মনজুর আলম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সচেতন মহলের সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি সামান্যতমও সফল হননি। এছাড়া তার পূর্বের তিন তিনবারের হ্যাটট্রিক বিজয়ী মেয়র আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্পোরেশনের স্বার্থে যে সমস্ত আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন মনজুর আলম এ সব প্রকল্পের বেশকিছু ধরে রাখতেও পারেননি। এক্ষেত্রেও তার ব্যর্থতা ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান। কিন্তু মনজুর আলম নির্বাচনের পূর্বে তার নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রচার অভিযানে বলে গেছেন, তিনি সরকার থেকে কাক্সিক্ষত অর্থ বরাদ্দ ও সহযোগিতা পাননি। তাই জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। শুধু তাই নয় তার আমলে সরকার থেকে কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন তারও একটি ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। এদিকে, নির্বাচনের পর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন এবং এর যথাযথ উন্নয়ন খাতে বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বিপরীতে মনজুর আলম জানিয়েছেন, বহু প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ চেয়েও পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকারবিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে এগুতে হয়েছে বিপরীত স্র্রোতে। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে যে সব সহযোগিতা সহজে পাওয়ার কথা সে ক্ষেত্রে তিনি তা পাননি বলেই জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে শতভাগ পূর্ণতা আনা সম্ভব হয়নি। এখানে উল্লেখ্য, মনজুর আলম ও তার পরিবার মূলত আওয়ামী ঘরানার। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত মনজুর আলম আওয়ামী ঘরানার হিসেবে টানা তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময়ে সিটি নির্বাচন এলে বিএনপি তাকে সমর্থন দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করালে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। অনুরূপভাবে গেল ২৮ এপ্রিল নির্বাচনেও একই কায়দায় তাকে সমর্থন দেয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। কিন্তু ভাগ্যদেবী তাকে এবার ধরা দেয়নি। দলের হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া অধিকাংশ ছিলেন নীরব ভূমিকায়। নির্বাচনের পূর্বদিন পর্যন্ত তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের পেছনে বহু অর্থ ব্যয় করেছেন। কিন্তু ভোটের দিন তাদের কাছ থেকে তিনি অনুরূপ সাড়া পাননি। শুধু তাই নয়, ভোট শুরু হওয়ার সোয়া ৩ ঘণ্টার মধ্যে তিনি যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তার নেপথ্যে ছিল বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে তিনি ক্রমাগতভাবে খারাপ খবর পাচ্ছিলেন। এছাড়া তার দলের কাছের এবং শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে বর্জনের সিদ্ধান্ত পেয়ে তিনি তাতে রাজি হন এবং সে অনুযায়ী ঘোষণা দেন। এছাড়া রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত তার একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সিদ্ধান্তের জের। উল্লেখ্য, মনজুর আলমের পরিবার ব্যাংক, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন জাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশীদার। এছাড়া তার পরিবারে রয়েছে বেশকিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠান। রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলার ঘোষণা দানকালে তিনি বলেই দিয়েছেন এখন থেকে তিনি পুনরায় সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন। সোমবার তিনি জানিয়েছেন, নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় তাদের পারিবারিক ব্যবসায়িক গ্রুপ প্রতিষ্ঠানে তিনি ইতোমধ্যে বসতে শুরু করেছেন। মনোনিবেশ করছেন ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হতে।
×