ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোকো হারামের জঙ্গীরা পাথর ছুড়ে হত্যা করে বন্দীদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৫ মে ২০১৫

বোকো হারামের জঙ্গীরা পাথর ছুড়ে হত্যা করে বন্দীদের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বোকো হারাম জঙ্গীদের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েক শ’ নারী ও শিশু তাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছে। জঙ্গী সংগঠন বোকো হারামের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর আসামা উমারু নামে এক নারী প্রথমবারের মতো রবিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বন্দীদশার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘তারা (বোকো হারাম জঙ্গী) আমাদের এক ইঞ্চিও নড়তে দিত না। টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তারা আমাদের সঙ্গে যেত। আমাদের জঙ্গলে দাস হিসেবে রাখা হয়েছিল। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে, আমরা আজ জীবিত। আমাদের উদ্ধার করার জন্য নাইজিরীয় সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ।’ খবর বিবিসি ও ওয়েবসাইটের। নাইজিরীয় সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামবিসা জঙ্গলে বোকো হারামের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০০ নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে। পিকআপ ট্রাকে করে তিনদিন পর তাদের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইয়োলার সরকারী শরণার্থী শিবিরে আনা হয়। সেখানে তাদের খাবার ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মুক্তি পাওয়া বন্দীরা বলেন, নারী ও শিশুদের জিম্মি করার আগে তাদের সামনেই পরিবারের বড় ছেলে ও পুরুষদের হত্যা করেছে বোকো হারাম জঙ্গীরা। জঙ্গলে জিম্মি থাকা অবস্থায় অনেক নারী ও শিশু ক্ষুধা ও রোগে ভুগে মারা গেছে। শনিবার রাতে হাতে ও মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা ২৭৫ নারী ও শিশু ক্যাম্পে পৌঁছায়। গত মঙ্গলবার থেকে প্রায় সাত শ’ জিম্মিকে জঙ্গীদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। দুই সন্তানের মা ২৪ বছর বয়সী উমারু বলেন, জঙ্গলে আমরা সেনাদের দেখে হাত উঠিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলাম। তখন জঙ্গীরা অন্য আস্তানায় পালিয়ে যেতে বললে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। তখন তারা আমাদের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। পাথরের আঘাতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কতজন মারা যায় তা আমরা জানি না। সেখানে বন্দীরা অপুষ্টি ও রোগে ভুগছিল। আমরা প্রতিদিন দেখতাম, আমাদের মধ্য থেকে একজন করে মারা যাচ্ছে। আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতাম। বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া অপর নারী সেসিলিয়া আবেল বলেন, তার আট সন্তানসহ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার আগে তার সামনেই তার স্বামী ও বড় ছেলেকে হত্যা করে জঙ্গীরা। তাদের দিনে মাত্র একবার খাবার দেয়া হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেলে শুধু শুকনা ভুট্টা খেতে দেয়া হতো। এটি মানুষের জন্য মোটেও ভাল খাবার নয়। অপুষ্টি ও রোগে সামবিসা জঙ্গলে আমাদের মধ্য থেকে অনেকেই মারা গেছে। এমনকি উদ্ধারের পর আসার পথে ১০ জনের মৃত্যু হয়। উমারু বলেন, জঙ্গলে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় অনেকেই নির্বিচারে মারা যায়। কারণ সেনারা বুঝতে পারছিল না যে, আমরা তাদের শত্রু নই। তিনি আরও বলেন, অভিযানের সময় অনেক নারী ও শিশু সেনাবাহিনীর ট্রাকচাপায় মারা যায়। সালামাতু বুলামা বলেন, জঙ্গীরা যেসব মহিলাকে পাথর ছুড়ে মেরেছিল, আমি তাদের মধ্যে একজন। সেনাবাহিনী বলছে, সামবিসা জঙ্গলে বোকো হারামের অনেক আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে। এদিকে সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বোকো হারামকে খাবার ও জ্বালানি সরবরাহকারী এক ব্যক্তিকে রবিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, জঙ্গীরা ২০১৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি নারী ও মেয়েকে জিম্মি করেছে। তাদের অনেককেই রাঁধুনি, যৌনদাসী ও মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বোকো হারাম জঙ্গীরা। অনেক মহিলাকে জঙ্গীরা জোর করে বিয়ে করে। ২৭ বছর বয়সী নারী লামি মুসা বলেন, আমার সৌভাগ্য যে, আমাকে সে ভাগ্য বরণ করতে হয়নি। তিনি বলেন, যখন জঙ্গীরা বুঝতে পারে যে, আমি গর্ভবতী, তখন তারা বলে আমি স্বামীর দ্বারা গর্ভবতী হয়েছি, যাকে তারা হত্যা করেছে। জঙ্গীদের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে মুসা বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের পর তারা তাদের কমান্ডারের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দেবে বলে জানায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুসা বলেন, যেদিন রাতে আমি সন্তান প্রসব করি, পরদিন সকালে সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে। বোকো হারামের কবল থেকে উদ্ধার হওয়াদের শিবির পরিদর্শনের পর এপি রিপোর্টার মিশেল ফল বিবিসিকে বলেন, শিশুদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা এক একেকটা ছোট্ট কঙ্কাল। তাদের চামড়াগুলো শরীরের হাড়ের সঙ্গে লেগেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল তারা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। মোহাম্মদ আমিন সোলাইমান নামে এক চিকিৎসক বলেন, একটি ক্লিনিকে অপুষ্টির শিকার শিশুদের স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার দেয়া হচ্ছে। ওই ক্লিনিকে মহিলাদেরও চেকআপ করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এপি নিশ্চিত করেছে যে, উদ্ধার হওয়াদের বেশিরভাগই চিবক শহরের কাছের গ্রাম গুমসুমারীর বাসিন্দা। তবে এক বছর আগে চিবক থেকে অপহৃত ২০০ স্কুল শিক্ষার্থী উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে আছে কি না সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
×