ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা ॥ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিচার হবে ;###;চার মামলায় খালেদা হুকুমের আসামি;###;বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এখতিয়ারসম্পন্ন দায়রা জজ বিচার করবেন

২শ’ মামলায় চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ মে ২০১৫

২শ’ মামলায় চার্জশীট

তপন বিশ্বাস ॥ দেশে প্রথমবারের মতো সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা পরিচালিত হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে এই আইনের অধীনে মোট ২ শ’ মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করতে আইনটির অধীনে মামলার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। সত্বরই মামলার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ২৭ ধারার অধীনে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা ও জেলা জজ পর্যায়ের বিচারকের সমন্বয়ে এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ বিচারের জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯’র ধারা ২৮-এর অধীনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ওই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ এবং দায়েরকৃত মামলাসমূহ এখতিয়ার সম্পন্ন দায়রা জজ বিচার করতে পারবেন। এমনকি দায়রা জজ তার দায়রা ডিভিশনে যে কোন অতিরিক্ত জেলা জজকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে মামলা বিচারের জন্য তার অধীনস্থ যে কোন বিচারকের নিকট মামলাটি স্থানান্তর করতে পারবেন। দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ সন্ত্রাস বিরোধী আইন মামলা পরিচালনাকালে ফৌজদারি কার্যবিধির অধ্যায় ২৩-এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করবেন। ধারা ২৭-এর বিধানের কারণে সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের নতুন করে আর কোন প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রয়োজন নেই। গত ২৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোগপত্র দিয়ে বিচার এগিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে তাগিদ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা দেয়া। যারা পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, মানুষের ক্ষতি করেছে, মানুষের ওপর আঘাত করেছে, জীবন্ত মানুষকে যারা এভাবে দগ্ধ করেছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ-হরতালে নাশকতা ও সহিংসতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে যানবাহনে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার অন্তত চারটি ঘটনায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের জীবন নিরাপদ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই একদিকে যৌথ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, অন্যদিকে যেসব মামলা হয়েছে তা তদারকি করতে হবে। শুধু মামলা করলেই হবে না, গ্রেফতার করলেই হবে না, মামলাগুলোতে যাতে দ্রুত অভিযোগপত্র দিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাধারণ নির্বাচন ঘিরে সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় বিএনপি-জামায়াতের তা-বের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় ‘পরিস্থিতি সামাল দেয়ায়’ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও গত জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধে ফিরে আসে নাশকতা। সরকার ‘উন্নয়নের দিকে মনযোগ দেয়ায়’ গত জানুয়ারি থেকে আবারও নাশকতা চালানো হয়েছে মন্তব্য করে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের সুযোগ না দেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে আর সন্ত্রাস ও নাশকতা না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, এটা আমি প্রত্যেক জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের যারা, সকলকে আমি অনুরোধ করব, মামলাগুলোর যেন দ্রুত চার্জশীট হয়, দ্রুত সম্পন্ন হয়। এটা না হলে কয়েকদিন পর আবার জামিনে বের হয়ে এসে ওই একই কাজ করবে।
×