ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এর মধ্যে রয়েছে ২৪১ বিনিয়োগ প্রকল্প, ১১ জেডিসিএফ ও ২৮ কারিগরি সহায়তা প্রকল্প

জুনের মধ্যেই ২৮০ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৪ মে ২০১৫

জুনের মধ্যেই ২৮০ উন্নয়ন  প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী জুন মাসের মধ্যেই সমাপ্ত হচ্ছে সরকারের ২৮০ উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ২৪১, জাপানী ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ১১ এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে ২৮। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) সংশোধন সময় সমাপ্তের এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মূল এডিপিতে সমাপ্তির লক্ষ্য ছিল ৩২৪ প্রকল্প। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৮৫, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩০ এবং জেডিসিএফ প্রকল্প হচ্ছে ৯। কিন্তু সর্বশেষ বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে ২৮০ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আশা করছি জুনের মধ্যেই এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে এর প্রভাব সরাসরি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পড়বে। এসব প্রকল্প যাতে চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সমাপ্ত করা যায় এ জন্য সংশোধিত এডিপিতে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দও নিশ্চিত করা হয়েছে। কেননা বরাদ্দ নিশ্চিত করেই বলা হয় এগুলো শেষ করতে হবে। তবে শুধু বরাদ্দই প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণ নয়, এর সঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বদলি, ভূমি সমস্যা ও প্রকিউরমেন্ট সমস্যাসহ নানা বাস্তব সমস্যা থাকে। এজন্য বরাদ্দের অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে নাÑ এমন নজির খুব কম আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়নের দিকে ভবিষ্যতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। সূত্র জানায়, সমাপ্ত হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিদ্যুত বিভাগের রয়েছে ১০ প্রকল্প। তৈল গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ১৫ এবং পরিবহন খাতের রয়েছে মোট ৪৮ প্রকল্প। বাকিগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের প্রকল্প। বিদ্যুত খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ দশ শহর বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন (সংশোধিত) প্রকল্প, এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে। কনস্ট্রাকশন অব হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটেড সাবস্টেশন প্রকল্প, এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের ১ জুলাই। ২১ জেলা বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি। পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ খুলনার বিভাগীয় কার্যক্রম-১, বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাইয়ে। আমিনবাজার-ওল্ড এয়ারপোর্ট ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্প, বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ (সংশোধিত), বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে এবং ইমার্জেন্সি রিহ্যাবিলিটেশন এক্সপানশন অব আরবানস এরিয়াস এ্যান্ড পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম আন্ডার রাজশাহী নর্দান জোন (সংশোধিত) প্রকল্প, বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প (সংশোধিত), এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। গ্যাস ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি এক্সপানশন প্রকল্প (আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ), বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে। মোবারকপুর তেল/গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প (সংশোধিত), বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে। হাটিকুমরুল-ভেড়ামারা গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প (সংশোধিত), বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। বনপাড়া-রাজশাহী গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। অগমেন্টেশন অব গ্যাস প্রোডাকশন আন্ডার ফাস্টট্রাক প্রোগ্রাম (বিজিএফএল ও এসজিএফএলের অধীনে ৫ কূপ খনন ও একটি কূপের ওয়ার্ক ওভার) প্রকল্প, বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই মাসে এবং তিতাস গ্যাস ফিল্ডে গ্যাস উদ্গিরণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং এ ফিল্ডের মূল্যায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প, বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে। পরিবহন খাতের সমাপ্ত হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প হচ্ছেÑ সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত), বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। বিরুলিয়া-আশুরিয়া সড়ক নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্প, বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের জুলাই মাসে। পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের (২২ কিলোমিটার) অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প (খেপুপাড়া-কুয়াকাটা অংশ), শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। কুমিল্লা-বিবিরবাজার স্থলবন্দর সড়ক উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে। চিম্বুক-রুমা সড়কের ৪২তম কিলোমিটার এ সংগুয়া নদীর ওপর ২১৭ দশমিক ১৫ মিটার দীর্ঘ প্রি-স্টেড গার্ডার সেতু বিশিষ্ট রুমা সেতুর অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। নকলা বাইপাস সড়ক (জেড-৪৬১০) নির্মাণ এবং সন্ধ্যাকুড়া-হাতিপাগার-ধনুয়াকামাল (সীমান্ত সড়ক) এর ১০ কিলোমিটারে চেন্নাখালী নদীর ওপর ১৬৫ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সায়দাবাদ-এনায়েতপুর (খাজা ইউনূস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) সড়ক বাইলেন নির্মাণ, শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই মাসে। উল্লাপাড়া বেলকুচি সড়কের সোনাতলা ঘাটে করতোয়া নদীর ওপর ৩৪৭ দশমিক ২৯ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই মাসে। শ্যামনগর-জারিয়া-বিরিসিরি-দুর্গাপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই মাসে। কুড়িগ্রাম-উলিপুর-চিলমারি সড়ক উন্নয়ন (সংশোধিত) প্রকল্প, শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের জুলাই মাসে। সুজানগর হতে লালনশাহ্ সেতু পর্যন্ত মুজিব বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ, শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই মাসে এবং যশোর-খুলনা সড়ক বিভাগের বিভিন্ন সড়কের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প, এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন যাতে বিলম্বিত না হয় সেজন্য বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বদলিতে কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। তাছাড়া তিন বছরের আগে বড় কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলে পিডিদের বদলি করা যাবে না। উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন যাতে বাধা না হয় সে জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
×