ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তৈরি পোশাক রফতানিতে রেকর্ড সৃষ্টির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৪ মে ২০১৫

তৈরি পোশাক রফতানিতে রেকর্ড সৃষ্টির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে রেকর্ড গড়তে চায় বাংলাদেশ। এলক্ষ্যে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানির যে রোডম্যাপ প্রণীত হয়েছে তা বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার। এ খাতের উদ্যোক্তারাও মনে করছেন, অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া আসন্ন বাজেটও পোশাক খাত উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে ১০টি বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। যেখানে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তুলতে গ্রীন গার্মেন্টস এবং পৃথক গার্মেন্টস পল্লী দ্রুত বাস্তবায়নে তাগিদ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, আগামী ২০২১ সালে বিশ্বে পোশাকশিল্পের বাজার দাঁড়াবে ৬৫ হাজার কোটি ডলারে। বর্তমানে আছে ৪৫ হাজার কোটি ডলারের বাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৫ শতাংশ। এটি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলেই লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। পোশাক রফতানি নতুন রেকর্ড অর্জিত হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই রোডম্যাপের আওতায় মুন্সীগঞ্জে দেশে প্রথমবারের মতো গড়ে তোলা হচ্ছে গার্মেন্টস পল্লী। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের কাছে এ ধরনের পল্লী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া পোশাক শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে জাপান, চীন, কোরিয়া এবং ভারতের বহু বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, প্রণীত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে তৈরি পোশাক খাতে শ্রম কল্যাণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সোস্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম ফর আরএমজি গঠন করেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই সুবিধা ধরে রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে সাব-কন্ট্রাকটিং ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে সাব-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা প্রণয়ন, শ্রম আইন সংশোধন করে বিধিমালা প্রণয়ন এবং এ খাতের শ্রমিকদের পেশাগত মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা, তাজরীনে ভয়াবহ অগ্নিকা- এবং যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর এ শিল্পখাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। জানা গেছে, রফতানি বাণিজ্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যে শুধু পোশাক শিল্পে আরও ৩০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এ শিল্পে ৪০ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এছাড়া পোশাক শিল্পে এখন প্রতিবছর গড়ে ১৫-২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আগামী ২০ বছরনাগাদ এ শিল্পের গ্রোথ এ হারেই বাড়বে। এই গ্রোথ ধরে রাখার জন্য গার্মেন্টস পল্লী স্থাপনসহ অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে গত সাড়ে ছয় বছরে পোশাক শিল্পে নতুন রেকর্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশ। নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ওই সময়ে পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বছরে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করছে বাংলাদেশ। তবে চলতি অর্থবছরে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করায় শ্রমিকদের বেতন তিনগুণ বেড়েছে। ওই সময়ে বেড়েছে দেশের মোট রফতানিও। পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে। বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত অবস্থান সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পপার্ক স্থাপন ॥ ঢাকার ওপর চাপ কমাতে মুন্সীগঞ্জে গড়ে তোলা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পপার্ক। এই শিল্পপার্ক তৈরি হওয়ার পর সেখানে স্থানান্তরিত হবে প্রায় ১ হাজার পোশাক কারখানা। শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তোলা হবে এই শিল্পপার্কে। তৈরি হবে বিশ্বমানের পোশাক। এ কারণে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়ার দিকে নজর এখন গার্মেন্ট শিল্পমালিকদের। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করার চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য বিজিএমইএ প্রস্তুত রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগামী জুন মাসের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করবে বিজিএমইএ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে আরও জানিয়েছেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় একটি গার্মেন্ট শিল্পপার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এভাবে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি শিল্পপার্ক করা হবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এক নম্বর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও কমপ্লায়েন্ট কারখানা নিয়ে এখনও ক্রেতাদের চাপ রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের শিল্পপার্ক তৈরি করা গেলে শতভাগ কমপ্লায়েন্ট কারখানা তৈরি হবে। দেশের পোশাক রফতানি বাড়বে। এজন্য এ ধরনের শিল্পপার্ক আরও তৈরি করবে সরকার। জানা গেছে, বাউশিয়ার শিল্পপার্কে স্থানান্তরিত হলে সেখানে প্রায় ৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যার প্রায় ৮০ শতাংশই হবে নারী। এছাড়া কারখানা স্থানান্তরের ফলে রাজধানীর পরিবেশের উপরও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাজেটে যা চাওয়া হয়েছে ॥ পোশাক খাত উন্নয়নে আসন্ন অর্থবছরে ১০টি প্রস্তাব দিয়েছে এ খাতের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ। ভাড়া ব্যবস্থায় পরিচালিত কারখানাগুলো দ্রুত স্থানান্তর ও সেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ সুবিধা চেয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। একইসঙ্গে এ খাতে বিদ্যমান উৎসে কর পাঁচ বছরের জন্য বহাল রাখার দাবি জানান তারা। শুল্ক সংক্রান্ত, আয়কর, মূসক, নগদ সহায়তা, ব্যাংক সুদ ৫-৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, ইটিপি স্থাপনে ৩ শতাংশ সুদ নির্ধারণ, মানব সম্পদ উন্নয়নে শ্রমঘন অঞ্চলগুলোতে জোন ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। ভিশন-২১ সামনে রেখে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় ৫৩১ একর জমির ওপর গার্মেন্টস ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে। এ জোনে কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা দরকার। তিনি বলেন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বেশিরভাগ পোশাক কারখানাগুলোতে নতুন বিনিয়োগ করতে হবে। এজন্য নীতিগত সহায়তাও বাড়ানো প্রয়োজন।
×