ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির এত ভোট ॥ অনেক প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৩ মে ২০১৫

বিএনপির এত ভোট ॥ অনেক প্রশ্ন

২৮ এপ্রিল তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিংবা বলা যায় অনেক প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দৈনিক ইত্তেফাকে শিরোনামে দেখা গেছে, ১০০ দিনের অবরোধে ১৫৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তার রেশ কাটতে না কাটতে সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তিন সিটি নির্বাচনে ৯ লাখ ২৪ হাজার ২৯১ ভোট পেয়েছে। যে কেউ বলতে পারেন, ঠিক ঠিক নির্বাচন হলে আরও অনেক ভোট পেতেন। এবং ১৯ জন কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন। আমরা জানি, এর আগে পাঁচটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। সেখানে জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন। সেই সময় সারাদিন ধরে বিএনপির পল্টন অফিস থেকে ক্রমাগতভাবে বলতে শুনেছিলাম, ভোটে কারচুপি হচ্ছে। অথচ ফল ঘোষণার পর বিএনপিই নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছে। নির্বাচন জিতলে সুষ্ঠু আর হারলে বলেন কারচুপি। নির্বাচনের দিন বারোটা পর্যন্ত জানালেন, ভোট ঠিকঠাক মতোই হচ্ছে। হঠাৎ করে নির্বাচন বর্জন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি, বিএনপির তিন মেয়রপ্রার্থী ৯ লাখ ২৪ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়েছে। এই নির্বাচনে আরেকটি লক্ষণীয় দল বর্জন করলেও সমর্থকরা ঠিকই দিয়েছেন এবং ভোট দিতে পেরেছেন। তাহলে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যাবে, বিএনপির কোন ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো না থাকার পরও বিএনপির প্রার্থী ভোট পাচ্ছে কেন? যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয় না বছরের পর বছর। স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে মাঝে মাঝে। জানা যায়, সেখানে সদস্যদের মোবাইল ফোনগুলো অফিসের গেটে জমা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সেই দলের সমর্থিত প্রার্থীরা এত ভোট পাচ্ছে কিভাবে? নিশ্চয় কোন রহস্য আছে। তাহলে কি আমরা ধরে নেব আমাদের রাজনৈতিক রসায়নে কোন ত্রুটি আছে। তারপরও জোর দিয়েই বলা যায় এবারের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক কোন কাঠামো নেই। আওয়ামী লীগের মেয়র পদে বেশ কয়েক জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহের কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিন সিটিতে তিনজন প্রার্থী দিতে পেরেছিল। কিন্তু বিএনপি মেয়র পদের আগ্রহী প্রার্থীদের একজনের কথা জানি নির্বাচনের দিনেও সব কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে তাঁর পোস্টার শোভা পেয়েছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সবগুলো কেন্দ্রের বাইরে ড. আসাদুজ্জামান রিপনের পোস্টার লাগানো ছিল। আবার তিনি নির্বাচন বর্জনের সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীর পাশে বসা ছিলেন, এটা কোনভাবেই দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে না। এতকিছুর পরও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে এত ভোট! সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। ফলাফলে দেখা গেল বিএনপির প্রার্থীরাই প্রাপ্ত ভোটের ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তাহলে কি আওয়ামী সমর্থকরা বিএনপির প্রার্থীর ব্যালটে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে? ভয়ঙ্কর সব তথ্য। এবারের নির্বাচনকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন। মাহী বি চৌধুরী বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হতে পারলেন না কেন- এ প্রশ্ন আসছে। এ কথা তো ঠিক, যত অত্যাচার নির্যাতন করা হোক না কেন, কফিলউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বি চৌধুরী এবং তস্যপুত্র শেষ বিচারে শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষেই থাকবে। কারা মাহী বি চৌধুরীর ওপর হামলা করেছিল। এক সাক্ষাতকারে দেখা গেল, তাবিথ আওয়ালের লোকেরা মাহী বি চৌধুরীর ওপর আক্রমণ করেছে। আবার আরেক সংবাদে জানা যায়, হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। জুনায়েদ সাকির পোলিং এজেন্ট কতজন ছিল- এ প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক। কম করে হলেও পাঁচ হাজার পোলিং এজেন্ট প্রয়োজন হয়। তার সংগঠনের এতজন কর্মী আছে কিনা? আর আওয়ামী লীগের লড়াই তো বিএনপির সঙ্গে। সেখানে তার কিংবা তার কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা করতে যাওয়ার কথা না। ঢাকা শহরে সিপিবি- বাসদের কর্মী সংখ্যা কত? এই দুটি দলের ৯৩ ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কাঠামো থাকার কথা না। তাহলে পোলিং এজেন্টরা আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এসেছিল? আওয়ামী লীগের কর্মীর সিপিবি-বাসদের কর্মীদের বের করে দেয়ার কোন যুক্তি নেই। এখনও পর্যন্ত বিএনপি ও তার মিত্রশক্তিগুলো কেন্দ্র অনুযায়ী অনিয়মের কোন তথ্য দিতে পারেনি। সবই ভাসা ভাসা অভিযোগ। দুই মহানগরীর ২৭০১ কেন্দ্রের মধ্যের মাত্র ৩১টি কেন্দ্রের অনিয়মের অভিয়োগ এসেছে। দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদ অনুযায়ী ৫৫টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। সর্বশেষ জানা গেছে, মোট ৬৮টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। এই হিসাবে শতকরা হিসাব কত? অঙ্কের হিসাবে ২ শতাংশেরও কম। তাছাড়া বিএনপি ২৭০১ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু করার আগে কোথাও কোন পোলিং এজেন্টদের তালিকা দেয়নি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিএনপির কোন প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সংক্রান্ত কোন অভিযোগ গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করতে দেখা যায়নি। পোলিং এজেন্টরা সাধারণ ভোটগ্রহণের আধাঘণ্টা আগেই আসেন। তাহলে এই চার ঘণ্টায় বিএনপির কোন অভিযোগ ছিল না কেন- এই প্রশ্ন আসতেই পারে। তাবিথ আওয়াল বিকেল বেলায় আবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি আবার ভোট করতে চান। কিন্তু বিএনপি কখনই ভোটে অংশগ্রহণ করতে চায় না। তারা ভোট নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায়। গণমাধ্যম কোরামিন দিয়ে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু কতদিন পারবে? লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
×