ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন সিটি নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল লাভবান

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১ মে ২০১৫

তিন সিটি নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল লাভবান

রাজন ভট্টাচার্য ॥ শেষ হলো তিন সিটির নির্বাচন। চলছে নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে কোন্ দল কতটুকু লাভবান হয়েছে এমন আলোচনা এখন সবখানেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, নির্বাচনে সফল হয়েছে ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস তাণ্ডব আর মানুষ হত্যার জবাব দিয়েছেন ভোটাররা। ভোট হয়েছে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক শক্তির লড়াই। এদিকে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির জন্য ভুল। অনেকেই বিষয়টিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছেন। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টাও সফল হবে না দলটির জন্য। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচন থেকে সড়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। ফের সহিংস আন্দোলনের দিকে যেতে পারে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক জনসমর্থন হারানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও। বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক নির্বাচনের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ভোট গ্রহণ শুরুর পর নির্বাচন থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের সরে যাওয়া পূর্বপরিকল্পিত ছিল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পর মেয়র নির্বাচন কেন্দ্র করে বড় দুই রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি করেছিল। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে সেই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারেনি। ভোট শেষ হওয়ার আগেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে ভাল করেননি। তাদের সরে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছে হেরে যাওয়ার ভয়ে তারা এমনটা করেছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে টানা তিন মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধসহ দেশব্যাপী সহিংস তা-ব থেকে সরে এসে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ২০ দলের এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন সবাই। দলটির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা। জনগণ তাদের সঙ্গে আছেন এটি প্রমাণ দিতে চায় নির্বাচনে জয়ী হয়ে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। কার্যত আন্দোলন-কর্মসূচীতে সফল হতে পারেনি বিএনপি। টানা আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসার পথ হিসেবে সিটি নির্বাচন বেছে নেয় ২০ দল। এদিকে ফের জোরদার আন্দোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয় আগেভাগেই। নির্বাচনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খানের টেলিফোন আলাপ ফাঁস হওয়ার বিষয়টিই এর বড় প্রমাণ। তাছাড়া টেলিফোনের কথোপকথনই বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা সোয়া বারোটার মধ্যেই নির্বাচন বয়কট করা হয় দলটির পক্ষ থেকে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সকালবেলা নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা তিন সিটি মিলে ৮ লাখ ৮০ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিএনপি এত ভোট কোথা থেকে পেল? অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধের নামে সারাদেশে দেড় শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার পর তাদের পক্ষে ভোটের রায় মিলবে না। এ চিন্তা থেকেই আগেভাগে বয়কট করে থাকতে পারে। বাস্তবতা হলো, মাঠ ছেড়ে দেয়ার পরও প্রায় নয় লাখ ভোটার তাদের মেয়র প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। এত লক্ষ ভোটার থাকা সত্ত্বেও বিএনপির নির্বাচন বয়কট করার কি কারণ থাকতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের দিন বিএনপির কোন নেতা বা কর্মী মাঠে ছিল না। ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থীদের কিছু কর্মী মাঠে কাজ করলেও মেয়র প্রার্থীর কর্মী খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকেই তারা মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এটা করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের কথাই বলা হয়েছে। সর্বোপরি বেশিরভাগ ভোটারের বিএনপির প্রতি অনাস্থা তো ছিলই; যার প্রকাশ বোঝা যেত শতভাগ ভোট কাস্ট হলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগেভাগে বিএনপির সমর্থকরা ভোট দেয়ায় এত ভোট পাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ তোলা হলেও তাদের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সন্তোষজনক ভোট পেয়েছেন। ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পান। বিপরীতে বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট। ঢাকা দক্ষিণে সাঈদ খোকন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়েছেন। মির্জা আব্বাস পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট। আর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরউদ্দীন পেয়েছেন চার লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে ৯৩ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৭টিতে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সাতটিতে জয় পেয়েছে বিএনপি। বাকিগুলোয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলররা পাস করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১৯ সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ৫টি বিএনপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছে। বাকি সবকটিতেই আওয়ামী লীগের নারী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও পাঁচটিতে বিএনপি সমর্থিত ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিজয়কে গণতন্ত্রের বিজয় ও গণমানুষের বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার রাতে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটির নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক এবং সাঈদ খোকন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ বিজয় জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী এবং নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে গণমানুষের বিজয়। এটা হচ্ছে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে জন রায়। কিছু কিছু কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। সিটি নির্বাচনে বিএনপির কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, যদি নির্বাচনে কারচুপি হতো, তবে কীভাবে তারা এত ভোট পেলো। বিএনপির সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর অব. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান সিটি নির্বাচনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, এবারের সিটি নির্বাচনে আমরা রাজনীতিবিদরা হেরেছি। আমরা একজন হেরেছি সঠিকভাবে একটি নির্বাচন করাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে এবং আরেকজন হেরেছি নির্বাচনের মাঠে চরম বৈরী ও প্রতিকূল অবস্থা শক্তভাবে মোকাবেলা করার ব্যর্থতা দেখিয়ে। আমরা দুই পক্ষই এক বিশাল সুযোগ পেয়েছিলাম আমাদের দেশপ্রেম, সততা, নির্লোভ রাজনীতি করার চেতনা ও সবার উপরে জনগণের সামনে উৎকর্ষমানের নেতৃত্ব করার যোগ্যতা প্রমাণ করার মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলাম না। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা মনে করেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারেই বিএনপি সিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠ থেকে পালিয়েছে। ভোটের পরিস্থিতির কারণে নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের কারণেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দলের এক সভায় বলা হয়, নির্বাচন বর্জনের ষড়যন্ত্র করে বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত দলটির নেতাদের টেলিফোন কথোপকথনেই স্পষ্ট। নির্বাচন বর্জন খেলার মধ্য দিয়ে তারা দেশে আরেকটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছে। তবে তাদের এই ষড়যন্ত্র আবারও ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নির্বাচন বর্জন করেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যত ভোট পেয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচন বর্জন করে খালেদা জিয়া আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। কারণ বারোটা পর্যন্ত বিএনপি যতসংখ্যক ভোট পেয়েছে, পুরোপুরি নির্বাচন করলে না-জানি আমাদের কি অবস্থা হতো? বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির উদ্দেশে নাসিম বলেন, নির্বাচনের মাঠে গেছেন তাহলে আবার মাঠ থেকে পালিয়ে গেছেন কেন? তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়া বিএনপির স্বভাব। তারা আন্দোলনেও ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ। নির্বাচনের দিন পাহারায় থাকবে, ভোটে কারচুপি হলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে নির্বাচনের আগে এমাজউদ্দিনের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ভোটের দিন তাদের বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সহস্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে। সহস্র নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ লিখিত বক্তব্যে বলেন, উপমহাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচলিত অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের নির্বাচন ছিল অনেক বেশি উৎসবমুখর। ভোটের দিন সকাল আটটা থেকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এতে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ভোটার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি- কতিপয় প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলরের সমর্থকরা কোন কোন কেন্দ্রে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী কোন মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ ধরনের কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক হাজার ৯৮২টি কেন্দ্রের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০টি কেন্দ্রে এ ধরনের অনভিপ্রেত অনিয়মের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। গোলাম কুদ্দুস বলেন, নির্বাচনের দিন বিএনপি নেতারা যখন অনুভব করলেন- সাধারণ ভোটার ও দলীয়কর্মীদের অনেকেই দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং তাদের প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভবনা নেই, তখনই তারা নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিএনপির এ ঘোষণা অনাকাক্সিক্ষত ও পূর্বপরিকল্পিত বলেও তিনি মনে করেন। ফিরে দেখা সিটি নির্বাচন ॥ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিলেন- ঢাকায় প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়। তবে তখন বিএনপিপন্থী নামে পরিচিত মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এই ভোটারদের হার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ওই নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে অধিকার জানায়, তাদের পর্যবেক্ষক বাড্ডা প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাত্র ৭ ভোটারকে ভোট দিতে দেখেন। ওই স্কুলের অপর কেন্দ্রে সোয়া তিনটা পর্যন্ত মাত্র ৫৪টি ভোট পড়েছে। তখনকার নির্বাচন কমিশনার যে কেন্দ্রে ভোট দেন, ওই কেন্দ্র ছিল একেবারে ভোটার শূন্য। একইদিন খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহীতে বাম দলীয় জোট ১১ দল অংশ নেয়। তাদের সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। অধিকার তাদের রিপোর্টে জানায়, বাদশা নির্বাচনের দিন ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোটের কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন এবং সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে। নগরীর নওদাপাড়া কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিল, ঢাকায় ৩৪ দশমিক ৩৭ ভাগ, ৬৪ দশমিক ৪০ ভাগ খুলনায় এবং ৭১ দশমিক ৪১ ভাগ রাজশাহীতে ভোট পড়েছে। রিপোর্টে অধিকার আরও জানায়, ঢাকায় ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনা ঘটে। ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অপরাধে ঢাকায় ৫২, রাজশাহীতে ১৭ এবং খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয় ১৯ জনকে। এরা সবাই বিএনপির কর্মী। ওই নির্বাচনে রাজশাহী বাদে ঢাকা ও খুলনায় বিএনপি প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। তবে রাজশাহীতে ১১ দলের প্রার্থী বাদশা ছিলেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তার সমর্থকদের ব্যাপকভাবে নাজেহাল করা হয়। বাদশা এই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন এবং নির্বাচনের পরদিন রাজশাহীতে হরতাল আহ্বান করেন। ঢাকায় সাদেক হোসেন খোকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। শুধু ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন কিছুটা আলোচনায় ছিলেন মাত্র। তাকে ও তার সমর্থকদের নানাভাবে নাজেহাল করেন বিএনপির সমর্থকরা। ওই নির্বাচনে তিনি ৯৪ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন। ওই সময় প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নেয়া কৃষক মোহাম্মদ সাদেক বাঘ প্রতীক নিয়ে ভোট পান ১১ হাজার ১১৯। পক্ষান্তরে বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা পান ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৪ ভোট।
×