ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহান মে দিবস

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ মে ২০১৫

মহান মে দিবস

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান দিন আজ পহেলা মে, মহান মে দিবস। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতির দিন। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রেরণাকারী এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক সমাজের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিবস। বহুমাত্রিক আয়োজনে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমসময় নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করছিল, তখন তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল হে মার্কেট। তাতে শ্রমিকদের থেমে যায়নি আন্দোলন। বরং তা আরও শক্তিশালী হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আটঘণ্টা শ্রম সময়ের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই থেকে আজও সারাদুনিয়ার শ্রমিক সমাজ দিনটিকে পরম শ্রদ্ধাভরে পালন করে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে মে দিবস উদ্যাপন করা হয়। দিনটি সরকারী ছুটির দিন। আশিটিরও বেশি দেশে এদিন রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে। গত বিশ শতকে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব এবং দেশে দেশে সাম্যবাদের অনুরাগী রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলোই মে দিবস পালনে উদ্যোগী ছিল। কিন্তু বিশ শতকের শেষদিক হতে দিবসটি সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাও শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সবসময় সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার প্রদানের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ। শুধু কলকারখানায় শ্রমিক নয়, কায়িক শ্রমের সঙ্গে যুক্ত সবার কাছেই এখন মে দিবস অনুপ্রেরণার, জাগরণের দিন। কৃষি খাতের শ্রমিকদের কাছেও মে দিবসের মর্মবাণী পৌঁছে গেছে। একালে অর্থনীতির সব খাতেই কায়িক শ্রমে সংশ্লিষ্টরা কাজের সময় নির্দিষ্ট করতে পেরেছে। উন্নত দেশগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে শ্রমজীবী জনগণের জীবনমান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রত্যাশা দিন দিন জোরালো হচ্ছে। জীবনমান ও কাজের পরিবেশ উন্নত করার জন্য শ্রমিকদের চাওয়ার সঙ্গে মালিকদের চাওয়ারও সম্মিলন ঘটা প্রয়োজন। শ্রমিক বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। সব যুগে, সব সমাজে এটি ছিল কিন্তু শ্রমিক শ্রেণী শুধু উৎপাদন ব্যবস্থারই অংশ নয়। দেশের নাগরিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম কারিগর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের এখনও নানামুখী বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে এবং বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রম বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষায় এখনও অনেক কিছু করার রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমশক্তি দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়। তাদের মধ্যে সরকারী পর্যায়ে লাখ তিনেক এবং বেসরকারী পর্যায়ে পাঁচ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। দেশের শিল্পকারখানাগুলোর সর্বত্র এখনও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি অথচ অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য অপরিহার্য সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার। দেশের শ্রমবাজারে এখনও রয়েছে নানা ধরনের বৈষম্য। মজুরি, নিরাপত্তা কিংবা অন্য সুযোগ-সুবিধা এখনও অপ্রতুল। শ্রমিক ছাঁটাই, বকেয়া পরিশোধহীন কারখানা বন্ধ, শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা অনেক কমে এসেছে এদেশে। শ্রমিক-মালিকবান্ধব পরিবেশও ক্রমশ বিস্তার হচ্ছে। মহান মে দিবসে প্রত্যাশা- বাংলাদেশেও সর্বত্র শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক, শ্রমিক-মালিকবান্ধব পরিবেশে উৎপাদন বাড়ুক। গতিশীল হোক অর্থনীতি।
×